আসামকে কেন্দ্র করে মায়ানমার থেকে অবাধে সোনা, মাদক পাচারের রুট ধরেই এবারে রমরমা রুপোলি ফসল ইলিশ পাচারের চক্র। আসামকে কেন্দ্র করে মায়ানমার থেকে অবাধে সোনা, মাদক পাচারের রুট ধরেই এবারে রমরমা রুপোলি ফসল ইলিশ পাচারের চক্র। বেআইনিভাবে বার্মা-মায়ানমারের ইলিশ ঢুকে পড়ছে শিলিগুড়ি কলকাতা সহ দেশের বাজারে। ভারত মায়ানমার সীমান্ত আসাম হয়ে চোরাপথে মায়ানমারের ইলিশে ছেয়ে যাচ্ছে ভারতের বাজার। সম্পূর্ণভাবে রাজস্ব করকে ফাঁকি দিয়েই যাত্রী বাহি আসাম- শিলিগুড়ির বাসে করেই চলছে রুপোলী ফসল ইলিশের পাচারের এই কারবার। চোখ বন্ধ করে রয়েছে কাস্টম বিভাগ।
কিভাবে চলছে কাঁটাতারের এপার ওপারের মাঝে এই কারবার? আন্তঃ রাষ্ট্র মাছ সাপ্লায়ারদের একাংশের সূত্রে হদিশ মিলছে ইলিশ পাচারের রুটের। জানা যাচ্ছে ভারত মায়নমার সীমান্ত ইম্ফল হয়ে অনায়াসে কাঁটাতার গলিয়ে আসাম সীমানায় পৌঁছে যাচ্ছে মোড়কে মুড়ে ইলিশ ভর্তি থার্মকল বাক্স। সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর প্রহরার মাঝেই চলছে এই কারবার।শুধুমাত্র ইম্ফল সীমানা নয়, নাগাল্যান্ড, মনিপুর সীমান্তে হয়ে এদেশে ঢুকছে ইলিশ। যা পাইকারি বাজারে পৌঁছনোর আগেই মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে ডায়মন্ড হারবারের ইলিশের সঙ্গে।
ফলে ইলিশ প্রিয় বাঙালির কিছু বুঝে ওঠার আগেই যা পৌঁছে যাচ্ছে গৃহস্থ্যের রান্নাঘর থেকে হোটেল রেস্তোরাঁর রসুই খানায়। মূলত আসামের সীমানায় পৌঁছনোর পর এই বেআইনী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে গৌহাটি থেকে শিলিগুড়িগামী যাত্রীবাহি রাতের বাসে তা পৌঁছে যাচ্ছে শিলিগুড়ি আসাম বাসস্ট্যান্ডে। ভোর ৪.৩০-৫টা নাগাদ সে বাস পৌঁছনোর পর সারি সারি থার্মোকল বাক্সে থাকা ইলিশ উঠে যাচ্ছে শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারের মাছ সাম্পলায়ারদের কাছে।
সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত বাজার থেকে সে বেআইনী ইলিশ কার্টনে কার্টনে বিহার, কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রিত বাজারের ব্যাবসায়িদের একাংশ এই ইলিশের কালো চক্রের হালহকিকত ব্যক্ত করছেন। নিয়ন্ত্রিত বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন এই অসাধু কারবারের কারণে রাজস্ব কর ফাঁকি দিয়ে বেআইনি ভাবে পাচারের ইলিশ ঢুকে পড়ছে বাজারে। ফলে মার খাচ্ছে মোটা রাজস্ব কর দিয়ে বাজারজাত ইলিশ। মূলত শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারে সপ্তাহে ৫০০ কেজি থেকে ১টন ইলিশ ঢোকে।
এই সময়তে নতুন করে বাংলাদেশের ইলিশ আমদানি নেই। বাংলাদেশের ইলিশ যেটুকু রয়েছে তা সবটাই হিমঘরে যা প্রায় বেশ কয়েক মাস আগের। সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে ইলিশের চাহিদা বাড়ছে আর তাতেই মায়ানমারের বেআইনিভাবে নিত্যদিন ৩০থেকে ৩৫ কেজি ইলিশ ঢুকে পড়ছে শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারে। যা নিয়ে নিয়ন্ত্রিত বাজারে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়েছে। ব্যাবসায়িরা আবার জানাচ্ছেন বছরের এক আধটা মরশুমে বাংলাদেশের ইলিশ ঢুকে থাকে বাকি সময়টা ডায়মন্ড হারবারে ইলিশের ওপরই নির্ভর।
চাহিদার সঙ্গে টেক্কা দিতে মায়ানমারের ইলিশ অনেক ক্ষেত্রেই বাজারজাত করা হয় ঠিকই। কিন্তু তা সম্পূর্ণ বৈধ ভাবে। তবে এবারে একেবারে বেআইনিভাবে রাজস্ব করে ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথের ইলিশ ঢুকছে বাজারে। তারা জানান বার্মা মায়ানমারের ইলিশ তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই বড় হয়ে থাকে। একএকটির ওজন প্রায় ১ কেজি ৩০০ থেকে ৬০০-৭০০গ্রাম। সেখানে মূলত নিয়ন্ত্রিত বাজারে আসা ডায়মন্ড হারবারের ইলিশের ওজন এক কেজির আশপাশে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এক শ্রেণীর অসাধু কারবারীরা চোরাই পথে এ ধরনের কাজ করছে আর কাস্টম বিভাগ সমস্তটা জেনেও চোখ বন্ধ করে রয়েছে।
আরও পড়ুন – প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সদর দফতরেই বড়সড় কেলেঙ্কারি ফাঁস!
বিষয়ে শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারে সম্পাদক বাপি চৌধুরী বলেন আমার কাছেও খবর পৌঁছেছে বাজারে কিছু পরিমাণ বেআইনিভাবে বার্মার ইলিশ ঢুকে পড়ছে। তবে বাজারে ঢুকে পড়ার পর কোনটি বেআইনি এবং কোনটি সঠিক তা আমাদের একার পক্ষে চোখে বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং প্রশাসনকে সজাগ হতে হবে। কারণ এটা শুধু শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারের সমস্যা নয় নাগাল্যান্ড আসাম হয়ে এভাবে চোরাপথে গোটা দেশে সে চক্র বিস্তার করেছে। যদিও বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলেও জানান তিনি।