রেল দুর্ঘটনা ধামাচাপা দিতেই পুরসভার নিয়োগ তদন্তে সিবিআইকে নামিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ! অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতার ,ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতেই পুরসভা নিয়ে আসরে নেমেছে সিবিআই ,বুধবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আর্থিক সহায়তা দিতে এসে এমনটাই অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, ‘‘আজ আমি কিছুই বলতাম না। কিন্তু আমাকে বলতেই হচ্ছে। ভেবেছিলাম বলব না, কিন্তু এত বড় দুর্ঘটনা! আমায় পরিস্থিতি বাধ্য করেছে। কী করে ধামাচাপা দেওয়া যায় সেই চেষ্টা চলছে। যে সব পরিবার সবকিছু হারিয়েছে, তারা জবাব চাইবে এদের কাছে। সত্য তথ্য বেরিয়ে আসুক।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষতিপূরণের নীতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ দয়া করে দিচ্ছেন না। আমি রেলমন্ত্রী থাকার সময় ক্ষতিপূরণ দিতাম। আমি ১৫ লক্ষ করে দিতাম। আপনাদের দায়িত্ব এটা দেওয়া।’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘আমরা যা দিয়েছি তা বাড়তি দিয়েছি। আমরা এই সাহায্য করেছি, কারণ আমরা মানবিক। আপনারা আমার রাজ্যের মানুষ।’’মমতার কথায়, ‘‘শাস্তি হোক। যাঁরা এই ঘটনার জন্য দায়ি তাঁদের শাস্তি হয়। আত্মার আত্মীয়রা কাঁদছে। তাঁরা বিচার চাইছেন।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘রেলের দুর্ঘটনার তদন্ত এজেন্সিকে দিয়ে ধামাচাপা দিয়ে পুরসভার জল আর কল দেখতে গেলে মনে রাখবেন, আগামী দিনটা কিন্তু ভয়ঙ্কর।’’
বুধবার নিহতদের পরিবারকে ও আহতদের চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে অথর্ব যাওয়া পরিবারের একজন সদস্যকে স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই ঘোষণা মতোই নিয়োগপত্রও তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছেন মমতা। ৩১ জনকে ৫ লক্ষ টাকার চেক, ক্ষতিপূরণের সঙ্গে আপাত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ১০ হাজার টাকা ও হোমগার্ডের চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হল। গুরুতর আহতদের ১ লক্ষ টাকার সঙ্গে চিকিৎসার খরচের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হল। সঙ্গে আগামী ৩ মাস ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের তরফে। আহতদের দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকার চেক। চিকিৎসার খরচের জন্য ১০ হাজার টাকা। তাঁদেরও আগামী ৩ মাস ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। মোট ৫১ জনকে চেক দিয়েছেন মমতা। বুধবার ১০ কোটি ৮৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। ৩১ জনকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যিনি চলে যান তিনি তো চলে যান। পরিবারের ভবিষ্যৎ শূন্য হয়ে যায়। কী করে সবাই চলবেন, এই বিষয়গুলি খুবই বেদনার হয়। আমাদের (রাজ্যে) মোট মৃত্যু হয়েছে ১০৩ জনের। ৮৬ জনের দেহ হওয়া গিয়েছে। ৮৬ জনকেই আমরা আর্থিক সাহায্য চাকরি দিয়েছি। যাঁরা অর্থব হয়ে গিয়েছেন তাদের তিনজকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত ১৭২। তাদেরও আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘১০৩ জনের মধ্যে ৮৬ জনের মৃতদেহ পেয়েছি। ৪০-৫০ জন নিখোঁজ রয়েছে। যআঁরা এখানে উপস্থিত আছেন মুখ্যসচিবকে বলব জেলাশাসকরা যেমন পরিবার থেকে যেমন খবর নিয়েছেন। কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ যেমন সমন্বয় রক্ষা করে কাজ করেছে। যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের খোঁজ নিন। কারও মা বাবা প্রয়াত হলে বাচ্চাদের পড়াশুনো বন্ধ হয়ে যাবে। সেইসব ছাত্রছাত্রীর বিনামূল্যে পড়াশুনোর করে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে।’’ ৬৩৫ জন আহতদের সাহায্য দওয়া হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিক ৭৯৯ জন। মানবিক কারণে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হল। ২ হাজার টাকা করেও আগামী ৩ মাস দেওয়া হবে। আগামী ৬ মাস প্রতি জেলায় ১ জন করে নোডাল অফিসার নিয়োগ রাখা হবে। যাঁরা এই সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজখবর রাখবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার অভিযোগ, কেন দুর্ঘটনা ঘটল? কেন এতজন মারা গেল? বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় রেল দুর্ঘটনা। সিবিআই কী করবে? কোনও ক্রিমিনাল কেস হলে তো সিবিআই করবে। পুলওয়ামা দেখেননি, তখনকার রাজ্যপাল কী বলে দিয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আজকেও ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আসল দুর্ঘটনার কোন ও তদন্ত হল না। সব সাফ হয়ে গেল। কোনও প্রমাণ নেই। আমি চাই প্রকৃত সত্য বাইরে আসুক।
তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘রেলে দুর্ঘটনার তদন্ত না করিয়ে সকাল থেকে পাঠিয়ে দিয়েছে দিল্লি। কলকাতায় এসে ১৪টা থেকে ১৬টা পুরসভায় এসে ঢুকে গিয়েছে। নগরোন্নয়নে ঢুকে গিয়েছে। এ বার কি বাথরুমেই ঢুকবে নাকি? ওটুকুই বাকি রয়েছে। এ সব করে এত বড় দুর্ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া যায় না। মিথ্যে কথা বলে আগুনকে ছাই বলে চালানো যায় না।’’
আরও পড়ুন – রাজ্যের বেশ কয়েকটি পুরসভায় সিবিআই হানা, সল্টলেকে পুর দফতরেও অভিযান তদন্তকারীদের
কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষতিপূরণের নীতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ দয়া করে দিচ্ছেন না। আমি রেলমন্ত্রী থাকার সময় ক্ষতিপূরণ দিতাম। আমি ১৫ লক্ষ করে দিতাম। আপনাদের দায়িত্ব এটা দেওয়া।’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘আমরা যা দিয়েছি তা বাড়তি দিয়েছি। আমরা এই সাহায্য করেছি, কারণ আমরা মানবিক। আপনারা আমার রাজ্যের মানুষ।’’মমতার কথায়, ‘‘শাস্তি হোক। যাঁরা এই ঘটনার জন্য দায়ি তাঁদের শাস্তি হয়। আত্মার আত্মীয়রা কাঁদছে। তাঁরা বিচার চাইছেন।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘রেলের দুর্ঘটনার তদন্ত এজেন্সিকে দিয়ে ধামাচাপা দিয়ে পুরসভার জল আর কল দেখতে গেলে মনে রাখবেন, আগামী দিনটা কিন্তু ভয়ঙ্কর।’’