হাতের জয় নয়, পদ্মের হারেই গুরুত্ব মমতার , কংগ্রেসের নাম না করেই কর্নাটকবাসীকে অভিনন্দন জানালেন মমতা, কর্নাটকে যাঁরা বিজেপিকে হারালেন, তাঁদের কুর্নিশ জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেই কন্নড় জনতা বিজেপিকে হারিয়ে যাদের জেতালেন, সেই কংগ্রেসের নামও নিলেন না তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। কর্নাটকের বিধানসভা ভোটে বড়সড় ব্যবধানে জিতছে কংগ্রেস। সেই ফলাফল স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেই টুইট করেন মমতা।
মমতা শনিবার বিকেলে বলেন, ‘‘আমি যেটা মনে করি অহঙ্কার, দুর্বিষহ ব্যবহার, এজেন্সি রাজনীতি, নৃশংসতার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে মানুষ। ভোট টু নো বিজেপি। কুর্নিশ জানাই কর্নাটকের মানুষদের। বিজয়ীদের। ছত্তিশগঢ়, মধ্যপ্রদেশ নির্বাচন আসছে। সেখানেও বিজেপি হারবে। শেষের শুরু।’’ কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা নিয়েও ফের কটাক্ষ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির জমানায় সকলে কেন্দ্রীয় সংস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন। বিভিন্ন বিষয়ে নিম্ন আদালত, হাই কোর্টের হস্তক্ষেপ বাড়ছে।’’ মমতা এও জানালেন, বাংলা যে পথ দেখিয়েছিল, সেই পথেই আজ কর্নাটকও। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি সকলকেই এ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। স্বার্থ চরিতার্থ করার রাজনীতি চলছে। বাংলা যে পথ দেখিয়েছে, বাংলা থেকে বেঙ্গালুরু আজ সেই পথেই।’’
২০২৪ লোকসভা ভোটকে নজরে রেখে বিরোধী ঐক্যের উপর জোর দিয়েছেন মমতা। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর থেকেই বিরোধী জোটের উপর গুরুত্ব দিতে শুরু করেছিলেন তিনি। দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি বিরোধী নেতাদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। তখন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও দেখা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু দিন যত এগোয়, কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে মমতার। সেই দূরত্ব লড়াইয়ে পর্যবসিত হয় গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে। গত বছর ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা জানান, ২০২৪ সালের লোকসভায় যে যেখানে ‘শক্তিশালী’, তাকে সেখানে জায়গা ছাড়তে হবে। ভোটের আগে নয়, ভোটের পরে বিজেপিকে সরাতে জোট হবে। মমতার ওই বক্তব্যে কংগ্রেস মনে করেছিল, রাহুল বা কংগ্রেসের নেতৃত্ব মেনে নিতে চাইছেন না মমতা।
কর্নাটকে কংগ্রেসের বিরাট জয়ের পর বিজেপি বিরোধিতায় ‘নেতৃত্ব’ দেওয়ার প্রশ্ন পরিস্থিতির যে খানিকটা পরিবর্তন হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। বিশেষত, চলতি বছরে আরও চারটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস যে খানিকটা এগিয়ে থেকে লড়াই শুরু করবে, তাতেও কোনও সন্দেহ নেই। সেই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের নাম না-করে মমতার শনিবারের টুইটটি আরও ‘তাৎপর্যবহ’।
My salutations to the people of Karnataka for their decisive mandate in favour of change!! Brute authoritarian and majoritarian politics is vanquished!! When people want plurality and democratic forces to win, no central design to dominate can repress their spontaneity : that is…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) May 13, 2023
টুইটারে মমতা লিখেছেন, ‘পরিবর্তনের পক্ষে যে জনাদেশ দিয়েছেন কর্নাটকবাসী, সেজন্য তাঁদের কুর্নিশ জানাই।’ তার পরেই তিনি নাম না করে একহাত নিয়েছেন বিজেপিকে। মমতা লিখেছেন, ‘নৃশংস স্বৈরাচার এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের রাজনীতি পরাজিত! যখন মানুষ বহুত্ববাদ এবং গণতান্ত্রিক শক্তির জয় চায়, তখন কোনও কেন্দ্রীয় শক্তি তাদের স্বতঃস্ফূর্ততাকে দমিয়ে রাখতে পারে না। এটাই গল্পের সারমর্ম।’ এই হার যে ‘আগামী দিনের জন্য শিক্ষা’, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা।
আরও পড়ুন – কর্নাটক জয়ের কৃতিত্ব রাহুলকে দিতে নারাজ অভিষেক?
মমতা যেমন তাঁর টুইটে কোথাও বিজেপির নামোল্লেখ করেননি, তেমনই জয়ী কংগ্রেসেরও নাম নেননি। জয়ীকে শুভেচ্ছা জানানোর পথেও হাঁটেননি। মমতার টুইট থেকে এটা স্পষ্ট যে, কংগ্রেসের জয়ের চেয়েও তিনি বিজেপির বিশাল পরাজয়কে বেশি গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন। ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর সরকারের মুখ্যমন্ত্রী কুর্নিশ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষকে। অর্থাৎ, কর্নাটকবাসীকে। লিখেছেন, পরিবর্তনের পক্ষে তাঁরা যে জনাদেশ দিয়েছেন, সে কারণে তাঁদের কুর্নিশ।