পঞ্চায়েতে টিকিট পাইয়ে দেবার নাম করে তোলা চাওয়ার অভিযোগ। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই বিভিন্ন ধরনের আর্থিক লেনদেন-এর অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। যদিও এখনও নির্বাচনের দিনক্ষণ প্রকাশ করতে বাধা দিয়েছে বিজেপি। তাই তেমন জোরালো না হলেও অভিযোগ আসতে আরম্ভ করে দিয়েছে। অভিযোগ আসছে যে দলীয় টিকিটের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। মুর্শিদাবাদে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত ভোটে ‘টিকিট বিক্রি’র এমন অভিযোগ তুললেন তৃণমূলেরই এক নেতা। মঙ্গলবার দলের সাংগঠনিক সভায় এই অভিযোগ করেন বড়ঞা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মাহে আলম।
তাঁর নিশানায় বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা, স্থানীয় ব্লক সভাপতি রবিন ঘোষ-সহ জেলার কয়েক জন শীর্ষ নেতা। যদিও মাহে আলমের এই অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। এ নিয়ে তাঁরা বিশেষ ‘চিন্তিত নন’ বলেও দাবি করেছেন। অন্য দিকে জেলা বিজেপি নেতৃত্বের কটাক্ষ, তৃণমূল নেতারা টাকার স্বাদ পেয়ে গিয়েছেন। তাই তা ছাড়তে চাইছেন না। বড়ঞার ডাকবাংলো এলাকায় মঙ্গলবার একটি সাংগঠনিক সভায় ভাষণ দেন মাহে। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘এলাকায় ইতিমধ্যে ওঁদের এজেন্টরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দেখবেন, সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর সেই গদ্দার, যিনি দলকে মিসগাইড করে এখানে সব সময় ভুল বার্তা দিচ্ছেন, তিনি এজেন্টদের দিয়ে বলাচ্ছেন, ২ লক্ষ টাকা জমা করো।
সামনের পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী করা হবে। বড়ঞা ব্লকে দলটাকে পুরো ব্যবসায় পরিণত করেপরে আনন্দবাজার অনলাইনকে মাহে জানান, তাঁর অভিযোগের তির বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের দিকে। তাঁর বিরুদ্ধেই টাকা তোলার অভিযোগ করেছেন তিনি। মাহে বলেন, ‘‘কয়েকটা গ্রামে নিজেদের লোক খাড়া করে দিয়েছে জীবনকৃষ্ণ সাহা। কয়েক জনকে ফোনও করে বলছেন, ২ লক্ষ করে টাকা জমা দাও। তোমাকে ক্যান্ডিডেট করে দেব।’’মাহে যদিও দাবি করেন, কোনও ব্যক্তির প্রতি তাঁর ক্ষোভ নেই। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যে ব্লক সভাপতি ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি করেছিলেন, যিনি এখন দলকে ভুলপথে পরিচালিত করেন, মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আমাদের ক্ষোভ তো থাকবেই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক রকম বার্তা দিচ্ছেন, আর মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করছেন এখানকার কিছু লোক। আমরা চাই যোগ্য ব্যক্তিকে ব্লকের দায়িত্বে বসানো হোক। তাঁর নেতৃত্বে মাথা নিচু করে আমরা দল করব।’’ স্বাভাবিক ভাবেই দলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে মাহের এ হেন মন্তব্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তবে তাঁর মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ।
আরও পড়ুন – মহাসমারোহে শুরু হল অষ্টম বর্ষ পানিহাটি উৎসব ও বইমেলা
তিনি বলেন, ‘‘কে কী বলছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করার কোনও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না।’’ ব্লক সভাপতি রবিনও একই সুরে বলেন, ‘‘কে কী বলছেন, তা নিয়ে আমরা খুব একটা চিন্তিত নই। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে প্রস্তুতিতে ব্যস্ত রয়েছি।’’দলীয় বিধায়ক এবং ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতার অভিযোগ নিয়ে শাসকদলকে বিঁধেছেন মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ।
তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতগুলি দখল করে যে মোটা টাকার স্বাদ তৃণমূল নেতারা পেয়েছেন, তা আর কোনও নেতাই ছাড়তে চাইছেন না।’’ গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সাংসদ আবু তাহের খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় স্তরে কিছু সমস্যা হলে জেলা নেতৃত্ব নিশ্চয়ই গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।’’