কুলিকের অভয়ারণ্যে আপসেনা, ভারতী, পুনমেরা। প্রকৃতি থেকে সাধারণ মানুষ সরে গিয়ে ক্রমাগত ইট, বালি, সিমেন্টের দেওয়ালে আটকে পড়েছে। স্মার্ট ফেনের গভীর হাতছানি কেড়ে নিচ্ছে ছেলেমেয়েদের কৈশোর ও যৌবন। এরকম পরিস্থিতিতে, স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে প্রকৃতির প্রতি সহমর্মিতা ও আকর্ষণ বৃদ্ধি করতে এবার এগিয়ে এল রায়গঞ্জ সুভাষগঞ্জ গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকারা।
মঙ্গলবার দুপুরে স্কুলের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দের নিয়ে তারা উপস্থিত হয়েছিলেন উত্তর দিনাজপুর জেলার অন্যতম জৈববৈচিত্র্যে ভরপুর কুলিক পাখিরালয়ে। এখানে পড়ুয়াদের একদিকে যেমন গাছপালা, পাখি, বাস্তুতন্ত্র, জৈববৈচিত্র্যের পাঠ দেওয়া হয়, তেমনি কুলিক অভয়ারণ্য লাগোয়া মানুষজনের আর্থ সামাজিক অবস্থাও স্টাডি করে পড়ুয়ারা।
এরপর একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী ভারতী মার্ডি, পুনম টুডুরা বলে, এখানে এক ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা হল। প্রতিটি গাছের পাতা, কান্ডসহ গাছের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন দিদিমনিরা দেখালেন, তেমনি কীটপতঙ্গ চেনালেন। নবম শ্রেণির দিপ্তী বর্মন, সুমিতা কিস্কু বলে, এর আগে কখনও কেউ এভাবে পরিবেশকে চিনতে শেখাননি। কিন্তু এদিন যেভাবে প্রতিটি বিষয় ম্যামরা বোঝালেন, সেটা নতুন করে প্রকৃতিকে চিনতে শেখালো। নিজের স্কুলের পড়ুয়াদেরকে এমন একটা শিক্ষা মূলক ভ্রমণে এনে নানা ধরনের গাছ, পাখি, ফল চেনাচ্ছিলেন স্কুলের শিক্ষিকারা।
পড়ুয়াদের চেনা ও জানার আগ্রহ দেখে ভীষণ খুশি শিক্ষিকারাও। মিঠু তরফদার নামের ওই স্কুলের ভূগোল শিক্ষিকা বলেন, এদিন নবম থেকে দ্বাদশের ছাত্রীদের এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্যে এনেছি। ওরা অনেক কিছু শিখল।আগামী দিনে এই অভিজ্ঞতা ওদের অনেক কাজে লাগবে। আগামীতে অন্য ক্লাসের পড়ুয়াদের আনার চেষ্টা করা হবে। এজন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ও পরিচালনা সমিতির সভাপতিকে ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন – নেপালে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় কেউ জীবিত নেই
শীতের মরশুমে পড়ুয়াদেরকে এমন একটি উপহার দিতে পেরে উচ্ছ্বসিত স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি শিব শঙ্কর রায়চৌধুরী ও স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বন্দিতা সরকার, তারা বলেন, করোনা পরবর্তী নিউ নর্মালে পড়ুয়ারা স্মার্টফোনের মধ্যে ডুবে গেছে। সেই অবস্থা থেকে পড়ুয়াদের বের করে নিয়ে এসে পরিবেশের প্রতি এটাচমেন্ট বাড়াতে এমন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতিদিনের ক্লাসরুমের পঠনপাঠনের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন একটি দিন কাটাতে পেরে ভীষণ খুশি স্কুলের ৬০ জন মেয়েরা। জেলা শিক্ষা দপ্তরের আর্থিক সহয়তায় এই ধরনের শিক্ষামূলক ভ্রমণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতার ভাবধারা গড়ে তুলবে এমনটাই আশা স্বরূপা দত্ত বর্মন, করবী দাস, মৌমিতা ব্যানার্জী সহ অন্যান্য শিক্ষিকাদের।