সূর্যের তেজ উপেক্ষা করে কলকাতার পথে বেরিয়ে নাকাল জনতা , দু’দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়ে কোনও কর্মী সাত দিনেও ফেরেননি। কেউ আবার এক দিনের ছুটির নামে নিয়েছেন চার দিন! কোনও বাস রুটের কয়েক জন কর্মী আবার সরাসরিই গরম কমলে কাজে আসবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন! গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেসরকারি বাসের কর্মী-সঙ্কট বাড়তে থাকায় রাস্তায় বাস নামাতেই হিমশিম খাচ্ছেন মালিকেরা। এর জেরে দেদার বাস কমছে বিভিন্ন রুটে। ফলে গরমে পথে বেরিয়ে বাসের জন্য প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘ হচ্ছে যাত্রীদের। একই সমস্যা সরকারি বাসের ক্ষেত্রেও।
যদিও হঠাৎ বাস কমে যাওয়ার পিছনে গরমকেই দায়ী করছেন বাসমালিকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, বাস পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের বড় অংশ শহরতলি থেকে আসেন। কিন্তু গরম বাড়তে থাকায় দীর্ঘ ডিউটির ক্লান্তি এড়াতে তাঁদের একটি বড় অংশ ছুটি নিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে এক দিনের নাম করে বাড়ি গিয়ে সাত দিনেও আসছেন না। কেউ অসুস্থ বলে দাবি করছেন। ৪৭বি রুটের এক বাসমালিকের কথায়, ‘‘একে ওঁদের প্রায় ১৮ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। এ বার ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়ে যদি কেউ বলে অসুস্থ হয়ে গিয়েছেন, তা হলে তো আমরা তাঁকে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে আনতে পারি না। তা ছাড়া, এই গরমের দুপুরে তো রাস্তায় কাক-পক্ষীও থাকছে না, বাস শুধু শুধু নামিয়ে কী করব!’’
অন্য দিকে, সরকারি বাসের উপরে নির্ভরশীল যাত্রীদের একটি বড় অংশের দাবি, সকালে ও বিকেলের ব্যস্ত সময়েই বাসের দেখা মিলছে। দুপুরের দিকে রাস্তায় সরকারি বাসও থাকছে না বললেই চলে। অভিযোগ অস্বীকার করে এক পরিবহণকর্তা বলেন, ‘‘গরম কর্মীদের সমস্যা বাড়িয়েছে। কিন্তু তার পরেও আমরা পরিষেবা স্বাভাবিক রেখেছি। যাত্রীদের যাতে কোনও ভোগান্তি না হয়, তার জন্য সব সময়ে চেষ্টা করা হয়।’’
জানা গিয়েছে, কর্মী-সঙ্কটের জেরে একাধিক রুটে কোথাও ৩০ শতাংশ আবার কোথাও ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাস কম চলছে। সব থেকে খারাপ অবস্থা ৪৮বি, ২০২, ২১৯, ৯১, ৯১সি রুটের। এই রুটগুলির কোনওটিতে ৪০টি বাস থাকলেও সপ্তাহখানেক ধরে ২৫টি বাস রাস্তায় নামছে, কোথাও আবার ৪৫টির মধ্যে গড়ে প্রতিদিন নামছে ৩০টি। ৯১সি, লাউঘাট-শ্যামবাজার রুটে আবার ৪০টি বাস থাকলেও গড়ে প্রতিদিন ১৫টি বাস নামানো যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন মালিকেরা। কর্মী-সঙ্কটের পাশাপাশি গরমে দুপুরের দিকে তুলনামূলক ভাবে রাস্তায় যাত্রী কম থাকায় ট্রিপ বাতিলের রোগ বাড়ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। প্রতিদিন বেহালা চৌরাস্তা থেকে হাওড়ায় যাতায়াত করা উৎপল সামন্ত বললেন, ‘‘একে তো বেসরকারি বাসে ভাড়া নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নানা অভিযোগ রয়েছে। তার উপরে এখন সেই ভাড়া দিয়েও রাস্তায় বাসের দেখা মেলে না। আগে যেখানে ৩০ মিনিট দাঁড়াতে হত, গরম পড়তেই এখন সেটা প্রায় ঘণ্টা ছুঁয়েছে।’’
আরও পড়ুন – নথি পোড়ানোর ঘটনায় ভাঙড়ের তৃণমূল নেতাকে তলব করলো সিবিআই
চল্লিশ পেরিয়েছে শহরের তাপমাত্রা। চৈত্রের শেষ থেকে শুরু হওয়া দহন বজায় রয়েছে বৈশাখের শুরুতেও। এই অবস্থায় রাস্তায় বেরিয়ে হাঁসফাঁস করছে আমজনতা। তাদের ভোগান্তির এই দিনলিপি আরও কঠিন করছে গণপরিবহণের অপ্রতুলতা। শহরের একাধিক রুটে সকালের দিকে তা-ও কিছু বাসের দেখা মিললেও দুপুর থেকে কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। সন্ধ্যার পরে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, ঘণ্টাখানেক দাঁড়ানোর পরেও বাস মিলছে না।