নিজস্ব সংবাদদাতা,কলকাতা :-পিতৃপক্ষের অবসানে মহালয়ার আগমন , আর বাঙালি মনে পুজোর কাউন্ট ডাউন শুরু। এভাবেই ১৭ই সেপ্টেম্বর বীরেন বাবুর গলা শুনতে শুনতে চোখ খুলেছিলো আপামর বাঙালি। উপরি পাওনা বিশ্বকর্মা পুজোটাও একই দিনে। নয় নয় করেও বিশ্বকর্মা পুজোর সংখ্যা টা নেহাত কম নয় এবছরেও। রোদবৃষ্টির আমেজে শুরু হওয়া দিনটার শেষ টা যে এভাবে ফ্যাকাসে হয়ে যাবে কেউ কল্পনাও করে নি বোধহয়। কপাল জোড়া বড় টিপ্ আর ঠোঁট জোড়া হাসি থমকে গেলো হঠাৎ করেই। খবরে প্রকাশ সবাই কে ছেড়ে চলে গেছেন ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্ত।
মকবুল ফিদা হুসেন থেকে সচিন তেন্ডুলকর, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় থেকে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত – শর্বরী দত্তের শিল্পী সত্তার সৃজনশীলতায় সামিল হেভিওয়েট ব্যক্তিত্ব রা। অভিষেক-ঐশ্বর্য্য থেকে কোয়েল-নিসপাল বা সৃজিত মিথিলা- বিগ ওয়েডিং মানেই একটাই গন্তব্য ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্ত, এমন মন্তব্যই শোনা যেত ফ্যাশন দুনিয়ার আনাচে কানাচে। কিন্তু সেসব এখন অতীত। “শর্বরীদি ফ্যাশন দুনিয়ায় আমার আইকন” বলছেন অগ্নিমিত্রা পল, শর্বরী দত্তের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা প্রায় বছর পঁচিশের। চোখের নীচে ঘন কাজল, উজ্জ্বল রং আর অ্যান্টিক গয়না এই তিন কম্বিনেশন এক হলেই চোখের সামনে ঝলমল করে শিল্পী শর্বরী দত্তের নাম। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের বরের পাঞ্জাবি বা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের পুজো কালেকশন সবকিছুতেই তাঁর নাম। স্বভাব আর সাজ, দুই দিয়ে তিনি ইন্ডাস্ট্রির মন জয় করেছিলেন। শহর নিয়ে কাজ করতে ইদানিং বেশ আগ্রহী হয়ে ছিলেন তিনি। কলকাতা, বারাণসী, আর রোম এই তিন শহরের ফ্যাব্রিক আর ক্রাফটকে মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন পোশাকের অবয়বে । কিন্তু তা আর হলো না।
সেলেবদের মন ভারাক্রান্ত , শোকস্তব্ধ তারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় তাঁর প্রিয় শর্বরীদিকে ‘গুড বাই’ জানিয়েছেন মনখারাপ নিয়ে।সুদীপ্তা চক্রবর্তী ফেসবুকের ওয়ালে লিখেছেন ,“ওঁর পোশাক পরার সৌভাগ্য হয়েছে দু’-এক বার। তবে গল্প করার, আড্ডা মারার সুযোগ হয়েছে অনেক বেশি।কি অসম্ভব হাসিখুশি, ওয়ার্ম, ওয়েলকামিং ছিলেন মানুষটা। বিবাহিত জীবন, ঘর সংসার থেকে ফ্যাশন হয়ে সিনেমা, থিয়েটার… সব কিছু নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়েছি বহুবার।বিশ্বাস হচ্ছে না শর্বরীদি আর নেই।” পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করেছেন এই প্রজন্মের শ্রাবন্তী, রুক্মিণী, রাজ চক্রবর্তীরা। তাঁর চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না পরিচালক অরিন্দম শীল, বলছেন কলকাতার গর্ব ছিলেন শর্বরীদি। এবার কাছের মানুষকে হারালাম। সাধারণ মানুষ থেকে মডেল, অভিনেতা, অভিনেত্রীরা কেউই মানতে পারছেন না যে শেষমেষ বাড়ির শৌচাগার থেকে উদ্ধার ফ্যাশন জগতের অন্যতম আইকন শর্বরী দত্তের মৃতদেহ! মৃত্যু নিয়ে উঠছে অস্বাভিকতার প্রশ্ন, সঙ্গে রয়েছে আক্ষেপ আর হতাশা। তবে টলি থেকে বলি, সত্যিই আজ বেরঙিন এই ফ্যাশন দুনিয়া।