তৈরী হতে চলেছে করোনেশন সেতুর বিকল্প সেতু। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ির কাছে একটি শহর সেবক। এই সেবকেই রয়েছে দার্জিলিং ও কালিম্পঙ জেলার সংযোগস্থল “করোনেশন ব্রিজ (Coronation Bridge)”। এটি রোডওয়ে ব্রিজ ও সেবক সেতু নামেও পরিচিত। সেতুটি ১৭ নং জাতীয় সড়কের (পুরানো – জাতীয় সড়ক ৩১) অংশ। এই সেতুটি সেবক রেলওয়ে সেতুর সমান্তরালে বিস্তৃত। ডুয়ার্সের সাথে শিলিগুড়ির যোগাযোগ যাতে আরও সহজ হয় মূলত সেই কারণেই ব্রিটিশ আমলে বানানো হয়েছিল এই করোনেশন ব্রিজ। তবে সেই সেতুর মেয়াদ প্রায় শেষের পথে। সেতুটির বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ফাটল দেখা গেছে। শিলাবৃষ্টি, ধ্বস ইত্যাদির কারণে কয়েকটি জায়গা বিশেষ করে পিলার মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদি কোনভাবে এই সেতু আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে শিলিগুড়ির সাথে ডুয়ার্সের যোগাযোগ এমনকি ভুটানের যোগাযোগও সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে।
সরকারের তরফ থেকে ইতিমধ্যেই করোনেশন সেতুর ওপর দিয়ে ১০ টনের বেশি ওজনের গাড়ি যাওয়া-আসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এখন প্রশ্ন হল ডুয়ার্স ও শিলিগুড়ির মূল সংযোগস্থল যে সেতু, তার ওপর দিয়ে ১০ টনের বেশি ওজনের গাড়ি যাতায়াত না করতে পারলে সেনা বাহিনীর গাড়ি কিভাবে যাতায়াত করবে? এটা ঠিক যে বর্তমানে মালবাজারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত হয়েছে, কিন্তু অনেক সময় বিভিন্ন জটিল রোগীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। করোনেশন সেতু ও তার সংযোগকারী রাস্তার বেহাল অবস্থার ফলে প্রতিদিনই কার্যত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হচ্ছে। বর্ষাকালে সমস্যা আরোই বেড়ে যায়। অতিবৃষ্টির ফলে ধ্বস হলেই দীর্ঘ যানজটের সম্মুখীন হতে হয় জনসাধারণের। একেবারে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ডুয়ার্সের মানুষের যাতায়াত।
তবে এবার এই সমস্যার সমাধান শীঘ্রই হতে চলেছে। সেবকে তিস্তার উপরে তৈরি হতে চলেছে পুরনো করোনেশন সেতুর আর একটি বিকল্প সেতু। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে সেবকে বিকল্প সেতু তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হলেও সেই বিকল্প সেতুর রিপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়াতেই কেটে গেল গোটা তিন বছর। এর মাঝেই গুজরাতের মোরবি সেতুতে ঘটে গেল মারাত্মক দুর্ঘটনা। সেই দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকাবাসীদের একাংশ প্রশ্ন করেছেন, পুরনো সেবক সেতুর উপর দিয়ে আর কত দিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করব আমরা? সেবক বাজার থেকে এলেনবাড়ি পর্যন্ত তিস্তার উপরে দ্বিতীয় বিকল্প সেতুর জন্য জায়গা চিহ্নিত করতে ও জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শেষ করতেই প্রায় এক বছরের বেশি সময় চলে গেছে। সেবকে সেতু আন্দোলনের নেতাদের দাবি, এত ধীর স্থির প্রক্রিয়ার কারণে সেবক সেতুর ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
তবে উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকার সেবকে করোনেশন সেতুর বিকল্প সেতুর নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার পর থেকেই তার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার সেতুর ‘ডিপিআর’ তৈরি এবং নজরদারি সংস্থা হিসেবে প্রকল্প দেখাশোনা করার জন্য ২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। করোনেশন সেতু এবং NH-10 বাইপাস সিকিম থেকে বিকল্প হাইওয়ে NH-717A এর নির্মানের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।
বিকল্প সেতু নির্মাণ নিয়ে মাটিগাড়া-নক্সালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মন বলেছেন, “উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের যথেষ্ট নজরদারি রয়েছে। বিভিন্ন নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে চলছে। প্রায় এক হাজার কোটি টাকারও বেশি টাকা আমাদের উত্তরবঙ্গের বাগডোগরা বিমানবন্দরের আধুনিকিকরণের জন্য এবং এনজিপি স্টেশনের কাজের জন্য প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা এছাড়াও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কাজের জন্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বালাসন ব্রিজ থেকে শুরু করে এশিয়ান হাইওয়ে 2 এবং বর্তমানে করোনেশন ব্রিজের বিকল্প সেতু তৈরী সমস্ত কিছুর কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। আগামী ১৭ই জানুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক পরিবহন মন্ত্রী মাননীয় নীতিন গড়করি শিলিগুড়ির বালাসন ব্রিজ থেকে সালুগাড়ার সেনাছাওনি পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রাস্তা তৈরীর শিলান্যাস করতে আসবেন”।
এই করোনেশন সেতুর বিকল্প সেতু নির্মাণের কাজে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেব। তিনি বলেন,”করোনেশন সেতু আমাদের ঐতিহ্য এবং তার বিকল্প সেতু নির্মাণ সত্যিই এক ভালো উদ্যোগ”। এর পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “বিকল্প সেতুটি সত্যিই খুব জরুরি। ব্রিটিশ আমলে তৈরী এই করোনেশন ব্রিজটিতে কোনো পিলার নেই একটা আর্চের উপর ব্রিজটি আছে। আগেকার তুলনায় এখন যানবাহনের সংখ্যা বহুগুন বেড়েছে এবং ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে অনেকসময় গাজোলডোবা হয়ে ঘুরে যেতে হয়। এই ব্রিজটির বিকল্প তৈরীতে কেন্দ্রীয় সরকারকে বাহবা দেওয়ার মতো কিছু নেই, এই বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বহুবার কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন”।
আরও পড়ুন – পৌরসভার উদ্যোগে স্বামী বিবেকানন্দের পূর্ণাঙ্গ মূর্তি স্থাপন
সকলের দাবিকে সমর্থন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী করোনেশনের বিকল্প সেতুর অনুমোদন দেন এবং তারপর থেকেই কাজ চলছে জোরকদমে। তবে বিকল্প সেতুটি তৈরি হতে কতদিন সময় লাগবে, সকল প্রকার সমস্যার সমাধানই বা কবে হবে আর কবেই বা বিকল্প নতুন সেতুতে যাতায়াত শুরু হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।।