পঞ্চায়েত ভোটের মুখে কি বদলে যেতে পারে রাজ্যের মুখ্যসচিব? এখনও পর্যন্ত যা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা, তাতে পঞ্চায়েত নির্বাচন ভোট ৮ জুলাই। কিন্তু তার আগে বদলে যেতে পারে রাজ্যের মুখ্যসচিব। বর্তমান মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে জুন মাসে। প্রশাসনিক মহলে সকলেই জানেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিবেদীর মেয়াদ বাড়াতে চান। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তাতে সিলমোহর দেবে কি না, যত জল্পনা তা নিয়েই।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দ্বিবেদীর মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি জানিয়ে আগেই কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে নবান্ন। আইএএস আধিকারিদকের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে কেন্দ্রের কর্মিবর্গ (পার্সোনেল) মন্ত্রক। সেই মন্ত্রক রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতেই। তবে অনেকেই বলেন, অনেক সময়েই ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন শাহ। সে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেই। একটি সূত্রের দাবি, সেই কারণেই দিল্লিতে শাহের সঙ্গে দ্বিবেদীকে নিয়ে আলোচনা করেছেন শুভেন্দু। তবে দ্বিবেদীর মেয়াদ বৃদ্ধিতে কেন্দ্রীয় সরকার সায় দেবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
রাজ্য প্রশাসনেরও একাংশের দাবি, পরবর্তী মুখ্যসচিব হবেন গোপালিকাই। শেষমুহূর্তে বড় কোনও ‘পরিবর্তন’ না হলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্যে নতুন মুখ্যসচিবের পাশাপাশি নতুন স্বরাষ্ট্রসচিবও আসতে চলেছেন। তবে পরবর্তী স্বরাষ্ট্রসচিব কাকে করা হবে, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও গুঞ্জন নেই। অনেকেই বলছেন, পরিস্থিতি সাপেক্ষে সেটিও মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করে রেখেছেন। কিন্তু তা প্রকাশ্যে আনেননি। কারণ, মমতা এখনও চান দ্বিবেদীর মেয়াদ বাড়ুক। তবে যদি নতুন মুখ্যসচিব হয়, তা হলে স্বরাষ্ট্রসচিব পদেও কাউকে আনতে হবে।
দ্বিবেদীও মুখ্যসচিব হওয়ার আগে স্বরাষ্ট্রসচিব পদে ছিলেন। ২০২১ সালের জুনে তাঁর জায়গায় আসেন গোপালিকা। তিনি আগে ছিলেন প্রাণিসম্পদ বিকাশ ও প্রশাসন কর্মিবর্গ দফতরের অতিরিক্ত সচিব। অতীতে পরিবহণ-সহ একাদিক দফতরের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের ৩১ মে অবসর নেওয়ার কথা গোপালিকার।
এর আগে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে নবান্নের আর্জি মেনে তিন মাসের জন্য কার্যকালের মেয়াদ বাড়িয়েছিল কেন্দ্র। তখন করোনা পরিস্থিতির কথা জানিয়ে মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। যদিও পরে কেন্দ্রের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে ইস্তফা দেন আলাপন। আপাতত তিনি মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা পদে কর্মরত।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে দিকে চলছে, তাতে এ বার কেন্দ্রীয় সরকার নবান্নের আর্জি মেনে নেবে কি না, তা নিয়ে অনেকেরেই সংশয় রয়েছে। কেন্দ্র যদি শেষ পর্যন্ত দ্বিবেদীর মেয়াদ না বাড়ায়, তা হলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে রদবদল অবশ্যম্ভাবী।
আরও পড়ুন – মনোনয়ন প্রত্যাহারে ‘চাপ’?জেলাশাসকদের চিঠি কমিশনের
যদি দিল্লি রাজি না হয়, তা হলে ১ জুলাইয়ের আগেই রাজ্যের নতুন মুখ্যসচিবের নাম ঘোষণা হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তী মুখ্যসচিব হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রসচিব বি পি গোপালিকা। সাধারণত স্বরাষ্ট্রসচিবই পদোন্নতি পেয়ে মুখ্যসচিব হন। গত বেশ কয়েক বছর ধরে সেটাই রীতি। একটি সূত্রের দাবি, এই নাম নিয়ে ‘আপত্তি’ নেই বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারেরও। কিন্তু দ্বিবেদীকে নিয়ে যথেষ্টই ‘আপত্তি’ রয়েছে বিজেপির। বিশেষত, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। দ্বিবেদীকে নিয়ে তাঁর ‘অসন্তোষ’-এর কথা শুভেন্দু খুব একটা গোপনও করেন না। অসমর্থিত সূত্রের দাবি, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর একান্ত বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও পক্ষই বিষয়টি স্বীকার করেনি।