লোকসভা ভোট প্রচারে এবার জি-২০ সফলতাকেই অস্ত্র করতে চাইছে বিজেপি, ইতিমধ্যেই বাংলাতেও পৌঁছিয়েছে নির্দেশ

IOC-এর ১৪১তম  অধিবেশন দ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

চব্বিশে লোকসভা নির্বাচন। নির্ধারিত সময়ের আগে যা মাসখানেক এগিয়ে আনার সম্ভাবনাও রয়েছে। আর সেই নির্বাচনে বিজেপি ভারতের জি২০ সম্মেলনের সভাপতিত্বকে প্রচারের অস্ত্র বানাতে চায়, বলে সূত্রের খবর। এর জন্য বেনজির ভাবে দল একটি প্রস্তাবও এনেছে। বুধবার সম্মেলনে সফল নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে দলের পক্ষে সংবর্ধনা দেয়।

আরও পড়ুনঃ

সেই সঙ্গে জি২০ নিয়ে একটি প্রস্তাবও নিয়েছে দল। সেই প্রস্তাব রাজ্য রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। দলের নির্দেশ এই প্রস্তাব মেনেই লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে প্রচার চালাতে হবে। প্রত্যেক নেতাকে নিজের রাজ্যে প্রচারের সময়ে এই বিষয়গুলি বলতে হবে। মোদী জমানায় অতীতের তুলনায় ভারত যে বিশ্ব রাজনীতিতে অনেক বেশি সাফল্য পেয়েছে সেটাই সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে, এমনটাই জানা যাচ্ছে বিজেপি সূত্রে।

 

দু’পাতার প্রস্তাবের প্রথম স্তবক থেকেই মোদীর স্তুতি। বলা হয়েছে, গত ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে যে সম্মেলন হয়েছে তাতে প্রধানমন্ত্রী যে ভূমিকা নিয়েছেন, তা ভারতের কূটনৈতিক সাফল্যের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত তৈরি করেছে। এই সম্মেলন বর্তমান ভারতের পাশাপাশি আগামীর জন্যও কাজের হবে বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এই সম্মেলনে কোন কোন ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে তার উল্লেখ করার পাশাপাশি প্রস্তাবের ছত্রে ছত্রে রয়েছে মোদীর জয়গান। মোদীর নেতৃত্বে আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি২০-র অন্তর্ভুক্ত করার সাফল্য আগামী প্রজন্মও মনে রাখবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে। এই সম্মেলনকে দেশে ছড়িয়ে দিতে ৬০ শহরে ২০০টি কর্মসূচি, দেড় কোটি মানুষের যোগাযোগের কথাকেও বড় সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

জি২০ সম্মেলন নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলাও যে বিজেপির লক্ষ্য তা অবশ্য মুখে স্বীকার করছেন না বিজেপি নেতারা। তবে ইতিমধ্যেই বাংলার নেতারাও যে কোনও বক্তৃতায় দিল্লি সম্মেলনের জয়গান শুরু করে দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আনা হচ্ছে অতীতের সঙ্গে তুলনা। কংগ্রেস জমানায় বিশ্বে ভারতের এমন স্থান যে তৈরি হয়নি সেটাই বলা হচ্ছে প্রচারে। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই প্রসঙ্গে বলেন, ”এটা নিয়ে প্রচারের দরকার নেই। গোটা দেশ দেখেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা কী ভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা দেখিয়েছেন। ভারত যে বিশ্বের দরবারে গুরুত্ব পাচ্ছে, এটা তো অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। যাঁরা এসেছিলেন সকলেই মোদীজির নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। আর এই গর্ব তো শুধু বিজেপির নয়, এটা গোটা দেশের।”

 

আর এক ধাপ এগিয়ে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ”সেই ছোট বেলা থেকে আমরা বলে এসেছি ‘ভারত আবার জগত্‍সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে’। অতুলপ্রসাদ সেনের সেই বাণী যে এত দিন পরে সফল হয়েছে, তারই প্রমাণ দেখা গিয়েছে জি২০ সম্মেলনে। শুধু সরকারের কর্মসূচি না রেখে, রাজধানীতে আটকে না রেখে মোদীজি যে ভাবে এই সম্মেলনকে গোটা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন, মানুষের সম্মেলন করে দিয়েছেন, তা দেশ মনে তো রাখবেই।” এর প্রভাব কি লোকসভা নির্বাচনে পড়বে? দিলীপ বলেন, ”সব কিছুই কি ভোটের দিকে তাকিয়ে করতে হয় না কি! বিজেপির কাছে দলের আগেও রাষ্ট্র। ভারতের সম্মান বাড়ানোর কাজটাই হয়েছে। ভারত যে ‘বিশ্বগুরু’ তা এ বার নতুন করে প্রতিষ্ঠিত। আমাদের বলার দরকার নেই, বাকিরাই সেটা বলবে।”

 

জাতীয় স্তরেই বিজেপি যে এই সম্মেলনের সাফল্যকে নির্বাচনে হাতিয়ার করতে চাইছে, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত বুধবারই দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। একটি সাক্ষাত্‍কারে জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন জি২০ দেখছেন তিনি। কিন্তু এ বারের মতো ‘সফল সম্মেলন’ আগে হয়নি। শুধু জি২০ নয়, চন্দ্রযানের সফল অবতরণ নিয়েও ভারত বিশ্ব নেতাদের কাছে অনন্য জায়গা করে নিয়েছে বলে দাবি করেন জয়শঙ্কর। বলেন, ”সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্বনেতারা ভারতের চন্দ্রযানের সাফল্য নিয়েও এই সম্মেলনে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁরা টেবিল চাপড়ে উল্লাস প্রকাশ করেছেন।”

en.wikipedia.org