কোচবিহার বইমেলায় উপচে পড়া ভিড়। কোচবিহার জেলা বইমেলায় বইপ্রেমীদের ভিড় জমতে শুরু করেছে। পাশাপাশি প্রকাশনী সংস্থাগুলির বই ধীরে ধীরে বিক্রি শুরু হয় খুশি তারাও। গত কয়েকদিন ধরে জাঁকিয়ে বসেছে শীত। ঠান্ডার জন্য প্রথম কয়েকদিন দিনহাটায় কোচবিহার জেলা বইমেলায় সেভাবে ভিড় না হলেও মেলা শেষের দিকে শীতকে উপেক্ষা করে ভিড় জমতে শুরু হয়েছে। এছাড়াও মেলায় বেশ কয়েকটি সংস্থার বই ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। সাংস্কৃতিক মঞ্চে অনুষ্ঠান ছাড়াও বই প্রকাশ সহ কবিতা পাঠ থেকে শুরু করে নানারকম অনুষ্ঠান চলছে পর্যায়ক্রমে।
গত ২৭ ডিসেম্বর দিনহাটা সংহতি ময়দানে শুরু হওয়া কোচবিহার জেলা বইমেলা চলবে আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত । মেলার দুদিন পর থেকে সব প্রকাশনী সংস্থা যেমন হাজির হয়েছে তাদের বই নিয়ে তেমনি শীতকে উপেক্ষা করে বইপ্রেমীরাও বিকেল থেকেই ভিড় জমাচ্ছে। জেলা বইমেলা শনিবার ছিল পঞ্চম দিন। এদিকে গত পাঁচ দিনে সাংস্কৃতিক মঞ্চে বেশ কয়েকটি উপন্যাস থেকে শুরু করে কাব্যগ্রন্থ, কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এদিন বইমেলার সংস্কৃতি মঞ্চে প্রকাশিত হয় শিবু শর্মার লেখা ‘খসা পাশুনের ড্যারা।’বইটি প্রকাশ করেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থ প্রতিম রায়।
বইটিতে কবির ৩৫ টি কবিতা রয়েছে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের বেকারত্বের জ্বালা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও গত চার দিন যে বইগুলি প্রকাশিত হয় সেগুলি হল, উজ্জ্বল আচার্য সম্পাদিত সাহিত্য বিবর্তনের বইমেলা সংখ্যা। সাহিত্য বিবর্তনের এই সংখ্যা প্রকাশ করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক উজ্জ্বল আচার্য, কবি মানিক সাহা, মৌমিতা আচার্য সহ অনেকেই। অরিন্দম পালের রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস ‘বক্সা বিভ্রাট’, দেবলীনা বিশ্বাসের কাব্যগ্রন্থ, ‘ শীর্ষবিন্দু’ , বিদ্যুৎ সরকারের খোলা চোখে, সম্রাট দাসের একলব্য।
বইমেলার পঞ্চম দিন দিনহাটার বেশ কয়েকটি স্কুলের পক্ষ থেকেও শিক্ষকরা পড়ুয়াদের মেলা প্রাঙ্গণে নিয়ে এসেছে। দিনহাটার গোপালনগর এম এস এস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও শিক্ষক সুব্রত নাহা, শিক্ষিকা চুমকি সাহা সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের মেলায় নিয়ে এসে তাদের পছন্দ মত বই কিনে দেন। পাশাপাশি এদিন শোনীদেবী জৈন হাই স্কুলের পক্ষ থেকেও শিক্ষকরা বইমেলায় গিয়ে স্কুলের জন্য বই কেনেন।
শিক্ষক সুব্রত জানান, স্কুলের ৬০০ উপরে ছাত্র। সকলকে নিয়ে আসতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়, তাই প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত এবছর পরীক্ষায় যারা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে তাদেরকে মেলায় নিয়ে আসি। এই পড়ুয়াদের নিজেদের ইচ্ছেমতো অধিকাংশকে গল্পের বই কিনে দেওয়া হল। পড়ার বাইরেও যাতে ওদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ে।
আরও পড়ুন – বন্দে ভারত এক্সপ্রেস মালদহে ঢুকতেই পুষ্প বৃষ্টি শুরু
গোপালনগর প্রাথমিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর পড়ুয়া সৃঞ্জয় বিশ্বাস জানান, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি বাবা-মা ও এসেছে। শিক্ষকরা বই কিনে দিয়েছে। ছোটদের পঞ্চতন্ত্র গল্পের বই নিয়েছি।
এদিন দিনহাটা সংহতি ময়দানে বইমেলায় ছেলেকে নিয়ে কোচবিহার থেকে আসা শিখা ধর জানান, ২৫ কিলোমিটার দূরে হলেও বই মানুষকে অনেকটাই কাছে টেনে আনে। তাই বর্তমান প্রজন্ম যখন মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে তখন বই পারে একমাত্র এদেরকে মোবাইল থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে। আমার ছেলেও সময় পেলেই মোবাইলে ডুবে যায়। তাই ওকে দিনহাটায় বই মেলায় নিয়ে এসেছি।
বইমেলার পঞ্চম দিন দিনহাটার সংহতি ময়দানে বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার কর্তৃপক্ষ জানান, ধীরে ধীরে মেলা জমতে শুরু করেছে। বই বিক্রি হচ্ছে। যেভাবে বইপ্রেমীরা আসছে আশা করি শেষ দুই দিন বই বিক্রি ভালো হবে। কলকাতার এক প্রকাশনী সংস্থার কর্তৃপক্ষ জানান, বইমেলার শুরুতে সেভাবে বই বিক্রি না হলেও শেষের দুই তিন দিন ভালো বিক্রি হয়ে থাকে। দিনহাটায় জেলা বইমেলাতেও আগামী দুই দিন বইয়ের চাহিদা থাকবে।