
আফগানিস্তানে তালিবান আগ্রাসন। আর আফগানিস্তানের মাটিতে তালিবানদের আগ্রাসনের জেরে দুঃশ্চিন্তা বেড়েছে সোনামুখীর পাগড়ি শিল্পীদের। আফগানিস্তানে তালিবানদের আগ্রাসনের জেরে ধুঁকছে বাঁকুড়ার (Bankura) সোনামুখীর পাগড়ি শিল্প। শিল্পীদের ঘরে ঘরে জমছে উৎপাদিত পাগড়ির পাহাড়। বাজার হারিয়ে দিশেহারা সোনামুখীর কয়েক’শো তাঁতি পরিবার।
বাঁকুড়ার (Bankura) সোনামুখী শহরের পাগড়ি শিল্পের ইতিহাস বেশ পুরানো। আফগানিস্থান থেকে সোনামুখী শহরে একসময় হিং বিক্রি করতে আসতেন কাবুলিওয়ালারা। হিং এর ব্যবসা করতে এসে সোনামুখী শহরে তাঁরা থাকতেন মাসের পর মাস। কাবুলিওয়ালারা মাথায় যে পাগড়ি পরে আসতেন সেই পাগড়ির অনুকরণে সোনামুখীর কৃষ্ণবাজারে তাঁতিরা তৈরী করতে শুরু করেন পাগড়ি।
প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় কাবুলিওয়ালারা তা ব্যবহার করলেও ধীরে ধীরে পাগড়ি শিল্পের বাজার ছড়িয়ে পড়ে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও সৌদি আরবে। রেশমের তৈরী সোনামুখীর (Bankura) সৌখিন পাগড়ি আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভালো দাম মেলায় ধীরে ধীরে গামছা ও চাদর বোনা ছেড়ে সোনামুখী কৃষ্ণবাজার এলাকায় থাকা কয়েকশো তাঁতে পাগড়ি উৎপাদন শুরু হয়।
গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে চারশো টাকা থেকে চার হাজার টাকা দামের সেই সব পাগড়ি কলকাতা ও দিল্লীর রপ্তানিকারী একাধিক সংস্থার হাত ধরে পাড়ি দিত আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও সৌদি আরবে। প্রতি মাসে সোনামুখীর (Bankura) তাঁতে তৈরী কয়েক হাজার পাগড়ি পাড়ি দিত ওই তিন দেশে। বছর তিনেক আগে জিএসটি চালু ও আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দার জোড়া ফলায় বেশ কিছুদিন ধরেই পাগড়ি শিল্প ধুকছিল। আফগানিস্থানে তালিবান আগ্রাসন পাগড়ি শিল্পে শেষ পেরেক পুঁতে দেয়।
সোনামুখী থেকে শেষ জুলাই মাসে কয়েকশো পাগড়ি পাড়ি দেয় আফগানিস্তানে। তারপর থেকে প্রায় দেড় মাস পাগড়ি রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ। ফের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশায় তাঁত শিল্পীরা এখনও পাগড়ির উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু পাগড়ি বিক্রি না হওয়ায় এবার টান পড়ছে মূলধনে। মূলধনের অভাবে এবার পাগড়ি উৎপাদন কার্যত বন্ধর মুখে।
পুজোর মুখে এভাবে রুজি রুটি হারিয়ে দিশেহারা সোনামুখীর কৃষ্ণবাজারে পাগড়ি শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে ভাবে যুক্ত কয়েক হাজার তাঁত শিল্পী। স্থানীয় পাগড়ি শিল্পীরা বলেন, ” আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে পাগড়ি বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাভাবিক ভাবে মূলধনে টান পড়েছে। কাঁচামাল কেনার মতো মূলধন নেই কারো হাতে। এভাবে আর কতদিন চলবে জানিনা। পুজোর মুখে এই অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে পাগড়ি শিল্পীরা।