পয়লা বৈশাখের সঙ্গে হালখাতার সম্পর্ক কী? কিভাবে পয়লা বৈশাখের সঙ্গে হালখাতার যোগ হল জানেন? আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। তারপরেই নববর্ষ (Bengali New Year)। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের সূচনা হয় এই দিন থেকেই। সবাই ভালোভাবে নতুন বছর শুরু করতে চায়। তবে ব্যবসায়ীদের জন্যে পয়লা বৈশাখের (Poyla Baishakh) দিনটি তাৎপর্য বহন করে। হালখাতার (Haal Khata) মধ্যে দিয়ে নতুন বছরের ব্যবসাবাণিজ্য শুরু করেন তাঁরা। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এদিন হিসেবের নতুন খাতার উদ্বোধন করা হয়, যার পোশাকি নাম হচ্ছে হালখাতা। এই উপলক্ষ্যে নববর্ষের প্রথম দিনে দোকানে আসা ক্রেতাদের মিষ্টিমুখও করান তাঁরা। কিন্তু কিভাবে পয়লা বৈশাখের সঙ্গে হালখাতার যোগ হল জানেন? জেনে নিন
নববর্ষের সঙ্গে হালখাতার কোনও সম্পর্কই ছিল না। পরে এই হালখাতা নববর্ষের সঙ্গে যোগ হয়েছে। এর ইতিহাস একেবারে আদিমযুগের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। মানুষ যখন থেকে লাঙলের ব্যবহার শিখেছে, তখন তারা এক জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তখন চাষ করা দ্রব্যের বিনিময় প্রথা শুরু হয়। এই হালের দ্রব্য বিনিময়ের হিসেবের জন্য একটি খাতায় নিজেদের মতো করে তারা লিখে রাখতে শুরু করল সেই সময়কার ভাষায়। সেই খাতারই নাম ছিল ‘হালখাতা’। ‘হাল’ শব্দটি সংস্কৃত এবং ফারসি, দুটি থেকেই এসেছে বলে দাবি করা হয়। সংস্কৃত হলে তার মানে লাঙল। আর ফারসি হলে হাল-এর মানে নতুন। তাই এই দুটি শব্দই হালখাতার ক্ষেত্রে যথাযোগ্য।
আগে বছরের গণনা শুরু হত হিম বা শরৎ কাল থেকে। ঋতু হিসেবে বছর গণনা করেতেও দেখা যায়। তবে পঞ্জিকা গণনার সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালির পয়লা বৈশাখের শুরু না হলেও উৎসব পালনের শুরু। আর হালখাতা পয়লা বৈশাখের আর এক নাম। বর্তমান কালে এই দিন দোকানে দোকানে পুজো হয়। নতুন খাতা খোলা হয়। সামান্য কিছু দিয়েও খাতা খোলার রীতি এখনও রয়েছে। বেশ কিছু বছর ধরেই পয়লা বৈশাখ মানেই হালখাতা। নতুন বছরের শুরু। তবে ইতিহাস বলে ‘হালখাতা’ পয়লা বৈশাখের সঙ্গে জড়িয়েছে অনেক পড়ে। এর সঙ্গে সবচেয়ে প্রথম পরিচয় ঘটে বিনিময় প্রথার যুগের মানুষের। সে সময় পয়লা বৈশাখের কোনও চল ছিল না।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীণ হালখাতার অনুকরণে সম্রাট আকবর জমিদারদের বকেয়া রাজস্ব আদায়ের অনুষ্ঠান ‘পুণ্যাহ’ চালু করেছিলেন। তাই অনেকেই মনে করেন সম্রাট আকবর পয়লা বৈশাখ চালু করেছিলেন। কিন্তু তা নয়। তিনি ওই দিন রাজস্ব আদায় করতেন। এই এক নিয়ম মেনে বাংলার নবাব মুর্শীদকুলী খান ‘পুণ্যাহ’ পালন করতেন। সে সময় বহু জমিদাররা আসতেন খাজনা দিতে। নবাবি আমলে প্রাচীন হালখাতাকে ‘পুণ্যাহ’ নাম দেওয়া হয়। পরবর্তী কালে তা আবার ‘হালখাতাতে’ পরবর্তীত হয়। রাজস্ব আদায়ের নাম ছিল হালখাতা। নববর্ষের দিনে যা পালন করা হত। তবে ১ লা বৈশাখকে নববর্ষ বা বছরের শুরু হিসেবে ধরি এই রীতি কিন্তু শুরু হয় ৩১৯ সালে। সেই সময় থেকেই পাঁজি গণনা শুরু হয়।