আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতি ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপে দিনহাটাতে। আবাস যোজনা নিয়ে দলের অন্তরে দুর্নীতি ঠেকাতে এবার কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করল দিনহাটায় তৃণমূল নেতৃত্ব। ঘর দেওয়ার নামে দুস্থ অসহায় গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলার অভিযোগে পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামীকে দল থেকে বহিষ্কার করলো তৃণমূল নেতৃত্ব। দিনহাটা দুই নম্বর ব্লকের নাজিরহাট এক গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যার স্বামী গোপাল মোদককে শুক্রবার দল থেকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন তৃণমূল নেতা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ।
এদিন দিনহাটা শহরের মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ স্মৃতি পাঠাগারে দলের দিনহাটা দুই ব্লক কমিটির বর্ধিত সভা হয়।বৈঠকে দলের দিনহাটা এক বি- ব্লক সভাপতি অনন্ত কুমার বর্মণ,দুই ব্লক সভাপতি দীপক কুমার ভট্টাচার্য , সহ-সভাপতি আব্দুল সাত্তার, তৃণমূল নেতা দীপক সেন, দিনহাটা দুই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বীরেন বর্মণ, বড়শাকদল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তাপস দাস, আজিজার রহমান থেকে শুরু করে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে আবাস যোজনা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনার পর দিনহাটা দুই ব্লকের নাজিরহাট এক গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যা বাবলি মোদকের স্বামী গোপাল চন্দ্র মোদক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত দিনহাটা দুই এবং দিনহাটা এক বি ব্লকের বিভিন্ন অঞ্চল নেতৃত্ব কে নিয়ে এই বৈঠক হয়। এই বৈঠকে তৃণমূল নেতা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ আবাস যোজনায় তালিকা নিয়ে নানাভাবে বিভিন্ন নেতৃত্বকে সতর্ক করেন।
আরও পড়ুন – কোন অস্থায়ী বনকর্মীকে স্থায়ী করা যাবে না, স্পষ্ট বার্তা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের
দলের নাজিরহাট অঞ্চল সভাপতি ধনঞ্জয় রায় সরকার জানান, আবাস যোজনা নিয়ে নানাভাবে সাধারন মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে পঞ্চায়েতের স্বামী গোপালের বিরুদ্ধে।
বহিষ্কৃত গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী গোপাল জানান, আমার স্ত্রী বাবলি মোদক গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। আমি দলের কোন পদে না থাকলেও তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে রয়েছি। কিভাবে তৃণমূলকে শক্তিশালী করা যায় সেই চেষ্টা করে এসেছি। এখন কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে দলকে নানাভাবে পুরনোদের সরিয়ে দিয়ে দলকে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। কবির সেই কথা মনে পড়ছে , ‘তুমি মহারাজ, সাধু হলে আজ আমি, আজ চোর বটে।’ তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে নানাভাবে যখন চেষ্টা করেছি তখন আমাকেই দলের একটি অংশ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দল থেকে বহিষ্কার করলো। তবে আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথেই রয়েছি
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, গোপাল মোদককে আবাস যোজনার ঘর নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে ইতিপূর্বে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ স্বীকারও করে নিয়েছেন। তারপরেই এ দিন তাকে বহিষ্কার করা হয়। ইতিপূর্বেই দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আবাস যোজনায় ব্লক থেকে অঞ্চল এমনকি বুক স্তরের কোন নেতাকর্মীর নাম থাকলে তারা বিডিও অফিসে গিয়ে সেই নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করবে। ইতিমধ্যে সেই কাজ শুরু হয়েছে।
দলের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলেছে সেই মতো আমরা ২০২৩ সালে নতুন করে তৃণমূলকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে চাই। সে কারণে আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের বারবার বলেছি কারো বিরুদ্ধে যাতে কোন দুর্নীতির অভিযোগ আমাদের কাছে না আসে। আবাস যোজনা ঘর নিয়ে আমাদের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। সেটা দলীয় স্তরে তদন্ত করে একটা জায়গায় আমরা পরিষ্কার হয়েছি। নাজিরহাট এক গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য বাবলি মোদকের স্বামী গোপাল মোদক কে আমরা ইতিপূর্বে সতর্ক করেছি। সে স্বীকারও করেছে। আজ তাকে ব্লক কমিটির বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতভাবে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আবাস যোজনা নিয়ে দলের কোন স্তরের নেতা কর্মী দুর্নীতিতে যাতে জড়িয়ে না পড়ে গোপাল মোদককে বহিষ্কারের মধ্য দিয়েও বার্তা দেওয়া হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিজেপির কোচবিহার জেলা কমিটির সদস্য জয়দীপ ঘোষ জানান, দুর্নীতিতে ডুবে গিয়েছে তৃণমূল সেটা সকলেরই জানা। আবাস যোজনা নিয়ে গ্রামের দুঃস্থ অসহায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা শুধু তোলাই নয় চাকরি চুরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম দুর্নীতির সাথে যুক্ত তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাকর্মী। সময় এলে এদেরকে আস্থাকুড়ে ফেলে দেবে সাধারণ মানুষ।