কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর,মমতাকে পাশে নিয়ে হুঙ্কার কেজরীবালের ,রাজ্যসভায় যদি কেন্দ্রের জারি করা অধ্যাদেশ খারিজ হয়ে যায়, তাহলে সেটাই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল হয়ে যাবে। মঙ্গলবার (২৩ মে), কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর, তৃণমূল নেত্রীকে পাশে নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্যে রীতিমতো হুঙ্কার ছাড়লেন অরবিন্দ কেজরীবাল। গত শুক্রবার একটি নয়া অধ্যাদেশ জারি করে দিল্লির যাবতীয় সরকারি অফিসারদের নিয়োগ এবং বদলির ক্ষমতা, দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে তুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই অধ্যাদেশ রাজ্যসভায় যাতে খারিজ হয়ে যায়, তার জন্য সকল বিরোধীদের সমর্থন চাইছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। সেই সমর্থন আদায় করতেই এদিন কলকাতায় এসে তৃণমূল সুপ্রিমোর সঙ্গে বৈঠক করলেন কেজরীবাল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই অধ্যাদেশ খারিজ করার বিষয়ে আপ-কে রাজ্যসভায় সমর্থন জানাবে তৃণমূল কংগ্রেস। এই জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন কেজরীবাল।
এদিন কেজরীবালের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করতে এসেছিলেন পঞ্জাবের আপ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান-ও। তিনি জানান, তাঁর রাজ্যে বাজেট পেশ করতেও বাধা গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। শেষে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বাজেট পেশ করতে হয়। তিনি আরও জানান, তামিলনাড়ু, কেরলের মুখ্যমন্ত্রীরাও চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তাদের সরকারের বিভিন্ন বিল রাজ্যপালের কাছে পড়ে রয়েছে। রাজ্যপাল স্বাক্ষর না করায় সেগুলি পাস করা যাচ্ছে না। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যদি কেন্দ্রের রাজ্যপালদের দিয়েই রাজ্য প্রশাসনগুলি পরিচালনা করতে হয়, তাহলে বিধানসভা ভোট করার কী দরকার?”
এদিন অরবিন্দ কেজরীবাল বলেন, গণতন্ত্রকে তামাশায় পরিণত করেছ বিজেপি। তিনি দাবি করেন, তিনটি পদ্ধতিতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে চলেছে বিজেপি। কেজরীবাল বলেন, “প্রথমত, যেখানে বিজেপি সরকার গঠন করতে পারে না, সেখানে অন্য দলের বিধায়কদের কিনে নিয়ে সেই দলের সরকার ফেলে দেয়। দ্বিতীয় পথ হল, ইডি-সিবিআই-এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অপব্যবহার। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন অন্য দলের বিধায়কদের ভয় দেখিয়ে, ধমকে-চমকে নিজেদের দলে টানে বিজেপি। এইভাবে ওই দলের সরকার ফেলে দিয়ে সরকার গঠন করে বিজেপি। তৃতীয় পথ হল, আইনের অপব্যবহার। যেখানে যেখানে বিজেপি সরকার গঠন করতে পরে না, সেখানে রাজ্যপালকে দিয়ে, অধ্যাদেশ জারি করে অবিজেপি সরকারকে কাজই করতে দেয় না তারা। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপালের ভূমিকা দেখুন। পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা সব জায়গায় রাজ্যপালদের এই ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। আর দিল্লিতে বিজেপি যা করল, তা তো সম্পূর্ণ গণতন্ত্র বিরোধী।
আরও পড়ুন – মমতার সঙ্গে বৈঠক করতে কলকাতায় আপের দুই মুখ্যমন্ত্রী,কেজরী এবং মান, সঙ্গী রাঘব…
২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লির পরিষেবা দফতরকে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের আওতায় এনেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল কেজরীবাল সরকার। আট বছর পর এই মামলার রায়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, গণতন্ত্রে প্রশাসনিক ক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের হাতেই থাকে। যদি অফিসাররা সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীকে রিপোর্ট করা বন্ধ করে দেন বা তাঁদের নির্দেশ অমান্য করা শুরু করেন, তাহলে যৌথ দায়িত্বের নীতিতে তার খারাপ প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ, সরকারি আমলাদের নিয়োগ এবং বদলির ক্ষমতা দিল্লি সরকারের হাতেই ন্যস্ত করেছিল শীর্ষ আদালত। কিন্তু, গত শুক্রবার কেন্দ্রের জারি করা অধ্যাদেশে এই সুপ্রিম রায়কে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। অধ্যাদেশটি যাতে রাজ্যসভায় পাস না হয়, তা নিশ্চিত করতেই সকল বিজেপি বিরোধী দলগুলির সমর্থন আদায় করতে বেরিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। এদিন এই বিষয়ে কেজরীবাল বলেন, “কেন্দ্র বলছে সুপ্রিম কোর্টের আদেশও মানব না। আসলে বিজেপির অহঙ্কার বেড়ে গিয়েছে। অহঙ্কার বেড়ে গেলে মানুষ স্বার্থপর হয়ে যায়। দেশের উন্নতি নিয়ে ভাবনা-চিন্তাও চলে যায়। আমার মতে দেশের মানুষের এই অহঙ্কারি সরকারকে সরিয়ে দেওয়া উচিত।”