শীত পড়তেই মালদহে কলাই রুটির আমেজ মেতে জেলাবাসী। কথায় আছে বাঙালি ভোজনরসিক। বাঙালির খাদ্য তালিকায় হরেক রকম বিদেশি খাবারের পাশাপাশি রয়েছে দেশের নানা আধুনিক পদও। চাউমিন, বার্গারের পাশাপাশি তাই ইডলী, ধোসা, মোমো বা রোলও চট জলদি পেট ভরা খাবার হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু এর পাশপাশি গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবারও সমান ভাবে জনপ্রিয়।
এরকমই একটি খাবার হল মালদহ জেলার কলাইয়ের রুটি । আমরা সাধারণত গমের আটা বা ময়দা দিয়ে তৈরি রুটি খেতে অভ্যস্ত। কিন্তু শীতের মরশুমে মালদহ জেলার বিভিন্ন গ্রাম এমনকি মালদহ শহরেও অন্যতম জনপ্রিয় খাবার হল এই কলাইয়ের রুটি। এই রুটি খেতেও যেমন সুস্বাদু তেমনই উপকারী। পাশপাশি এই রুটি সাধারণ গমের আটার রুটির থেকে মোটা হওয়ার কারনে এটি খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে।
প্রথমে চালের গুঁড়ো ও কলাই এর গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে জল দিয়ে মেখে পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে আটার মতো গোল্লা গোল্লা করে রাখতে হবে। এই রুটি সেকার জন্য আগে থেকে মাটির পাত্র বা সরা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে নাহলে তা আগুনে গরম হয়ে ভেঙে যেতে পারে। এবার দুই হাত দিয়ে চেপে চেপে রুটির আকার দিতে হবে। কাঁচা রুটি সেঁকা হয় কাঠের উনুনের ওপর মাটির সড়াতে। এর সাথে সরষে ,লেবু, রসুন আর কাঁচা লঙ্কার চাটনি । তবে অনেকে বেগুন পোড়া দিয়েও এই রুটি খেতে পছন্দ করেন। এই রুটি ঐতিহ্য বহন করে চলেছে মালদার গ্রাম থেকে শহর। এই রুটি গ্রামাঞ্ছলে গৃহস্থ বাড়িতে তৈরি হলেও এখন এই রুটি শহর অঞ্চলে কিছু মানুষের রুজির মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন – মুখ্যমন্ত্রীর নজরে এবার প্রবীণরা,নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর
আজ থেকে ২০-২২ বছর আগে এই রুটি এক মাত্র গরীব মানুষরা সস্তায় পেট ভরার জন্য খেলেও আজ এই রুটি খাওয়া সব শ্রেণির মানুষের কাছে মুখরোচক খাবার হয়ে দাঁড়িয়েছে । গ্রাম ছাড়াও মালদহ শহরের একাধিক রাস্তার মোড় থেকে জেলার প্রশাসনিক ভবন চত্বরের রাস্তার পাশে অস্থায়ি খড়ি উনোন জ্বালিয়ে মহিলারা তৈরি করছে কলাইয়ের রুটি। গরমে এই রুটি কম বিক্রি হলেও শীত পড়তেই এই রুটির চাহিদা ভীষণ ভাবে বেড়ে যায়। সাধারণ গমের আটার রুটির চেয়ে বেশ মোটা একটা কলাই রুটি।
তাই একটি খেলেই পেট ভরে যায়।এই সময় রুটির সঙ্গে ধনেপাতার চাটনি বেগুন পোড়া দেওয়া হলেও গরমে আম, লেবু ,রসুন লঙ্কার চাটনি দেওয়া হয়। এক বিক্রেতার কথায় , দুপুরে পেট ভরতে যারা হোটেলে ৮০-৯০ টাকার ভাত খেয়েও তৃপ্তি পান না। কিন্তু একটা বা দুটো কলাইর রুটি খেলেই পরম তৃপ্তি পেয়ে যাবেন।