ফের কাটগড়ায় আদানি। এবার গৌতম আদানি এবং তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে এবার বাজারের চেয়ে চড়া দামে বিদেশে কয়লা আমদানির অভিযোগ উঠল (Coal Imports)। শুধু তাই নয়, আদানি গোষ্ঠীর তরফে জ্বালানির দামও বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, তার জেরে কোট কোটি ভারতীয়কে চড়া হারে বিদ্যুতের দাম মেটাতে হয়েছে বলেও সামনে এল অভিযোগ। যদিও পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে জলঘোলা করা হচ্ছে, এর নেপথ্যে বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে অভিযোগ খারিজ করেছে আদানি গোষ্ঠী। (Adani Group)
আরও পড়ুনঃ অমিত শাহের দুর্গাপুজো উদ্বোধন নিয়ে এবার কটাক্ষ অভিষেকের
লন্ডনের ফাইনান্সিয়াল টাইমসের একটি রিপোর্টে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। শুল্ক রেকর্ড দেখে এই তথ্য হাতে এসেছে বলে জানিয়েছে তারা। ২০১৯-২০২১, দু’বছরের হিসেব তুলে ধরা হয়েছে ওই রিপোর্টে। বলা হয়েছে, তাইওয়ান, দুবাই এবং সিঙ্গাপুরের মনতো দেশ থেকে ৫০০ কোটি ডলারের কয়লা আমদানি করেছে আদানি গোষ্ঠী। সেই বাবদ যে দাম দেখানো হয়েছে, তা বাজারমূল্যের চেয়ে ঢের বেশি চড়া।
ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি কয়লা আমদানিকারী সংস্থা আদানি গোষ্ঠী। বিদেশের যে যে সংস্থা থেকে কয়লা আমদানি করেছে তারা, তার মধ্যে তাইওয়ানের এক ব্যবসায়ীর সংস্থাও রয়েছে। তাইওয়ানের ওই ব্যবসায়ী আদানি গোষ্ঠীর গোপন শেয়ারহোল্ডার বলেও জানা যায় সম্প্রতি। এর পাশাপাশি, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত, ৩২ মাস ধরে ইন্দোনেশিয়া থেকে ভারতে আদানিদের সংস্থা যে কয়লা আমদানি করেছে, তার শিপমেন্ট রেকর্ডও খতিয়ে দেখেছে ফাইনান্সিয়াল টাইমস। ওই রেকর্ডে দেখা গিয়েছে, বিদেশ থেকে যে মূল্যে কয়লা কেনা হয়েছে, শুল্ক দফতরের কাছে তার জমা দেওয়া হিসেবে, তার চেয়ে অনেক বেশি দাম দেখিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। কয়েক কোটি নয়, ৭০ মিলিয়ন ডলার দাম বেশি দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ, ভারতীয় মুদ্রায় যা ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি।
বরাবরের মতোই কয়লার দাম বাড়িয়ে দেখানোর কথা অস্বীকার করেছে আদানি গোষ্ঠী। তাদের দাবি, ভিত্তিহীন অভিযোগ। যে হিসেব দেখানো হয়েছে, তা-ও অনেক আগের বলে দাবি তাদের। কিন্তু আদানিদের বিরুদ্ধে জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দেখানোর অভিযোগ এই প্রথম নয়। সাত বছর আগে ভারত সরকারের অর্থমন্ত্রকের রাজস্ব সংক্রান্ত ডিরেক্টরেট অফ রেভনিউ ইনটেলিজেন্সও একই অভিযোগ তোলে। ২০১৬ সালে সেই নিয়ে নোটিসও দেওয়া হয়, যাতে আদানি গোষ্ঠীর পাঁচ সংস্থা এবং জ্বালানি ৪০ আমদানিকারীর নামও উল্লেখ করা হয়। নোটিসে সাফ বলা হয়েছিল, ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা জ্বালানির দাম কৃত্রিম ভাবে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। সেই টাকা বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়েছে এবং দেশের বিদ্যুত্ সংস্থাগুলির কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করা হয়েছে পরিকল্পিত ভাবে।
আমদানি এবং রফতানির রেকর্ডে চড়া দামের হিসেব স্পষ্ট, কখনও ৫০ শতাংশ বেশি দাম নেওয়া হয়েছে, কখনও আবার দাম দ্বিগুণ দেখানো হয়েছে বলে জানায় ডিরেক্টরেট অফ রেভনিউ ইনটেলিজেন্স। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কয়লা সরবরাহকারী দেশ থেকে পাঠানো বিল তৃতীয় একটি দেশে যেত। সেখান থেকে দাম বাড়িয়ে দেখানো হতো।
এ নিয়ে গুজরাতেও প্রশ্নের মুখে পড়ে আদানি গোষ্ঠী। ২০১৮ সালে থেকে সেখানে বিদ্যুতের দাম চড়া, যা মেটাতে হিমশিম খান সাধারণ মানুষ। বিরোধীদের তরফে রাজ্য বিদ্যুত্ দফতরের একটি চিঠিও তুলে ধরা হয়, যাতে ইন্দোনেশিয়ার বাজারে কয়লার যা দাম, তার চেয়ে বেশি দামে কয়লা কেনা হয়েছে বলে উল্লেখ ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টে যে ৪০ সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে আবেদন জমা দেওয়া হয়েছিল, চলতি বছরে ডিরেক্টরেট অফ রেভনিউ ইনটেলিজেন্স সেই আবেদন তুলে নেয়। মামলা তুলে নেওয়ার পরও নতুন করে বিষয়টি সামনে আনা অর্থহীন বলে দাবি আদানিদের। এ নিয়ে ডিরেক্টরেট অফ রেভনিউ ইনটেলিজেন্স কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কিন্তু কেন আবেদন তুলে নেওয়া হল, কার নির্দেশে তুলে নেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আবারও।