একযুগ পর রাজস্থান থেকে সন্তানকে বাবা-মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলো তিনজন সমাজসেবী। ৫ই ডিসেম্বর,অপরিচিত এক নম্বর থেকে চিচিড়া স্বামী বিবেকানন্দ গ্ৰাম বিকাশ কেন্দ্র সমাজসেবী সংগঠনের কৌশিক দাস বাবুর কাছে একটি ফোন আসে। এবং অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিটি বলেন,আমি “আপনা ঘর আশ্রম” কর্তৃপক্ষ বলছি। প্রথমত কৌশিক বাবু হতবাক হয়ে যান। তারপর পুরো বিষয়টি তিনি মনোযোগ সহকারে শোনেন। এবং তারপর জানতে পারেন ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর দুই ব্লকের খামার গ্ৰামের অরবিন্দ সিং নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন জনৈক ব্যক্তি ওনাদের রাজস্থানের ভরতপুরের “আপনা ঘর আশ্রমে” আছেন।
এরপর কৌশিক দাস খোঁজা শুরু করেন। এবং গোপীবল্লভপুরের বাসিন্দা,সুবর্ণরৈখিক রেলপথ সংগ্ৰাম কমিটির সভাপতি ও সমাজসেবী সত্যব্রত রাউৎ কে বিষয়টি জানান।এবং উনি ১২ই ডিসেম্বর অরবিন্দ সিং এর ছবি সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেন।সত্যব্রত রাউৎ এর দ্রুত তৎপরতার দরুন কিছু ঘন্টার মধ্যেই অরবিন্দ সিং-এর পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়।এবং তারা ১৭ই ডিসেম্বর অরবিন্দ সিং-এর খামার এলাকার বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা-বাবা ও গ্ৰামবাসীদের সাথে কথা বলেন।এবং অসহায় মা-বাবা ১৪ বছর পর ছেলেকে আবার ফিরে পাবেন কোথাও যেন আশার আলো জেগে উঠেছে তাদের মনে।
ওনারা ছেলেকে ফিরিয়ে আনার কাতর আর্জি করেন।এরপর সত্যব্রত রাউৎ যোগাযোগ করেন সোনারপুরের,স্বর্ণদীপ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-এর শ্রীকান্ত বধুক এর সাথে।এবং বিষয়টি শোনার পর তিনি এককথায় রাজী হয়ে যায় অরবিন্দ সিং কে রাজস্থান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার জন্য। গত ২৩শে জানুয়ারী,রবিবার রাত্রে Reservation ছাড়াই General compartment -এ প্রচন্ড ভীড় ট্রেনে কষ্ট করেই হাওড়া থেকে ভরতপুরের উদ্দ্যেশে রওনা দেন শ্রীকান্ত বধূক,কৌশিক দাস,ও অরবিন্দ সিং-এর ভাই রবি সিং।
এবং ২৪তারিখ রাত ১২টায় সময় ওনারা ভরতপুর স্টেশনে পৌঁছে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে ফাঁকা ষ্টেশনেই রাতটা কাটিয়ে ২৫তারিখ,মঙ্গলবার সকালে ‘আপনা ঘর আশ্রমে” পৌঁছে যান।এবং আশ্রম কর্তৃপক্ষর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে সই-স্বাক্ষর করার পর আশ্রম কতৃপক্ষ অরবিন্দ সিং কে তুলে দেন তাদের হাতে। শুক্রবার ২৭শে জানুয়ারী,সকালে নিখোঁজ অরবিন্দ সিং কে অসহায় পিতা-মাতার হাতে তুলে দিলেন ৩জন সমাজসেবী,সত্যব্রত রাউৎ, শ্রীকান্ত বধূক,ও কৌশিক দাস।
সত্যব্রত রাউৎ বলেন,গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের খামার এলাকার কিছু সুহৃদয় মানুষজন আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন।এবং আমরা ওনাদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হই অরবিন্দ সিং খামার গ্রামের বাসিন্দা।তারপর আমরা পরিবার কে খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি আশ্রম কতৃপক্ষ কে জানাই,এবং কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সেই চেষ্টায় করি আমরা মিলে।আজ সত্যি বলতে আমাদের জীবনের এটা সেরা একটা পাওনা।একজন অসহায় পিতা-মাতার কোলে তাঁর সন্তান কে ১৪ বছর পর ফিরিয়ে দিতে পেরেছি আমরা এর থেকে খুশির ও আনন্দের কিছুই নেই।গ্ৰামবাসীদের মধ্যে খুশির উচ্ছাস ছিল দেখার মত।ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসছে খবর পাওয়া মাত্রই পরিবার ও গ্ৰামবাসীরা ফুলের মালা,চন্দন পরিয়ে,ও শঙ্খধ্বনী দিয়ে আমাদের অভ্যর্থনা জানায়।
আরও পড়ুন – “মায়েদের থেকেই সময়ের ম্যানেজমেন্ট শেখা উচিত ” দেশের পড়ুয়াদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী
এগুলো আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড়ো পাওনা।যা অঙ্কের মূল্য দিয়ে মাপা যায় না কখনো। আমরা সেই সকল ঈশ্বররুপী মানুজনের কাছে চির কৃতজ্ঞ যারা পরিবার কে খুঁজে দিতে আমাদের এই কর্মযজ্ঞে সহায়তা করেছেন।সকলের আশির্বাদ ও ভালোবাসা ছিল বলেই আজ আমরা এই কর্মযজ্ঞে জয়যুক্ত হতে পেরেছি।এটা সত্যিই আমাদের কাছে খুশির ও গর্বের বিষয়। একযুগ পর