গত ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে বসেছিল জি-২০ আসর। মাত্র দু’দিনের জন্য রাজধানীতে পা রেখেছিলেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা। সেজন্য তাক লাগানো সাজসজ্জা, এলাহি আয়োজন হয়েছিল দিল্লিতে। আর এবার সেই জি-২০ সম্মেলন নিয়ে দেশের অন্দরে প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার। সবমিলিয়ে জি-২০ সম্মেলনের আয়োজনে খরচ পড়েছে ৪১০০ কোটি টাকা, যা জি-২০ সম্মেলন আয়োজনকারী অন্য দেশের তুলনায় ঢের বেশি। তাই কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছেন বিরোধীরা।
এবারের জি-২০ সম্মেলন আগাগোড়াই খবরের শিরোনামে থেকেছে। প্রথমে সম্মেলন থেকে নাম তুলে নেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ভারতের সঙ্গে বরাবর সুসম্পর্ক রাশিয়ার। সীমান্ত সংঘাত নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে সরে দাঁড়ান চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংও। সেই নিয়ে কূটনৈতিক মহল চুলচেরা বিশ্লেষমে নেমে পড়লেও, আয়োজনে খামতি পড়েনি কোথাও।
আরও পড়ুন: চার ঘন্টা পার, এখনও ইডি দপ্তরে অভিনেত্রী নুসরত জাহান
কিন্তু জি-২০ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সরকার যে টাকা খরচ করেছে, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জানা গিয়েছে, এ বছর জি-২০ সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে ভারতের তরফে মোট ৪১০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। দু’দিনের সম্মেলনের জন্য এই বিপুল পরিমাণ টাকা কেন খরচ করা হল, এই সম্মেলন থেকে ভারত আদৌ কি লাভবান হবে, উঠছে প্রশ্ন।
শুধু তাই নয়, এর আগে যত দেশ জি-২০ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন, কেউই এত খরচ করেনি। গত বছর ইন্দোনেশিয়ায় জি-২০ সম্মেলনের আয়োজন হয়, তাতে খরচ পড়ে ৩৬৪ কোটি টাকা। অতিমারির আগে ২০১৯ সালে জাপান জি-২০ সম্মেলনের আয়োজন করে। তারা খরচ করেছিল ২৬৬০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনা ৯৩১ কোটি এবং জার্মানি ২০১৭ সালে ৬৪২ কোটি টাকা খরচ করেছিল। তাই ভারতের খরচের বহর ৪১০০ কোটি ছুঁল কী করে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন বিরোধীরা।
তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভা সাংসদ সাকেত গোখলে শুরুতেই এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ট্যুইটারে তিনি লেখেন, ‘জি-২০ নিয়েও মোদি সরকার তথ্য ধামাচাপা দিতে শুরু করেছে। জি-২০ সম্মেলনের বাজেট ছিল ৯০০ টাকা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখে যে হিসেব দিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাতে ৪১০০ কোটির হিসেব মিলেছে। রাজীব চন্দ্রশেখরকে জবাব দিতে হবে, মন্ত্রী কি মিথ্যে বলছিলেন? এখন কি ভয় পেয়ে ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে’?
কিন্তু জি-২০ সম্মেলনের আয়োজক অন্য দেশগুলির এত খরচ পড়ল না কেন, প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। নির্ধারিত বরাদ্দের চেয়ে ৩০০ শতাংশ বেশি, অতিরিক্ত ৩১১০ কোটি টাকা কেন খরচ হল, কোথায় গেল এই বিপুল পরিমাণ টাকা প্রশ্ন তুলেছেন সাকেত। যদি অপ্রোজনে ওই টাকা খরচ করা হয়ে থাকে, ২০২৪-এর আগে মোদির প্রচারের জন্য, তাহলে বিজেপি-র কাছ থেকে কেন ওই ৩১১০ কোটি টাকা আদায় করা হবে না, প্রশ্ন তোলেন তিনি।
কংগ্রেসের কেসি বেণুগোপাল বলেন, “জি-২০ সম্মেলনের জন্য ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। বিজেপি সরকার ৪১০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। অতিমারির পর বিশ্বের অন্য দেশের সরকার খরচ-খরচায় রাশ টেনেছে…এই সরকার সস্তায় রান্নার গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেল দিতে পারে না, ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ দেয় না কৃষকদের, বন্যাবিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশকে টাকা দেয় না, কিন্তু নিজেদের ভাবমূর্তি গড়তে ১০ গুণ বেশি টাকা খরচ করে। যত সৌন্দর্যায়নই হোক না কেন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থা লুকনো যাবে না।”
কেন্দ্রের তরফে যদিও অপ্রয়োজনীয় খরচ, টাকার অপব্যবহারের অভিযোগ খণ্ডন করা হয়েছে। সাকেতের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট বিভ্রান্তমূলক বলে দাবি করেছে PIB. সোশ্যাল মিডিয়ায় পাল্টা পোস্টে PIB জানায়, বাজেটের চেয়ে ৩০০ শতাংশ বেশি খরচের দাবি বিভ্রান্তমূলক। শুধুমাত্র জি-২০ সম্মেলনের সাজসজ্জা বা আয়োজনেই এই টাকা খরচ হয়নি, ITPO প্রগতি ময়দানে স্থায়ী সম্পদও গড়ে তুলেছে, পরিকাঠামো খাতেও খরচ হয়েছে। স্থায়ী সম্পদ বলেত প্রগতি ময়দানের উল্লেখ থাকলেও, কী সম্পদ তৈরি করা হয়েছে, তার বিশদ খতিয়ান মেলেনি। শুধু সম্মেলনের আয়োজনে খরচ হয়নি বলে জানানো হলেও, ৪১০০ কোটি খরচের অভিযোগ যদিও খারিজ করেনি কেন্দ্র।
জি-২০ সম্মেলনের খরচ-খরচার হিসেব দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি জানিয়েছিলেন, দিল্লির সৌন্দর্যায়নেই ৭০০ কোটি টাকা খরচ হয়, যার মধ্যে রাস্তা, ফুটপাথ, সিগমনাল এবং আলোর রক্ষণাবেক্ষণও ছিল। উদ্যানের উন্নয়ন থেকে জি-২০ সম্মেলনের ব্র্যান্ডিংও শামিল ছিল তাতে। গত বছর জি-২০ সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই শুরি হয়ে যায় প্রস্তুতি। সব মিলিয়েই এই খরচ বলে জানানো হয়।