এবার থেকে গাড়ির কর আদায়ের ক্ষেত্রে অভিনব পন্থা নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, নতুন গাড়ি কিনলে এরপর একেবারে ১৫ বছরের রোড ট্যাক্স বাধ্যতামূলক করতে চলেছে নবান্ন। অর্থাৎ, ৫ বছরের কর দিলেই এখন থেকে আর নতুন গাড়ি বাড়ির গ্যারাজ পর্যন্ত আনা যাবে না। গ্রাহককে এবার থেকে গুনতে হবে ১৫ বছরের কর। ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে যেমন এই নিয়ম চালু হচ্ছে, তেমনই বাণিজ্যিক যানের জন্যও বিধি বদল করছে রাজ্য। অটো রিকশ, ট্র্যাক্টর, মিনি ট্রাক, মিনি ভ্যান ইত্যাদি ছোট বাণিজ্যিক যান কেনার সময় এখন মাত্র তিন মাসের কর দিতে হয়। এটাই ন্যূনতম পাঁচ বছর করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে নবান্নের। এছাড়া বড় গাড়ির ক্ষেত্রেও রোড ট্যাক্সের নিয়মে বদল আসছে।
আরও পড়ুনঃ এশিয়ান গেমসে ফের সোনা জিতল ভারত, এবার রাইফেলে
গাড়ির ক্ষেত্রে বাজার-চলতি একটা কথা আছে—ট্যাক্স ফেল। অর্থাৎ, গাড়িটি মোটর ভেহিকেলসের কর সময় মতো দেয়নি। আর এটাই এখন মাথাব্যথার কারণ রাজ্য সরকারের। কারণ, ১৫ বছর আয়ুর দোরগোড়ায় আসা গাড়ির বকেয়া কর বা রোড ট্যাক্সের পরিমাণ পৌঁছেছে আড়াই হাজার কোটি টাকায়। এখানেই শেষ নয়, কর না মেটানোর জন্য অনাদায়ী জরিমানার পরিমাণও দাঁড়িয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ, যে সংখ্যক গাড়ি এই মুহূর্তে ‘স্ক্র্যাপ’ বা বাতিল করতে হবে, সেগুলির থেকে রাজ্য সরকারের প্রাপ্য ৫ হাজার কোটি টাকা। ক্যাগের রিপোর্ট বলছে, গাড়ির রোড ট্যাক্স বকেয়া থাকার জন্য প্রতি বছর বাংলার ক্ষতি হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। লাগাতার কেন্দ্রীয় বঞ্চনা এবং প্রত্যাশা ছুঁতে না পারা রাজকোষের জন্য এই সমস্যা বিপুল।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি মোটর ভেহিকলসের কসবা অফিসের একটি ঘটনা সামনে এসেছে। কোটি টাকার বিলাসবহুল গাড়ি, বিভিন্ন ফিচার, অথচ কর বাকি লক্ষ লক্ষ টাকার। আর এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বহু ব্যাক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে এই প্রবণতা গত কয়েক বছরে অত্যন্ত বেশি। একই পরিস্থিতি ছোট বাণিজ্যিক যানবাহনের ক্ষেত্রেও। কেনার সময় প্রথম তিন মাসের রোড ট্যাক্স। তারপর সরকারের ভাঁড়ারে আর কিছু আসে না বললেই চলে। অন্তত ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ফাঁকি ধরা পড়েছে। এতে যেমন রাজ্যের রাজস্ব ক্ষতি হয় ঠিক তেমই বাড়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও। কর না দিয়ে, গ্রামেগঞ্জে ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই বহাল তবিয়েতে চলে হাজার হাজার গাড়ি। বেশ কয়েক বছরের কর প্রথম দফাতেই জমা নিলে এমন ঝুঁকি থাকবে না। কমবে ট্যাক্স ফাঁকির প্রবণতাও। এই পদক্ষেপে নতুন গাড়ির দাম যে অনেকটাই বাড়বে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তবে নতুন করকাঠামোয় ছাড়ও অনেকটা দেবে রাজ্য সরকার।
আধিকারিক সূত্রে খবর, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে লাভবান হবেন ক্রেতা। বর্তমান নিয়মেও ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার সময় একসঙ্গে ১৫ বছরের কর মেটানোর ব্যবস্থা রয়েছে। তবে তা বাধ্যতামূলক না হওয়ায় হাতেগোনা ক্রেতাই একসঙ্গে সম্পূর্ণ কর মিটিয়ে থাকেন। নতুন নিয়মে ১৫ বছরে যে পরিমাণ কর একটি গাড়ির জন্য দিতে হয়, একলপ্তে মেটালে তা অনেকটাই কমবে। এক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ টাকা দিলেই মিলবে লাইফটাইম ট্যাক্সের শংসাপত্র। ইতিমধ্যে নয়া এই করকাঠামো নিয়ে অর্থদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকদের। ফাইলও পৌঁছেছে অর্থদপ্তরে। ফলে নবান্নের শীর্ষ মহলের ছাড়পত্র মিললেই চালু হয়ে যাবে এই নিয়ম।