যাত্রী সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে এবারে বন্দে ভারতে নিরাপত্তা দেবে রাজ্য পুলিশ। রেলের তরফে তদন্তভার দেওয়া হলো জিআরপিকে। নিউজলপাইগুড়ি থেকে হাওড়া গামী সেমি হাই স্পিড বন্দে ভারত ট্রেনেটিতে এবার থেকে নিরাপত্তার দায়িত্বে রেল পুলিশের পাশাপাশি থাকছে রাজ্য পুলিশের জিআরপি-র এক আধিকারিক ও দুজন আর্ম পুলিশ।
যাত্রা শুরুর পর থেকেই ক্রমাগত চর্চায় শিরোনামে উঠে এসেছে হাওড়া-নিউজলপাইগুড়ির মধ্যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। সেমি হাইস্পিড এই ট্রেন ঘিরে যাত্রী ও পর্যটকদের মধ্যে রয়েছে তুমুল উন্মাদনা। ইতিপূর্বেই যাত্রীদের খাবারের মান নিয়ে গুচ্ছের অভিযোগ উঠেছে।
তবে পরপর দুদিন ট্রেনের ওপর দুষ্কৃতী হামালার ঘটনা সেমি হাইস্পিড বন্দে ভারতের যাত্রী নিরাপত্তাকে বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়। গত সোমবার মালদার কুমারগঞ্জ এলাকায় শীতের সন্ধ্যা কুয়াশার আড়াল থেকে পাথর ছোড়া হয় ট্রেনটিকে লক্ষ করে। ট্রেনের সি ১৩ কামরা অটোমেটিক দরজার কাঁচের একাংশে চিড় ধরে। ঘটনার পরই উত্তরপূর্ব রেলের তরফে অভিযোগ দায়ের করে তদন্তের নামার কথা জানানো হয়। সে রাত কাটতেই ফের মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে একই ভাবে দুষ্কৃতি হামলার মুখে পড়ে হাওড়া থেকে নিউজলপাইগুড়ি মুখী বন্দে ভারত এক্সপ্রেস।
জিআরপির তরফে জানানো হয় এদিন দুপুর নিউজলপাইগুড়ি স্টেশনে ঢোকার মুখে সি৩ ও সি ৬ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কোচের কাচের অংশ পাথরের ঢিলে অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মূলত মঙ্গলবার ভোরে বন্দে ভারত ট্রেনটি এনজেপি স্টেশনে পৌঁছলে ট্রেনের জেই মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের যাত্রীরা নির্দেশে যাত্রীরা নেমে যেতেই রুটিন পর্যবেক্ষনে পৌছায় টেকনিক্যাল টিম। আর এরপরই টেকনিক্যাল টিম আরপিএফদের নজরে আসে ট্রেনটির আরও দুটি জায়গায় নতুন করে পাথর ছোড়ার চিহ্ন রয়েছে।কোচ সি ৩ ও সি ৬ এ আংশিক কাঁচ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ট্রেনটি। আংশিক কাচে মোড়া শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেনের কোচে দুই স্থানের কাঁচ চৌচিড় হয়ে গিয়েছে।
রেল পুলিশ তরফে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলা না হলেও পরবর্তীতে মালদা স্টেশনে ট্রেনটির আরও দুটি স্থানে কাঁচ ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। এরপরই উত্তরপূর্ব রেলের তরফে রাতেই অভিযোগ দায়ের করা হয়। রেলপুলিশের কাঁধে তদন্ত ও ট্রেনটির নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে থাকলেও পরপর দুই দফায় পাথর ছোড়ার ঘটনার পুনুরাবৃত্তির পর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে রেলের উপর মহল। এরপরই বুধবার রেল পুলিশের হাত থেকে সেমি হাইস্পিড ট্রেনটির নিরাপত্তা দায়িত্ব যায় রাজ্য পুলিশের ওপর।
বন্দে ভারতের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েই জিআরপির তরফে ট্রেনটিকে ঘিরে সুরক্ষা বলয়ের নকশা প্রস্তুত করা হয়েছে। এদিন উত্তরবঙ্গের এসআরপি এস.সেলভা.মুরাগান জানান রেল পুলিশের সঙ্গে এখন থেকে বন্দেভারত ট্রেনটিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে জিআরপিএফের আধিকারিক এবং অস্ত্র ধারী পুলিশ। যাত্রী সুরক্ষা বিষয়টিকে মাথায় রেখে নিউজলপাইগুড়ি থেকে হাওড়া পর্যন্ত বন্দে ভারত ট্রেনে থাকবে রেল পুলিশের সঙ্গে জিআরপিএফ। ট্রেনের ভেতরে রেল পুলিশের সঙ্গে জিরাপিএফের তরফে একজন পুলিশ আধিকারিক ও দুজন অস্ত্রধারী আর্ম পুলিশ থাকবে।
জিআরপি এসআরপি সাফ জানান রেল পুলিশ অপেক্ষা জিআরপির কাছে তদন্ত ও নিরাপত্তা উভয় ক্ষেত্রেই প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো অনেক বেশি রয়েছে।এছাড়া নিরাপত্তা বাড়াতে জিআরপি তরফে হাওড়া ও নিউজলপাইগুড়ি পর্যন্ত বন্দে ভারতের রুট ধরে স্টেশন গুলিকে নিয়ে জরুরি হোয়াটস এপ গ্রূপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই হোয়াটস এপ গ্রূপে জিআরপিএফ ও আরপিএফের প্রতিটি স্টেশনের আইসি ও ওসিরা থাকবেন। স্টেশন মাস্টার, ডিভিশনের ঊর্ধ্বতন অধিকারিকেরা থাকবেন। প্রতিটি স্টেশনে বন্দে ভারত ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তৎক্ষণাৎ তার রিপোর্ট দিতে হবে।
সেক্ষেত্রে প্রতিটি স্টেশনের পুরো ট্রেনটির নিখুঁত ভিডিও করে পাঠাতে হবে জরুরী হোয়াটস এপ গ্রূপে। প্রতি স্টেশনে সেমি হাইস্পিড ট্রেনের স্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তার বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করতে হবে। কোনোরকম সন্দেহজনক কিছু নজরে এলেই তা দ্রুত জানাতে হবে। অন্যদিকে এদিন এসআরপি জানান ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার ও মালদা ডিএসপির সঙ্গে কথা হয়েছে। পরপর দুই দফায় দুষ্কৃতী হামলার ঘটনা নিয়ে তার মন্তব্য টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস, ফোর্স থেকে সিডিআর অ্যানালাইসিস অনেক বেশী আছে।
রেল পুলিশ বেশি কিছু করতে পারবে না। তারা মামলা করেছে।মামলা জিআরপিকে হস্তান্তর করলে আমরা আরও ভালো ভাবে তদন্ত করতে পারবো।সন্দেহজনক ও স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ধরনের ঘটনার মূল অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে পারবো। এদিকে উত্তরপূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে জানান আগে ট্রেনটিতে আরপিএফ ছিল ঘটনার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটোসাঁটো করে আরপিএফের সঙ্গে জিরাপিকেও ট্রেন ও যাত্রী নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জিআরপি অফিসার ও দুজন পুলিশ কর্মী থাকবেন বন্দে ভারতের ভেতরে।
আরও পড়ুন – তথ্য চিত্রের মাধ্যমে ভারতের মুক্তি সংগ্রাম ও বাংলার ভূমিকার প্রদর্শনী
রেল পুলিশের সঙ্গে জিআরপি এখন থেকে যৌথ ভাবে নিরাপত্তা ও তদন্ত উভয় বিষয়ই দেখবে। তিনি বলেন জিআরপির প্রযুক্তি, পরিকাঠামো থাকলেও স্টেশনের আভ্যন্তরীণ এলাকায় এক্তিয়ারগতভাবে রেলের কিছু নিয়মকানুন লাগু রয়েছে। অন্যদিকে নিউ জলাপাইগুড়ির দিকে পাথরের ঢিল ছোড়ার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে উষ্মা প্রকাশ করে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন পরপর ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে রেলের গভীর ভাবে তদন্ত করা উচিত। কখনও বলছে চটহাট,কখনও নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ঢোকার মুখে ঢিল ছোড়া হয়েছে। এসব ঠিক নয়।
ঠিক কোথায় ঢিল ছোড়া হয়েছে সেসব নিখুঁত তদন্ত করে বের করতে হবে।