বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় কি বামপন্থী? প্রশ্নের জবাবে কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী? গত শুক্রবার ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly)। যে নির্দেশ বাংলার রাজনীতি ও সমাজজীবনকে একপ্রকার আন্দোলিত করে তুলেছিল। সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সরকার এই চাকরিহারা ৩৬ হাজার জন ও তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে।
ওই সাংবাদিক বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রীকে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন পষ্টাপষ্টিই জানিয়েছেন, সরকার হাইকোর্টের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাবে। সরকারের তরফে কী কী যুক্ত দেওয়া হবে, তাও সাজিয়ে ফেলেছেন আইনজীবীরা। তাঁর কথায়, আদালত তার কাজ করে যাবে, আমরা আমাদের কাজ করে যাব। কোনও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না, তবে নিরীহ মানুষ বিপন্ন হয়ে পড়েন তাও হতে দেব না।মুখ্যমন্ত্রী যখন এভাবে তাঁর সরকারের অবস্থান করছেন, তখন তাঁকে এক সাংবাদিক বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করেন—’দিদি, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কি বামপন্থী? তিনি কি বাম মনোভাবাপন্ন?’মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্নটা শুনে কিছুটা বিরক্ত হন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনও বিচারপতি সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করব না’। তাঁর কথায়, ‘আমরা সব বিচারপতিকে সম্মান করি। আদালতকে শ্রদ্ধা করি। কোনও জাজমেন্ট নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কোনও বিচারপতি সম্পর্কে আমি কোনও মন্তব্য করব না। ওঁদের কাজ ওঁরা করবেন, আমাদের কাজ আমরা করব’।
এর আগে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ খোলাখুলিই বলেছিলেন, ‘বিচারপতির চেয়ারে বসে তিনি বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের কথা বলছেন। কুণাল এও বলেছিলেন, বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের উচিত কোর্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে রাজনীতি করা’।
আরও পড়ুন – রাজ্যে আসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী মোদি, নবান্নকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, কুণাল ঘোষ তৃণমূলের মুখপাত্র। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। ফলে কুণাল যেটা বলতে পারেন সেটা মমতার মুখে শোভা পায় না। সেটা বুঝেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে সাংবিধানিক শিষ্টাচারও দেখিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, রায় পছন্দ না হলে তাঁর উচ্চতর বেঞ্চে বা উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি বা তাঁর সরকার সেটাই করবেন। কিন্তু কোনও বিচারপতি সম্পর্কে মন্তব্য করবেন না।অতীতে বাম জমানায় বিচারপতি অমিতাভ লালা সম্পর্কে বিমান বসু বলেছিলেন, ‘বিচারপতি লালা, বাংলা ছেড়ে পালা।’ মনে রাখতে হবে, বিমানবাবু কিন্তু কোনও প্রশাসনিক পদে ছিলেন না। তিনি সিপিএমের সাংগঠনিক স্তরের নেতা ছিলেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বা অসীম দাশগুপ্তরা কিন্তু সরকারের পদে থেকে বিচারপতি লালা সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি।