গুড় তৈরি করে সংসার চালান কৃষক দম্পতি। এর ওর জমিতে কৃষি কাজ করে কোন রকমে দিন বছরের ছয় মাস কাটলেও শীত পড়লে কিছুটা হলেও মুখে হাসি ফোটে দিনহাটা গ্রামের কৃষক দম্পতির। শীতের ছয় মাস কয়েক মাস খেজুরের রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে সংসার চালান কৃষক দম্পতি মনি বর্মন ও অঞ্জলি বর্মন। দীর্ঘ বছর ধরে এভাবেই দিন গুজরান করে আসছেন দিনহাটার মাতালহাটের কৃষক দম্পতি পেশায় কৃষিজীবী মনি বর্মণ। অত্যন্ত গ্রামে সামান্য জায়গায় বাড়ি ছাড়া নিজের কৃষিজমি বলতে কিছু নেই। বছরের অন্যান্য সময় শ্রমিকের কাজ করে দিন কাটান তারা।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তারা এভাবেই কাজ করে চলছেন । প্রতিবছর শীতের কয়েক মাসের জন্য খেজুর গাছ কেনেন। সেই গাছ গুলি পরিচর্চার পাশাপাশি নিয়ম করে প্রতিদিন ভোর থেকে একটানা কয়েক ঘন্টা সেই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। এরপর সেই রস ঘন্টা চালক জাল দেওয়ার পর তা দিয়ে তৈরি করেন গুড়। পুটিমারি এক গ্রাম পঞ্চায়েতের খড়খড়িয়ার মতো প্রত্যন্ত গ্রামে মনি বর্মন তাঁর স্ত্রী কে নিয়ে খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করেন। বছরের ছয় মাস প্রত্যন্ত এই গ্রামেই হয়ে ওঠে তার আস্তানা।
গ্রাহকদের দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক উজ্জ্বল আচার্য, বাপি রক্ষিত, কমল প্রামাণিক অনেকেই জানান,সাতসকালেই গুড় কিনতে চলে আসি মনি বর্মনের এখানে। তারা জানান, মনি বর্মণ নিজের হাতে যেভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে গুড় তৈরি করেন তা একবার খেলে বারবার আসতে হয়। বর্তমানে যুগে নানা রকম কেমিক্যাল দিয়ে যখন জিনিস তৈরি হয় তখন মনিদাঁর এই গুড় সম্পূর্ণভাবে কোনরকম ভেজাল ছাড়া তৈরি হচ্ছে।
রস সংগ্রহ করার পর শুরু হয় গুড় তৈরীর কাজ। প্রায় ঘন্টা তিনেক সেই রস জ্বাল দেওয়ার পর তৈরি হয় গুঁড়। প্রতিদিন ৮০-৯০ লিটার রস সংগ্রহ হয়। শীতের ছয় মাস সংগৃহীত রস থেকে গুড় বানিয়ে অনেকটাই স্বাবলম্বী তাঁরা। বাড়ি দিনহাটা এক ব্লকের মাতালহাটের ভুতকুড়া গ্রামে হলেও শীতের এই সময় থাকেন পুটিমারি গ্রামে। এবছর আশপাশ এলাকার ৯৫ টি গাছ কিনেছেন। সেই গাছগুলি থেকে রস সংগ্রহের পাশাপাশি নিয়মিত হবে পরিচর্যা করেন। স্বামীর এই কাজে সহযোগিতা করে চলছেন স্ত্রী অঞ্জলি ।
আরও পড়ুন – নেপালে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় কেউ জীবিত নেই
অঞ্জলি বর্মণ বলেন,”কৃষি কাজে পরিশ্রম অনেক বেশি। এই কাজ করেও যে আয় হয় তার পরেও সংসারে অনটন থেকেই যায়। তাই শীতের কয়েক মাস খেঁজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করে এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ।”
মনি বর্মণ বলেন,”নিজের কৃষি জমি বলতে কিছুই নেই। এর ওর জমিতে কাজ করে কোনরকমে চলে সংসার। তাই শীত করতেই প্রতিবছর খেজুরের গাছ কিনে সেখান থেকে রস সংগ্রহের পর সেখান থেকেই তৈরি হয় গুড়। তার এই গুড় দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ এসে সংগ্রহ করে।”
বর্তমানে বিভিন্ন রকম খাবারের মধ্যে যখন ভেজাল লক্ষ্য করা যায় তখন নির্ভেজাল গুড় অনেককেই যেন নাড়া দেয়।