দোলের আগের দিন রাতে কেন পালিত হয় হোলিকা দহন? ন্যাড়া পোড়ার সঙ্গে এর যোগসূত্র কি জানেন ? চলতি বছরের ৮ মার্চ সারা দেশজুড়ে পালিত হবে হোলি উত্সব। তার আগের দিন রাতে অর্থাৎ ৭ মার্চ পালিত হবে হোলিকা দহন। ‘আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া কাল আমাদের দোল, পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে বলো হরিবোল…’ দোল এলেই স্মৃতির দরজার কড়া নাড়া দিয়ে ওঠে এই ছড়া। যদিও এই ছড়াটার সঙ্গে বাঙালি খুব পরিচিত। বাঙালির কাছে যেটা ন্যাড়াপোড়া, সেটাই অন্যান্য জাতির কাছে হোলিকা দহন। হোলি ও দোল নিয়ে নানা মতভেদ থাকলেও দোলের আগের দিন রাতে সব জায়গায় এই হোলিকা দহন পালিত হয়। শুধু কোথাও বলে চাঁচড় পোড়া, কোথাও ন্যাড়া পোড়া, আবার কোথাও হোলিকা দহন। তবে, এই উৎসবের পিছনে আধ্যাত্মিক গুরুত্বও রয়েছে। চলতি বছরের ৮ মার্চ সারা দেশজুড়ে পালিত হবে হোলি উত্সব। তার আগের দিন রাতে অর্থাৎ ৭ মার্চ পালিত হবে হোলিকা দহন।
যদিও হোলিকা দহনের আরও একটি তাৎপর্য রয়েছে। হোলিকা দহনের হল অশুভ শক্তির বিনাশ। ন্যাড়া পোড়ার অর্থও একই। ন্যাড়া পোড়া হল মন্দের উপর ভালর জয়ের প্রতীক। তাই তো দোলের আগের দিন, ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমার সন্ধ্যায় হোলিকা দহন বা ন্যাড়া পোড়ানো হয়। এতে অশুভ শক্তি ছায়া জীবনের ওপর পড়ে না।
পুরাণ কাহিনি অনুযায়ী, রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশিপ তাঁর প্রজাদের পুজোপাঠ করা বন্ধ করে দেন। প্রজারা কোনও রকম পুজো করতে পারত না। অমরত্ব লাভের জন্য রাক্ষস রাজা ব্রহ্মার তপস্যা শুরু করেন। তাঁর তপস্যায় খুশি হয়ে ব্রহ্মা তাঁকে পাঁচটি বর দেন। এক, কোনও মানুষ বা কোনও প্রাণী তাঁকে বধ করতে পারবে না। ঘরের ভিতর বা ঘরের বাইরে তাঁর মৃত্যু হবে না। দিনে বা রাতে তাঁর মৃত্যু হবে না। কোনও অস্ত্র বা শস্ত্রের দ্বারাও মৃত্যু হবে না। এবং জল, স্থান ও শূন্যেও তাঁর মৃত্যু হবে না।
আরও পড়ুন – এবার জেলেই যোগ-ব্যায়াম করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়
হিরণ্যকশিপের অত্যাচার বাড়ার পর তাঁর প্রহ্লাদকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। এক্ষেত্রে তিনি নিজের বোন হোলিকার সাহায্য নেন। হোলিকা ব্রহ্মার কাছ থেকে একটি শাল পেয়েছিলেন, যেটা তাঁকে সবসময় রক্ষা করবে। তাই ঠিক হয় যে হোলিকা প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনের মধ্যে বসবেন। শাল থাকায় তাঁর কিছু হবে না কিন্তু প্রহ্লাদ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। কিন্তু আগুনের মধ্যে প্রবেশ করা মাত্র হোলিকার শাল প্রহ্লাদের গায়ে গিয়ে পড়ে আর হোলিকা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু প্রহ্লাদ সুরক্ষিত থাকে। এখান থেকেই শুরু হয় হোলিকা দহন।