রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় আজ ফের আদালতে পেশ করা হবে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। আর তার আগে ফের চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক অভিজিত্ দাস। তার দাবি, মন্ত্রীর নির্দেশেই নাকি মা ও স্ত্রীকে তিন সংস্থার ডিরেক্টর পদে বসিয়েছিলেন অভিজিত্ দাস।
রেশন বন্টন দুর্নীতিতে ইতিমধ্যে একাধিকবার ইডির জেরার মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর প্রাক্তন PA-কে। তাঁর বাড়িতে তল্লাশির মাঝেই উদ্ধার হয়েছিল মেরুন ডায়েরি। যেখানে লেখা ছিল ‘বালুদা’র নাম। প্রসঙ্গত, যে নামেই পরিচিত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ডায়েরিতে উল্লেখ করা নাম রাজ্যের মন্ত্রীরই বলে ইতিমধ্যে দাবি করেছে ইডি।
আরও পড়ুনঃ কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ অধরা, ফের হাসপাতালে চিঠি ইডির
পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, রেশন বন্টন দুর্নীতিতে কোটি কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে মূলত তিনটি ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে। যে সংস্থাগুলির ডিরেক্টর পদে ছিলেন একাধিক মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ। ইডির দাবি, শ্রী হনুমান রিয়েলকন প্রাইভেট লিমিটেড, গ্রেসিয়াস ইনোভেটিভ প্রাইভেট লিমিটেড এবং গ্রেসিয়াস ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড, এই তিনটি ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে মূলত হয়েছে কালো টাকা সাদা করার কাজ। ED-র দাবি, ওই সংস্থাগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অতিরিক্ত ৮ কোটি টাকা নগদে জমা পড়ে। সব মিলিয়ে ২০ কোটি টাকারও বেশি কালো টাকা সাদা করা হয়।
এই তিন সংস্থারই ডিরেক্টর পদে ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (Jyotipriyo Mullick) প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক অভিজিত্ দাসের মা ও স্ত্রী। অভিজিতের স্ত্রী সুকন্যা দাস ও মা মমতা দাস ওই সংস্থাগুলিতে ডিরেক্টর হয়েছিলেন মন্ত্রীর কথাতেই, এমনই বিস্ফোরক দাবি করেছেন জ্যোতিপ্রিয়র প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক। অভিজিতের দাবি, মন্ত্রী বলেছিলেন বলেই তাঁর স্ত্রী ও মাকে ওই ৩ সংস্থার ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি মন্ত্রীর আপ্ত সহায়কের কাজের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নেওয়ার পরই তাঁর মা ও স্ত্রী ওই সংস্থাগুলির ডিরেক্টরের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন অভিজিত্।
কিন্তু কেন হঠাত্ এই ৩ সংস্থার ডিরেক্টর হতে রাজি হলেন তাঁর মা ও স্ত্রী ? সেখানে তাঁদের ভূমিকাই বা কী ছিল ? যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তরে অভিজিতের দাবি, মন্ত্রীর কথাতেই ডিরেক্টর পদে মা ও স্ত্রীকে বসানো। মন্ত্রীর ব্যবসার কাজে সাহায্য হবে বলেই ওই পদ নেওয়া বলেও দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে যাবতীয় তথ্য তিনি দিয়ে দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন জ্যোতিপ্রিয়র প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক। প্রাক্তন পিএ-র ও দাবি, ওই সংস্থাগুলি থেকে কোনও টাকা তাঁর স্ত্রী বা মায়ের অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি।
তাঁর এই বিস্ফোরক অভিযোগের পরই বিরোধীরা ফের একবার শানিয়েছে তীব্র আক্রমণ। বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর কথায়, কোনও সাধারণ ব্যক্তি বা আপ্ত সহায়কের পক্ষে এভাবে কাউকে সংস্থার ডিরেক্টর পদে বসানো সম্ভব নয়। এটা আসলে ও একবার প্রমাণ করে দেয় রাজ্যে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি হয়েছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, পিঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো দুর্নীতির পরত সামনে আসছে। মন্ত্রী নিজে তো বলেইছেন সবটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানতেন। রেশন বন্টন রাজ্যে এতবড় দুর্নীতি মুখ্যমন্ত্রীর দফতর কিছুই জানল না এটা হতে পারে না।