তাপপ্রবাহের সতর্কতা , বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত সতর্ক থাকতে বলল আবহাওয়া দফতর , তাপে পুড়তে থাকা রাজ্যে আপাতত স্বস্তির কোন অবকাশ নেই বলে জানিয়ে দিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। বরং আগামী কয়েকটা দিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আগামী ৫দিন দাবদাহ চলতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহবিদেরা। একই সঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন, দাবদাহ থেকে বাঁচতে হলে আগামী ৫ দিন রাজ্যবাসীকে কী কী করতে হবে।
সোমবার রাজ্যের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছুঁয়েছিল ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (পুরুলিয়া)। এর পর বিকেলে আবহাওয়া দফতরের তরফে প্রকাশ করা হয়েছে একটি বিশেষ বুলেটিন। তাতে জানা যাচ্ছে সোমবার অর্থাৎ ৫ জুন থেকে আগামী শনিবার, ১০ জুন পর্যন্ত দাবদাহ চলবে উত্তর এবং দক্ষিণ বঙ্গের অধিকাংশ জেলায়। একই সঙ্গে ওই বুলেটিনে বলা হয়েছে আগামী ৫ দিনে রাজ্যের তাপমাত্রা ৩-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। এমনকি, এই ৫ দিন রাজ্যজুড়ে শুষ্ক গরম হাওয়া বইবে বলেও সতর্ক করেছে আবহাওয়া দফতর।
সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত এই বুলেটিনে তাই সপ্তাহান্ত পর্যন্ত রাজ্যবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। জারি করা হয়েছে বিশেষ নির্দেশিকা।
কী কী সমস্যা হতে পারে?
১। তীব্র তাপমাত্রা
২। সাধারণ মানুষ এই তাপ সহ্য করতে পারলেও যাঁদের শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে বা যাঁরা গরম সহ্য করতে পারেন না, তাঁদের সমস্যা হতে পারে।
৩। শিশু, বয়স্ক মানুষ, যাঁদের দীর্ঘকালীন রোগভোগ রয়েছে, যাঁরা দীর্ঘ ক্ষণ রোদে থেকে ভারী কাজ করেন, তাঁরা আক্রান্ত হতে পারেন।
৪। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বাইরে বা রোদে থাকলে গরম থেকে শরীরে ব্যথা, এমনকি, গায়ে র্যাশও বেরোতে পারে।
কী ভাবে সাবধান হবেন?
১। দীর্ঘ ক্ষণ রোদে থাকা যাবে না
২। হালকা কাপড়ের, হালকা রঙের ঢিলেঢালা সুতির জামা পড়তে হবে।
৩। বাইরে বেরোলে কাপড়, টুপি অথবা ছাতা দিয়ে মাথা ঢাকুন।
৪। তেষ্টা না পেলেও প্রচুর জল খেতে হবে।
৫। ওআরএস বা বাড়িতে তৈরি পানীয়— লস্যি, তোরানি, লেবু জল, ঘোল খাওয়া যেতে পারে।
৬। সরাসরি রোদে না থাকার চেষ্টা করা।
৭। ভারী কাজ দুপুরের দিকে, চড়া রোদে না করে দিনের যে সময়ে কম তাপমাত্রা রয়েছে, সেই সময়ে করা।
৮। বাইরে কাজ করলে বিশ্রামের সময় বৃদ্ধি করা। প্রয়োজনে কিছু ক্ষণ অন্তর অন্তর সামান্য বিশ্রাম নেওয়া।
৯। অন্তঃসত্ত্বা শ্রমিকদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার ব্যবস্থা করা
১০। হিট স্ট্রোক, হিট ক্র্যাম্প বা হিট র্যাশের লক্ষ্মণ বুঝতে হবে। সাধারণত, এই সময় দুর্বলবোধ হতে পারে, মাথা ঘুরতে পারে, মাথায় যন্ত্রণা হতে পারে, প্রবল ঘাম, গা-বমি ভাব, এমনকি, ফিট হওয়ার মতো লক্ষ্মণ দেখা দিলে নিকটবর্তী হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্রে যোগাযোগ করা।
আপাতত সোমবার পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং দুই দিনাজপুরের কিছু কিছু জায়গায় তাপপ্রবাহ চলতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর। মঙ্গলবার তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং দুই দিনাজপুরে। ৭ জুন অর্থাৎ বুধবার থেকে ১০ জুন অর্থাৎ শনিবার পর্যন্ত তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে এই সমস্ত জেলার সঙ্গে হাওড়া এবং হুগলিতেও। তবে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বাকি জেলাগুলিতে তাপপ্রবাহের সতর্কতা না থাকলেও অস্বস্তিকর আর্দ্র আবহাওয়া এবং গরম থাকবে।
আরও পড়ুন – রেল দুর্ঘটনার তদন্তভার সিবিআই-কে কেন? প্রশ্ন তুললেন মমতা
এই সমস্ত জেলার মধ্যে তাপপ্রবাহের সতর্কতা নেই কলকাতায়। এমনকি, বুধ এবং বৃহস্পতিবার কলকাতায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। তবে সেই বৃষ্টি হলেও স্বস্তি ফিরবে না কলকাতায়। আবহবিদেরা জানিয়েছেন, বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা কমবে না শহরে। সোমবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই তাপমাত্রা আগামী দিনে আরও দু’-এক ডিগ্রি বাড়তে পারে।