বাংলার আবাস যোজনার দরিদ্র উপভোক্তাদের কাটতে হবে নাম দিল্লির সে নির্দেশেই পর্যবেক্ষক দল জেলা সফরে। আবাস যোজনা নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত অংক কষা রয়েছে কেন্দ্রের। অথচ দিল্লির মোদি দরবারে বসে কষা অংকের বাইরে বাংলায় একটি পরিবারকেও দেওয়া হবে না আবাস যোজনায় ঘরের অর্থ। তাই উপভোক্তার সংখ্যা বাড়তেই কাটছাঁটের উদ্দেশ্যে ভাজপা সরকারের নির্দেশে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের নামে উত্তরপ্রদেশের এনজিওর দৌড় উত্তরের জেলায়। কেন্দ্রের প্ৰকল্প বাবদ অর্থ বরাদ্দ এর বালাই নেই। শুধুমাত্র রাজ্য বিজেপির মুখ রাখতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধির নামে কখনো এনজিও ও কখনো সরকারি সহায়তাকারী এজেন্সিকে পর্যবেক্ষনের নামে দরিদ্র উপভোক্তাদের হেনস্থা কেন্দ্রের।
দার্জিলিং জেলায় ৫৬০০ টার্গেট রয়েছে কেন্দ্রের। তবে কেন্দ্রের পুঙ্খানুপুঙ্খ নিয়ম মেনেই জেলায় ২২-২৩আর্থিক বর্ষে আবাস যোজনায় ঘর তৈরীর উপভোক্তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৭০০। তাই ধরি মাছ না ছুঁই পানি সে কৌশল আনছে কেন্দ্রের ভাজপা সরকার।আর তাতেই জেলা সফরে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের অছিলায় আবাদ রিসার্চ ফাউন্ডেশন এনজিওর সদস্যদের দৌড় করাচ্ছে কেন্দ্র।
রবিবার দার্জিলিং জেলা পঞ্চায়েত এলাকায় আবাস যোজনার কাজের পর্যবেক্ষণে এসে পৌছায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির দুই প্রতিনিধির দল। অবধ রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে উত্তরপ্রদেশের লখনৌয়ের একটি এনজিও বেশি এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে দার্জিলিং জেলায়। কোনো উচ্চ আধিকারিক নয় কেন্দ্রের গ্রাম ও পঞ্চায়েত পিএনআর দপ্তর থেকে এই যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশের এনজিও বেশি সরকারী সহায়তা কারী এজেন্সিকে নিযুক্ত করা হয়েছে
। তাদেরই দুজন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি এদিন দার্জিলিং জেলায় বিকেল নাগাদ ট্রেনে চেপে এসে পৌছায়। এরপরই শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে ৫.৪৫নাগাদ প্রবেশ করেন তারা। সেখানে দার্জিলিং জেলা শাসক এস পূণ্নম বল্লামের উপস্থিতিতে নয় ব্লকের বিডিওদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর নিজ নাম,পরিচয়, পদমর্যাদা জানাতে অস্বিকার করেন তারা। প্রায় দেড় ঘন্টা বৈঠক শেষে জেলা শাসক এস পূণ্নম বল্লাম জানান একটা বৈঠক হয়েছে।ওরা কিছু তথ্য চেয়েছিল দিয়েছি। পরবর্তিতে যা তথ্য চাইবে সেমত সহযোগিতা করা হবে। ওনারা কোথাও পরিদর্শনে যেতে চাইলে সে ক্ষেত্রেও পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে।
আরও পড়ুন – প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সদর দফতরেই বড়সড় কেলেঙ্কারি ফাঁস!
জানা যাচ্ছে আগামী রবিবার ও সোমবার দার্জিলিং জেলার সমতল শিলিগুড়ি মহকুমা এলাকায় চারটি ব্লক সহ কালিম্পং দার্জিলিং পাহাড়ে আবাস যোজনার উপভোক্তাদের বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনে যেতে পারেন এই পর্যবেক্ষক দল। তবে এদিন দার্জিলিং জেলায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের নামে এনজিও বেশি এজেন্সির পর্যবেক্ষক দলের পদার্পণের পরেই ফুঁসছে গ্রামীন এলাকাবাসীরা। গ্রামিন এলাকার বাসিন্দাদের মন্তব্য টাকা দেওয়ার বালাই নেই।শুধুমাত্র কেন্দ্রের সরকার দরিদ্র মানুষের আবাস প্লাস যোজনার ঘরে নির্মাণ কাজে বাধা সাধছে। এ সবের জেরে ঘর তৈরীর কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।
কেন্দ্র প্রকল্পের প্রাপ্য আর্থিক বরাদ্দ পিছিয়ে দিতেই এই ধরনের কৌশল অবলম্বন করছেন বলেই সরকারি দপ্তর সূত্রে কানাঘুষো উঠে আসছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের রিপোর্ট স্বচ্ছ ভাবেই সামনে উঠে এসেছে। জানা যাচ্ছে দার্জিলিং জেলায় ২০১৮-১৯ আর্থিক বর্ষে আবাস যোজনার তালিকা অনুযায়ী দার্জিলিং জেলার পঞ্চায়েত এলাকায় মোট উপভোক্তার সংখ্যা ছিল ৩০হাজার। পরবর্তীতে কেন্দ্রের নির্দেশমতো ৬০০০ নাম সংশোধনী তালিকায় বাদ দেওয়া হয়।
বর্তমানে আবাস যোজনা উপভোক্তার সংখ্যা ২৪ হাজার। এই সংখ্যক উপভোক্তার নাম সংশোধনী তালিকায় আবাস প্লাস হিসেবে প্রকাশ করা হয়। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় গাইডলাইন অনুযায়ী ২২-২৩ আর্থিক বর্ষে প্রকল্প এর প্রাপক সংখ্যা ৭৭০০। চলতি ২২-২৩ আর্থিক বছরে এই সংখ্যক পরিবারের প্রকল্পের আওতায় ঘরের তৈরীর জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে হবে কেন্দ্রকে। এরপরই ৭৭০০ ঘর তৈরির কাজ শুরু করতে পারবে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই ২৭০০ প্রাপকের জমি সমস্যার সমাধান করেছে জেলা প্রশাসন। চা বাগানের শ্রমিক, সরকারি জমিতে বসবাসকারীদের নিশুল্ক পাট্টা দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে ঘর তৈরীর কাজের জন্য উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছে রাজ্য সরকার।
পাট্টা দ্রুততার সঙ্গে প্রদান করে এই সমস্ত অসহায় পরিবারগুলিকে আবাস যোজনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে জানা যাচ্ছে কেন্দ্রের টার্গের স্থির রয়েছে দার্জিলিং জেলার পাহাড় সমতলের ক্ষেত্রে মোট ৫৬০০। ফলে দার্জিলিং জেলায় যোগ্য ৭৭০০ অসহায় উপভোক্তাদের অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের তরফে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। নামমাত্র কিছু অর্থ বরাদ্দ করে লোকসভা ভোটের আগে হাইপ তোলার রন কৌশল নির্ধারন করেছে কেন্দ্র।আর যোগ্য প্রাপকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভ্রাটের মুখে পড়েছে দিল্লির দরবার।
রাজ্য বিজেপির নেতৃত্বদের মুখ বাঁচাতে তাই পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়ে যোগ্য প্রাপকদের নানা অজুহাতে নাম কাটার ফন্দি স্থির হয়েছে। ল যত দ্রুত ঘর তৈরীর সম্পন্ন করে গরিব মানুষের ঘর তৈরির কাজ শুরু করতে চাইছে রাজ্য ততোই নানা ধরনের পর্যবেক্ষক এজেন্সি লেলিয়ে গতি অবরুদ্ধ করার চেষ্টা চলছে বলেই রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য।