বন্দে ভারত নিয়ে কড়া সুর মেয়র গৌতম দেবের। বন্দে ভারতের যাত্রা শুরুর দিনই সমালোচনার মুখে রেলের ভূমিকা। বন্দে ভারত নতুন কিছু নয়, শতাব্দীর সমান্তরাল পরিসেবা মাত্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেল মন্ত্রী থাকাকালীন উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের মাঝে চালু করেছিলেন গুচ্ছের ট্রেন পরিষেবা। শহরে রেলের ফাঁকা মাঠে ওয়ার্ড উৎসব করতে বাধা মেয়রকে, মাঠে কয়েক ঘন্টার ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য প্রায় চার লক্ষ টাকা দাবি রেল মন্ত্রকের।
ধিক্কার জানিয়ে সরব হলেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। শুক্রবার শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ড সভার অন্দরেও চর্চিত বন্দে ভারত। বন্দে ভারত নিয়ে পরীক্ষা মূলক যাত্রার দিন থেকেই প্রচারে নেমেছে বিজেপি কর্মীরা। ছবি ভিডিও -র পাশাপাশি ট্রেন ঘিরে হুল্লোড় চলছে। এর মাঝেই শহরের ডিসেম্বরের কনকনে শীতে শিলিগুড়ি রেলের ভূমিকা নিয়ে পুরনিগমের বোর্ড বৈঠকের সভাকক্ষ রীতিমতো সরগরম হয়ে উঠলো।
শুক্রবার রাজনৈতিক অভিসন্ধিতেই শিলিগুড়ি পুরনিগমের মাসিক বোর্ড সভা কক্ষে বিজেপি কাউন্সিলর বন্দে ভারতের প্রসঙ্গ তুলে বৈঠকে প্রচারমুখী রাজনীতিতে নামেন। এদিন বৈঠকের মাঝে বিজেপি চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিবেক সিংহ বলেন আধুনিক ও দ্রুত গতি সম্পন্ন বন্দে ভারত ট্রেনটি যাত্রার শুভ সূচনা হচ্ছে আজ। এই শুভ ক্ষণে সকলকে মিলিত ভাবে করতালি দিয়ে স্বাগত জানানোর আবেদন জানান বোর্ড সভা কক্ষে তিনি। এর পাল্টা জবাবে মেয়র গৌতম দেবের বন্দে ভারত ট্রেন ঘিরে সাফ মন্তব্য পেশ করেন- বন্দে ভারত ট্রেনটি চালু হয়েছে। তার সময়সূচি আমরা দেখেছি।
মেয়র বলেন মনে করিয়ে দেই ২০১২ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সদ্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন সে সময় গোসাইপুরে একটি জনসভা থেকে তিনি রেল মন্ত্রীকে আবেদন জানান- এনজিপি ও কলকাতার মধ্যে একটি দ্রুতগামী ট্রেন চালুর করা হোক। তিনি চেয়েছিলেন যাতে মানুষ সকালবেলা ট্রেনে চেপে সন্ধ্যেবেলা ফিরতে পারে। মেয়র বলেন- মুখ্যমন্ত্রী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সময়তে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের মাঝে চালু করেছিলেন গুচ্ছের ট্রেন পরিষেবা। দার্জিলিং মেল শতাব্দি পদাতিকের মত একাধিক ট্রেন পরিষেবা তিনি চালু করেছিলেন।
মেয়রের ষ্পষ্ট মন্তব্য ট্রেনের চেহারায় একটু বদল আনা হয়েছে, কিন্তু শতাব্দীর সঙ্গে সময় ও গতিতে কোন পার্থক্য নেই। শতাব্দি এনজেপি থেকে সকাল সাড়ে পাঁচটায় এনজিপি থেকে রওনা দেয় এবং সাড়ে দশটায় ফিরে আসে।মালদা সহ দু তিনটে স্টপেজ রয়েছে। এখন একটি স্টপেজ বাড়ানো হয়েছে। তিনি সাফ বলেন শতাব্দীর সঙ্গে বন্দে ভারতের কোনো পার্থক্য নেই। দুটোই একইরকম। শতাব্দী এনজেপি থেকে ভোর ৫.৩০টায় ছাড়ে আর বন্দে ভারত হাওড়া থেকে ভোরে ওই একই সময়তে ছাড়া হবে।
গতিপথটা খানিক বদল করা হয়েছে। আর ট্রেনের চেহারা একটু পাল্টে দেওয়া হয়েছে। মেয়েরের সংযোজন স্বল্পকালীন সময়তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস রেল দপ্তরে ছিল সে সময়কালে শতাব্দী এক্সপ্রেস, পদাতিক, কাঞ্চনকন্যা, নর্থ বেঙ্গল এক্সপ্রেস উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের মধ্যে এই ট্রেন পরিষেবা গুলি চালু হয়। পাশাপাশি চেন্নাই গামী নিউ জলপাইগুড়ি থেকে একটি ট্রেন পরিষেবা চালু করা হয়। তিনি রেলের ভূমিকায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন নীতিশ কুমারের হাতে রেলমন্ত্রক থাকার সময়তে কাঞ্চনকন্যাকে এখান থেকে আলিপুর সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, পদাতিককে এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হলো। জরুরী কোঠাও তুলে নেওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় দার্জিলিং মেল নামের সঙ্গে দার্জিলিং জেলার ঐতিহ্য জুড়ে থাকলেও ট্রেনটিকে এখান থেকে হলদিবাড়ি স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হলো।অর্থাৎ ধীরে ধীরে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের গড়িমা, গুরুত্ব নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের গেটওয়ে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। গৌহাটি আসামের রাজধানী হলেও নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের গুরুত্ব সর্বাধিক। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে আমাদের রাজ্যের প্রত্যন্ত জেলা কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার নতুন সেভাবে একটি ট্রেনও পায়নি।
এইভাবে একটা ট্রেনকে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানানোর মতো কিছু হয়নি। বন্দে ভারতকে কৃতিত্ব দিতে নারাজ মেয়র। একাধিক ট্রেন মুখ্যমন্ত্রীর রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সময়কালে চালু করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের জন্য সর্বাধিক সংখ্যক ট্রেন পরিষেবা চালু হয়েছে এদিন তথ্য তুলে ধরে জানান। অন্যদিকে শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৩৩নাম্বার ওয়ার্ডে রেলের ফাঁকা স্টেডিয়াম মাঠে ওয়ার্ড উৎসবের ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় কয়েক ঘন্টার জন্য মেয়রের কাছে প্রায় চার লক্ষ টাকা ভাড়া দাবি করা হয়েছে রেলের তরফে। রেলের ওই মাঠ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ৮ই জানুয়ারি ওয়ার্ডের কচিকাচাদের নিয়ে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য রেলের ডিআরএমকে আগাম আবেদন জানান মেয়র। অথচ চূড়ান্ত অমানবিকতার নির্দশনের নজির স্থাপন করে রেল।
আরও পড়ুন – বন্দে ভারত এক্সপ্রেস মালদহে ঢুকতেই পুষ্প বৃষ্টি শুরু
শেষ মুহূর্তে বদল করা হয়েছে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার স্থান। মেয়র এদিন বৈঠকে বিষয়টি জানাতেই সমবেত ভাবে সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ তৃনমূল কাউন্সিলরেরা টেবিল চাপড়ে ধিক্কার জানায়। মেয়র বলেন প্রতিটি কাউন্সিলরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ড উৎসব হচ্ছে। আমার নির্বাচিত ক্ষেত্র ৩৩নাম্বার ওয়ার্ডে গোটা ওয়ার্ড উৎসব বাবদ ২লক্ষ ২৭হাজার টাকার মতো বাজেট স্থির হয়েছে। তার মাঝে একদিনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য প্রায় চার লক্ষ টাকা ভাড়া ও সিকিউরিটি বাবদ দাবি করছে রেল। আমি রেলমন্ত্রক ও রেলের এই ভুমিকাকে ধিক্কার জানাই। সুর মেয়র