বলিউড অভিনেতা গোবিন্দার নাম জড়ালো চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে। অভিনেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানালো ওড়িশা ইকোনমিক অফেন্স উইং। ভারত জুড়ে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রতারণা! শুধু ভারতেই নয়, দেশের বাইরেও নিজেদের জাল বিস্তার করছিল এই চিটফান্ড চক্র।
আরও পড়ুনঃ বিরোধী জোটের সমর্থনে হাকিম কন্যার মেয়ের হোডিংয়ে নেই অভিষেকের ছবি
তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, সোলার টেকনো অ্যালায়েন্স নামে একটি সংস্থা ভারত এবং দেশের বাইরেও অন্যান্য দেশে অনলাইনে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের টোপ দিয়ে রীতিমতো পিরামিডের আকারে পনজি স্ক্যামের জাল ছড়িয়ে দিয়েছিল। সূত্রের খবর, এই চিটফান্ড সংস্থার হয়ে ভিডিও বার্তা মারফত প্রচার চালিয়েছিলেন গোবিন্দা।
ভুবনেশ্বর ইকোনমিক অফেন্স উইংয়ের ডিএসপি সস্মিতা সাহু জানিয়েছেন, সোলার টেকনো অ্যালায়েন্স নামে ভদ্রকের ওই চিটফান্ড সংস্থাটি এসটিএ টোকের নামে নিজস্ব টোকেন চালু করেছে। তার প্রচারও করা হয়েছে দেশ-বিদেশে। মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং স্কিম হিসেবে সংস্থাটি কর্মীদের দিয়ে দ্রুত বিপুল অঙ্কের লাভের লোভ দেখিয়ে আরও বেশি সদস্যদের যোগদান করাত। সেই সদস্যরা একইভাবে চেন-সিস্টেমে আরও বেশি লোকজনকে যোগদান করাতেন। এইভাবেই পিরামিডের চূড়ায় বসে প্রতারণার নেতৃত্ব দিতেন সংস্থার এক বা কয়েকজন শীর্ষ কর্তা। আর ভূমিস্তরে ক্রমশ চওড়া হত প্রতারিত এবং হয়তো না জেনেই জালিয়াতিতে অংশ নেওয়া সদস্যের সংখ্যা।
এই ঘটনায় শুরু থেকেই তদন্ত করছিল ভুবনেশ্বরের ইকোনমিক অফেন্স উইং। তাতেই জানা যায়, ওড়িশায় এই জালিয়াতির অন্যতম কান্ডারি হলেন ভদ্রকের বাসিন্দা নিরোধ কুমার দাস নামে এক ব্যক্তি। নিরন্তর প্রচার চালিয়ে তিনি কোম্পানিতে ৬০০০ এরও বেশি সদস্যদের যুক্ত করেছিলেন। দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় সংস্থার হয়ে প্রচার করতেন তিনি।
নিরোধ কুমার দাস ওড়িশা শাখার প্রধান হলেও সারা দেশে এই প্রতারণা চক্রের মাথা ছিল গুরতেজ সিং সিধু নামে এক ব্যক্তি। নিরোধ এবং গুরতেজ দুজনকে গত ৭ অগস্ট গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৬ অগস্ট গ্রেফতার করা হয় রত্নাকর পালাই নামে কোম্পানির একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পিরামিডের উপরের দিককার সদস্যকে। তার অধীনে হাজার হাজার সদস্য যোগদান করেছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
এই কেলেঙ্কারিতে ডেভিড গেজ নামে হাঙ্গেরির এক বাসিন্দার পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসের একজন জড়িত থাকার খবর পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ৩২ বছরের ডেভিডের বিরুদ্ধে ইতি মধ্যেই লুকআউট সার্কুলার জারি করেছে অভিবাসন ব্যুরো। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তারা মানুষকে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করার জন্য প্ররোচিত করত বলে জানা গেছে। অভিযুক্তরা বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, দিল্লি, ঝাড়খণ্ড সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
তাঁরা আরও জানতে পারেন, গত ৩০ জুলাই গোয়ায় তাদের একটি ইভেন্টে প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির হয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা গোবিন্দা। তিনি সংস্থার হয়ে প্রচারও করেছিলেন।
তদন্তের অগ্রগতির জন্য সেই ইভেন্টে যাঁরা যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। সেই কারণেই জেরা করা হবে গোবিন্দাকে। সংস্থার প্রতারণার ব্যাপারে তিনি অবগত ছিলেন কিনা, সে ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই পনজি স্কিমের বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে চাইছেন তাঁরা।