রাত পোহালেই রথযাত্রা, জগন্নাথদেবের আশীর্বাদ পেতে নিবেদন করুন প্রিয় ফুল ও ভোগ, কথিত আছে । ভগবান বিষ্ণু মর্ত্যলোকে এসে বদ্রীনাথ, দ্বারিকা ধাম, পুরী ধাম ও রামেশ্বরম, এই চার ধামে যাত্রা করেন। হিমালয়ের শিখরে অবস্থিত বদ্রীনাথ ধামে স্নান করেছিলেন। তারপর গুজরাতের দ্বারিকা ধামে বস্ত্র পরিধান করেন, ওড়িশার পুরীধামে ভোজন করেন। আর সবশেষে রামেশ্বরমে গিয়ে শয়ন করেন। তাই পুরীর মন্দিরে ভোগের যে মহাচমক থাকবে না, তা বলাই বাহুল্য। শুধু তাই নয়, পুরাণ মতে, কিশোর কৃষ্ণকে আট প্রহর খেতে দিতেন যশোদা। তবে একটা সময় এক শুভ অনুষ্ঠানে ইন্দ্রের রোষে পড়ে মহাপ্রলয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। গোটা গ্রামের জীবকূলকে রক্ষা করতে নিজের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে পুরো গোবর্ধন পাহাড় নিজের উপর তুলে নিয়েছিলেন। সাতদিন ধরে ওইভাবেই দাঁড়িয়েছিলেন। সেই পাহাড়ের নীচেই আশ্রয় নিয়েছিল পশু, পাখি থেকে মানুষজন। কৃষ্ণকে অনাহারে দেখে ব্রজবাসী ও যশওদা সাতদিন আটপ্রহরের হিসেবে কৃষ্ণের জন্য ৫৬টি পদ পরিবেশন করেছিলেন। সেই থেকেই নারায়ণের ছাপান্ন ভোগ নিবেদন করা চল এখনও বিদ্যমান।
বাড়িতে ছাপান্ন ভোগ বানাতে না পারলে ভক্ত ভক্তিভরে যা নিবেদন করেন, তাই গ্রহণ করেন জগন্নাথদেব। সেই ভোগই ভক্তদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে পারেন। কথিত আছে, জগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদ বিনা পার্থক্যে সকলের কাছে সমানভাবে বিতরণ করা হয়। এক টুকরো প্রসাদ পেয়ে সকল মানুষ ধন্য হবে ও সকল পাপের অবসান ঘটে। তবে জগন্নাথদেবের সবচেয়ে প্রিয় খাবার হল মিষ্টি। পিঠে, পায়েস, অড়হর ডাল। যদি বাড়িতে জগন্নাথদেবের পুজোয় ভোগ নিবেদন করতে চান, তাহলে ভোগের থালি অবশ্যই রাখুন, অন্ন, কণিকা, একবর্ণী, মিষ্টি অড়হর ডাল, নারকেল দিয়ে লাল শাক ভাজা, নারকেলের বড়া, মালপোয়া, কাকারা পিঠে, সুজির ক্ষীর, চিঁড়ে জিরা, আখের গুড় (মধুকণা), রম্ভা ও খাবারের পর পান।
জগন্নাথ দেবের প্রিয় ফুল বলতে তেমন কিছু বিশেষত্ব নেই। যে কোনও ফুলেই তিনি সন্তুষ্ট। তবে জগন্নাথদেবকে কখনও জবা ফুল নিবেদন করা হয় না। এছাড়া ভক্তরা মন থেকে , ভক্তিভরে যে যে ফুল নিবেদন করেন, তা সবই গ্রহণ করেন মহাপ্রভু। শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে ভগবান জগন্নাথের অনেক মিল রয়েছে, তাই শ্রীকৃষ্ণের পছন্দের ফুল নিবেদন করা চলে। কুমুদ, রক্তকরবী, মল্লিকা, চম্পা, টগর, পলাশের পাতা, ফুল, দুর্বা, বনমালা, তুলসী, পদ্মফুল অর্ঘ্য হিসেবে নিবেদন করতে পারেন।
আরও পড়ুন – ছত্তীসগঢ়ে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন,
পুরাণ মতে, ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণের আরেক রূপ হিসেবে জগন্নাথকে বর্ণনা করা হয়। জগন্নাথের মধ্য়ে বিষ্ণুর সব অবতারের চিহ্ন রয়েছে। তাই জগন্নাথের মহাপ্রসাদ বা ভোগ নিবেদন করা সময় ছাপান্ন ভোগই দেওয়া হয়। জগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদের রয়েছে অনেক গুরুত্ব। পুরীর মন্দিরে জগন্নাথদেবের নিত্য সেবা করা হয় এই ছাপান্ন রকমের ভোগ দিয়ে। শুধু তাই নয়, এই ছাপান্ন ভোগ নিবেদন করার পিছনে রয়েছে এক লোকবিশ্বাস। দেবী লক্ষ্মীই যেন প্রতিদিন মহাপ্রভুর জন্য এই ভোগ রান্না করেন। ভোগ তৈরির পরে মন্দিরে মূলকক্ষে তিন দেবদেবীদের ভোগ নিবেদন করা হয়। শ্রীমন্দিরে দেবী বিমলা( দুর্গাদেবী) কাছে ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগ নিবেদনের পরই এই প্রসাদ মহাপ্রসাদে পরিণত হয়। বলা হয়, শ্রীচৈতন্যদেব মহাপ্রভুর প্রসাদকে মহাপ্রসাদ শব্দটি প্রথম প্রচলন করেন।