রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট বাজেয়াপ্ত করল ইডি, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে জোরকদমে তদন্তে নেমেছে ইডি। কিছুদিন আগেই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে হানা দিয়েছিলেন ইডির তদন্তকারী অফিসাররা। নিউ আলিপুরের লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
ইডির সিজ়ার লিস্ট বা পঞ্চনামা অনুযায়ী, সংস্থার ওই অফিসের তিনটি ডেস্কটপ কম্পিউটারের নথি খতিয়ে দেখে দু’টি কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কও বাজেয়াপ্ত করেছেন গোয়েন্দারা। এ ছাড়াও আরও অনেক নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের মধ্য কলকাতার একটি শাখায় রুজিরা নারুলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট। ওই একই ব্যাঙ্কে রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে থাকা এলাহাবাদ শাখার অ্যাকাউন্টেরও ১৪২ পাতার স্টেটমেন্ট বাজেয়াপ্ত করেছেন গোয়েন্দারা।
পঞ্চনামা অনুসারে, ওই সংস্থার ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন হিসাব নিকাশের নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে সংস্থার কর্মীদের প্রোফেশনাল ট্যাক্স সংক্রান্ত নথিও। এর পাশাপাশি, জানা গিয়েছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস তৈরি হওয়ার আগে ওই সংস্থার নাম ছিল অনিমেষ ট্রেড লিঙ্ক। সেই সংস্থা কিনে নেওয়া হয় এবং নাম দেওয়া হয় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস। সেই কেনা বেচা সংক্রান্ত নথিও বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি।
এছাড়াও বাজেয়াপ্ত নথির তালিকায় আছে, আলিপুর এবং বিষ্ণুপুরে নথিভুক্ত হওয়া বেশ কিছু জমির দলিল। সংস্থার বর্তমান এক ডিরেক্টরকে প্রাক্তন এক ডিরেক্টর বেশ কিছু স্থাবর সম্পত্তি দান করছেন সেই সংক্রান্ত দলিলও উদ্ধার হয়েছে ওই তল্লাশিতে। সংস্থার একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি এবং স্টেটমেন্টও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
ইডির দাবি, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র সংস্থার জন্ম থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টর পদে ছিলেন। এর পরেও ওই সংস্থার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন কালীঘাটের কাকু। সংস্থার সিওও পদে ছিলেন তিনি। ইডির দাবি, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার দফতরে বসেই নিজের ব্যবসা সামলাতেন সুজয় কৃষ্ণ। তাঁর নিজের সংস্থা এসডি কনসালটেন্সির আরও নথি মিলেছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে। ওই এসডি কনসালটেন্সির সঙ্গে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত নথির সূত্র ধরেই তল্লাশি চালায় ইডি।
তল্লাশির তিনদিন পরেই ইডি আধিকারিকদের নামে কলকাতা পুলিশের সাইবার থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন সংস্থার কর্মী চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি ওই তল্লাশির সময় উপস্থিত ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, যে সময় ইডি আধিকারিকদের নিয়ন্ত্রণে দফতরের কম্পিউটার গুলি ছিল, সেই সময় ১৬ টি ফাইল ডাউনলোড করা হয়। সেই ফাইলগুলি কোনওভাবে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সঙ্গে সংযুক্ত নয়।
কলকাতা পুলিশ সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। অন্যদিকে ওই বাজেয়াপ্ত দুটি হার্ড ডিস্ক এবং মোবাইল থেকে তথ্য উদ্ধারের জন্য সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরটরির বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিচ্ছে ইডি। তল্লাশির সময় ইডি আধিকারিকরা ছাড়াও সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দুই আধিকারিক। বয়ান রেকর্ড করার জন্য ইডি ইতিমধ্যেই তলব করেছে চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
আরও পড়ুন – সন্তান জন্মের পর পরই তরুণীর মৃত্যু, চিকিৎসককে টিকতে দিচ্ছে না পরিবার,পুলিশকে দেখার…
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুর থেকে উদ্ধার নথির ভিত্তিতে ২১ অগস্ট বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে পরের দিন ভোর রাত পর্যন্ত প্রায় ১৮ ঘণ্টা নিউ আলিপুরের পি ব্লকে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে তল্লাশি চালান ইডির গোয়েন্দারা।