যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন মোট ১২ জন, নবাগতেরাও ‘তথ্য’ জোগাচ্ছেন পুলিশকে, সকাল থেকে চলছিল জিজ্ঞাসাবাদ। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার রাতে যাদবপুরকাণ্ডে গ্রেফতার করা হল আরও তিন ছাত্রকে। এখনও পর্যন্ত যাদবপুরের হস্টেলে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন মোট ১২ জন। অভিযুক্তদের পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদেরও। তদন্তকারীদের দাবি, ওই পড়ুয়াদের বয়ানেই জানা গিয়েছে, হস্টেলে নতুন ভর্তি হলে কেমন ব্যবহার করা হত তাঁদের সঙ্গে। মৃত ছাত্রের সঙ্গেও এ রকম কিছু হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ৯ অগস্ট রাতে পড়ে যাওয়ার পর যখন মৃতপ্রায় ওই ছাত্রকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোরজোড় চলছিল, তখন হস্টেলে ‘জরুরি বৈঠক’ বসানো হয়েছিল। তার ‘হোতা’ ছিলেন অন্যতম অভিযুক্ত সৌরভ চৌধুরী (বর্তমানে তিনি গ্রেফতার হয়ে পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন)। পুলিশকে কী বলতে হবে, তা-ই মূলত ছিল আলোচ্য বিষয়। যদিও ধরা পড়ার পর ক্রমেই অভিযুক্তদের বয়ানে মিলেছে একাধিক অসঙ্গতি। বিপাকে পড়ে একে অন্যের দিকে আঙুল তুলতেও ছাড়েননি তাঁরা। এমনটাই জানা গিয়েছে তদন্তকারীদ্র সূত্রে।
ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে ন’জনকে। তাঁদের গ্রেফতার করার পরেও পুলিশের নজরে ছিলেন হস্টেলের আরও কয়েক জন আবাসিক। তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তনীরাও। শুক্রবার সকাল থেকে তিন পড়ুয়াকে যাদবপুর থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিল পুলিশ। শেষ পর্যন্ত তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃতেরা হলেন শেখ নাসিম আখতার, সত্যব্রত রায় এবং হিমাংশু কর্মকার। অভিযুক্তদের পাশাপাশি প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তাঁদের বয়ানেই জানা গিয়েছে, হস্টেলের অন্দরে নতুন পড়ুয়াদের সঙ্গে কী ঘটত। প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, শৌচালয় থেকে ঘর— সবই পরিষ্কার করতে হত তাঁদের। সিনিয়রদের অনুমতি ছাড়া বাড়িতে ফোন করা বারণ ছিল। এমনকি, বাড়িতে যখন ফোন করেন নবাগতেরা, তখন সেখানে উপস্থিত থাকেন সিনিয়রেরা। মৃত ছাত্রের সঙ্গেও কি এমন আচরণই করা হয়েছিল? খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এ সবের পাশাপাশি, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই কাণ্ডে ধৃত ন’জনকেও ক্রমাগত জেরা করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার ভাবনা রয়েছে পুলিশের। আর এই জেরার চাপেই একের পর এক ‘তথ্য’ ফাঁস করে চলেছেন ধৃতেরা, এমনটাই জানা গিয়েছে তদন্তকারীদের একাংশের সূত্রে। নিজেদের বাঁচাতে একে অপরের দিকে আঙুল তুলছেন তাঁরা। এ রকম পরিস্থিতি হতে পারে ধরে নিয়েই কি ৯ অগস্ট রাতে ‘জরুরি বৈঠক’ ডাকা হয়েছিল হস্টেলের অন্দরে? ওই হস্টেলের এক আবাসিক ছাত্রকে জেরা করে তেমনটাই জানা গিয়েছে বলে তদন্তকারীদের একাংশের দাবি। ওই আবাসিক পড়ুয়া জেরায় জানিয়েছেন, পড়ে যাওয়ার পর মৃতপ্রায় ছাত্রকে নিয়ে যখন হাসপাতালে যাওয়ার তোরজোড় চলছিল, তখন হস্টেলে ‘জরুরি বৈঠক’ করেন অভিযুক্ত সৌরভ। যিনি ‘মহাপাকা’ নামেই পরিচিত হস্টেলে। ওই আবাসিকের বয়ানেই জানা গিয়েছে, পুলিশকে কী বলতে হবে, তা নিয়েই আলোচনা হয়েছিল। সকলের বয়ান যাতে একই রকম থাকে, তারও ‘পাঠ’ দিয়েছিলেন সৌরভ। বৃষ্টির কারণে খোলা জায়গার সেই বৈঠক ভেস্তে যায়। পরে ফের বৈঠক বসানো হয় হস্টেলের অন্দরে। যদিও পুলিশি জেরায় সেই ‘পাঠ’ ধোপে টেকেনি। উল্টে ধৃতেরা একে অপরের দিকে আঙুল তুলেছেন। দোষারোপ করেছেন।
আরও পড়ুন – যাদবপুর কাণ্ডে সরব শ্রীলেখা, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই প্রসঙ্গে ঠিক কী লিখেন শ্রীলেখা?
এ সবের মধ্যেই শুক্রবার যাদবপুরকাণ্ডে মৃত ছাত্রের পরিজনজদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মৃত ছাত্রের মামাবাড়িতে গিয়ে তাঁর মা-বাবা এবং মামাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তৃণমূল যদিও দাবি করেছে, এই সফর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।