‘প্রাণহানির আশঙ্কা’! ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে জটিলতা ক্রমেই বাড়ছে। আদালতের নির্দেশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে হবে। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যেরা রাজ্যের কোনও বুথে একক ভাবে কাজ করতে চাইছেন না। ‘বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের যা অবস্থা’ তাতে তাঁরা ‘প্রাণহানির আশঙ্কা’ রয়েছে বলে মনে করছেন। এই মর্মে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দিয়েছেন বিএসএফ কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার রাতে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আইজি (বিএসএফ)-র সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের সব ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে ভোট করানো আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। তা হলে কি ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াই ভোট করানো হবে? এ নিয়ে যদিও কোনও মন্তব্য করেননি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার।
রাজ্যের বুথের সংখ্যা ৬১ হাজারের ৬৩৬। ৫২৮টি বুথে ভোট হচ্ছে না। বাকি ৬১ হাজার ১০৮টি বুথের প্রত্যেকটিতে যদি ‘হাফ’ সেকশন অর্থাৎ চার জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়, তাহলে অন্তত ২ লক্ষ ৪৫ হাজারের কাছাকাছি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যের প্রয়োজন। এদিকে হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্যে মোতায়েন করা হচ্ছে ৮২২ কোম্পানি। অর্থাৎ ৮২ হাজার সদস্য। এ থেকে স্পষ্ট যে, সব বুথে কোনও মতেই চার জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য মোতায়েন সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই ভোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
তবে পুরোপুরি এই ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীও যে শনিবারের আগে রাজ্যে এসে পৌঁছতে পারবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। এখনও ৪৮৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে পৌঁছয়নি রাজ্যে। প্রশ্ন উঠছে, শনিবার, ভোটের আগে সেই বাহিনী কি আদৌ পৌঁছতে পারবে রাজ্যে? দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসছে ওই ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী। পশ্চিমবঙ্গ থেকে দূরের রাজ্য, যেমন রাজস্থান, পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, কেরল থেকে যারা রওনা দিচ্ছে, তাদের কি আর এক দিনের মধ্যে রাজ্যে পৌঁছনো সম্ভব? যদি তারা নির্বাচনের আগে এসে পৌঁছতে না পারে, সেক্ষেত্রে কী করা হবে? সেই প্রশ্নও উঠে গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূ্ত্রে খবর, বিশেষ ট্রেনে করে পশ্চিমবঙ্গে বাহিনী পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনিতে ভোটমুখী রাজ্যে মোতায়েন হওয়ার জন্য যে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসে, তারা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো হয়। সেখান থেকে তাদের উদ্দিষ্ট জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ বার সেই রীতি মানা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, যথা সময়ে বাহিনী যাতে নির্দিষ্ট বুথে পৌঁছতে পারে, সে জন্য রাজ্যে ট্রেন ঢোকার সময়ই প্রয়োজনীয় স্টেশনে নেমে পড়বেন বাহিনীর সদস্যেরা। যেমন, খড়্গপুর দিয়ে যখন ট্রেন ঢুকবে, তখন পূর্ব বা পশ্চিম মেদিনীপুরে মোতায়েন হওয়া বাহিনী সেখানেই নেমে যাবে।
সূত্রের খবর, এত কিছু পরেও ৪৮৫ কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই নির্দিষ্ট গন্তব্যে সময়ে পৌঁছতে পারবে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রের। তাদের আশঙ্কা, ২০ থেকে ৩০ শতাংশ যথা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে না। সেক্ষেত্রে কী করা হবে? প্রয়োজনীয় বাহিনীর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ সময় মতো পৌঁছতে না পারলে ভোট কী ভাবে মেটানো হবে? এর মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী যে দাবি তুলেছে, তা মিটিয়ে কী ভাবে শনিবার ভোট হবে? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বাড়ছে জটিলতা।
আরও পড়ুন – পঞ্চায়েত ভোটের ফল ঘোষণার পরবর্তী ১০ দিন রাজ্যে মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী,…
বিএসএফ, আইটিবিপি-সহ সব বাহিনীর কর্তারা জানিয়েছেন, কোনও জায়গায় এক সেকশনের কমে বাহিনী থাকতে পারে না। এক সেকশনে সদস্য সংখ্যা ১১ জন। শুধুমাত্র ভোটের ক্ষেত্রে কোনও বুথে ‘হাফ’ সেকশন বাহিনী থাকতে পারে। ‘হাফ’ সেকশন বাহিনীতে সক্রিয় থাকেন ৪ জন সদস্য। পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে হিংসা, বুথ দখলের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, এই কথা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি পাঠানো হয়েছে।