সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে জানে আমাদের দেশ। ভারতে বিবাহ বিচ্ছেদের হার সবচেয়ে কম। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই তথ্য। ‘বিচ্ছেদ’ বা ডিভোর্স’ শব্দ দু’টো যেন এখন জলভাত। মতের একটু এদিক থেকে ওদিক হচ্ছে কিংবা দু’টি মানুষের ভাবনা চিন্তায় ফারাক? ব্যাস! কখনও কখনও এটুকুই বর্তমান সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে যথেষ্ট। সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে নারাজ দুই পক্ষই। দুইজনের অবস্থান তখন দুই মেরুতে। হাজারও অভিযোগের পাহাড় দু’জনের বিরুদ্ধে। সম্পর্কে ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট’ এসময়ে যেন বড্ড বেমানান।
বিশ্বের যে ১০টি দেশে মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের হার সবচেয়ে কম তার মধ্যে রয়েছে, মিশর, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, তুরস্ক, ও কলোম্বিয়া। যদিও তালিকায় নেই পাকিস্তান। ধনী দেশগুলিতে বিবাহ বিচ্ছেদের হার তুলনামূলক অনেক বেশি। স্পেনে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ৮৫ শতাংশ, লুক্সেমবার্গে ৭৯ শতাংশ, রাশিয়ার ৭৩ শতাংশ ও ইউক্রনে ৭০ শতাংশ। জার্মানিতে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ৩৮ শতাংশ, ব্রিটেনে ৪১ শতাংশ, চিনে ৪৪ শতাংশ। আমেরিকার ৪৫ শতাংশ ও ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিরায় ও ইতালিতে ৪৬ শতাংশ বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদের পথে গড়ায়। সম্পর্ক ভাঙায় নিরিখে সব দেশকে গোল দিয়ে দেবে পর্তুগাল। সেদেশের ৯৪ শতাংশ মানুষই বেছে নিয়েছেন বিচ্ছেদের পথ।
একাংশ বিশেষজ্ঞের মতে ভারতে ডিভোর্সের হার কম হওয়ার পিছনে রয়েছে এ দেশের সমাজ ব্যবস্থা। পারিবারিক কারণে এখানে বিয়ে ভাঙার হার অনেকাংশেই কম। ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিয়ের অর্থ সাত জন্মের বন্ধন। সেই বন্ধনকে ভাঙতে নেই সহজে। অনেকের মতে, বিচ্ছেদের হার কম মানেই দাম্পত্যসংসার খুশিতে ভরপুর এমনটা নয়। অনেক সময় তার পিছনে লুকিয়ে ভয়ানক সত্য। ভারতে এখনও পর্যন্ত নারী শিক্ষার হার কম, চাকরির হারও কম। কম নারী স্বাধীনতা।
অনেক ক্ষেত্রেই স্বামীর আয়ের উপরই নির্ভরশীল ভারতের বেশিরভাগ মহিলা। বেশিরভাগ সংসারে পুরুষদের সিদ্ধান্তই শিরোধার্য। না বলাই থেকে যায় মহিলাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা। সেক্ষেত্রে অনেক সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও টিকে থাকতে হয় সম্পর্কে। অথচ অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় সম্পর্ক বজায় রাখার রসদগুলো অনেকাল আগেই ফুরিয়ে গিয়েছে। তবুও ‘সম্পর্ক’ নামক খোলসকে ত্যাগ করতে পারেননি অনেককে। কেউ কেউ আবার দায়বদ্ধতার তাগিতেও টিকিয়ে রেখেছেন সম্পর্ককে। সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে মহিলাদের নিজের চাওয়া-পাওয়াকে দূরে সরিয়ে রাখার মতো ঘটনাও ভারতের মতো দেশে নজিরবিহীন নয়। এছাড়াও আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বহুকাল ধরেই চলছে মেয়েদের ‘মানিয়ে নেওয়া’-এর মতো রীতি । সম্পর্কে ফাটল ধরলেও তা প্রকাশ্যে আনা মানা আমাদের সমাজব্যবস্থায়, পুরনো ভাবনাচিন্তায়। রসদ বিহীন, জল-হাওয়া না পেতে পেতে কখনও কখনও অনেক সম্পর্কই শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। তবুও সেগুলো রয়ে যায় বিয়ের নামক ছাতার তলায়। কখনও কখনও তা টিকে থাকে অন্তঃসারশূন্য এক সম্পর্ক হিসেবে।
বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে প্রতি দম্পতিই হাজারও স্বপ্নের মায়াজাল বুনে রাখেন। কিন্তু বিয়ের মাস বা বছর গড়াতে না গড়াতেই আলগা হতে থাকে সম্পর্কের বাঁধন। বনিবানা হয় না মনের মানুষের সঙ্গে। অগত্যা বিচ্ছেদের রাস্তাই বেছে নেন তাঁরা। অনেকেই আবার জেন ওয়াইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন এর জন্য। তাঁদের মতে ক্ষণস্থায়ী সম্পর্কের যুগে টিঁকছে না বিয়ের মতো টেঁকশই বন্ধনও। তবে বিতর্ক যাই থাকুক, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে জানে আমাদের দেশ। কেন বলছি একথা? আসুন জেনে নেওয়া যাক। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিশ্বের মধ্যে ভারতে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা সবথেকে কম। ওয়ার্ল্ড অফ স্ট্যাটিসটিক্সের একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই তথ্য। ভারতে কেবলমাত্র ১ শতাংশ বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন – ‘ডন থ্রি’ ছবি থেকে সরছেন শাহরুখ খান? অভিনেতার নাম সামনে আসতেই ঝড়…
ওয়ার্ল্ড অফ স্ট্যাটিসটিক্সের তথ্য অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদের হার সবচেয়ে কম এশিয়ার দেশগুলিতে। বিবাহ বিচ্ছেদের হার সবচেয়ে বেশি ইউরোপ ও আমেরিকায়। কম বিবাহ বিচ্ছেদের নিরিখে ভারতের পরেই রয়েছে ভিয়েতনাম। এই দেশে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ৭ শতাংশ। ইরানে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ১৪ শতাংশ। মেক্সিকোতে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ১৭ শতাংশ।