পঞ্চায়েত ( Panchayats ), টিকিট মহার্ঘ, জ্বলছে আগুন, অভিষেক তৎপর, আইপাকের বড় দায়িত্ব। পাঁচ কোটির টেন্ডার পেতে গেলে একজন ঠিকাদার সংস্থাকে যেরকম উদ্গ্রীব তৎপর হতে দেখা যায় পঞ্চায়েত, পৌরসভার একটি টিকিট পেতে তার থেকে কম চেষ্টা করতে হয়না। অফিসারদের কোটি টাকার টোপ দেওয়া হয়। রাজনৈতিক নেতাদের পয়সা দিতে হয়। মোটা টাকার রফা করতে হয়। যার যেমন পয়সার জোর তার তেমন সুযোগ। আর কাউন্সিলর থেকে পঞ্চায়েত সদস্য সকলেই ক্ষমতাবান। একটি ওয়ার্ডে শাসক দলের একটি পাওয়ার মানেই জয় নিশ্চিত। পাঁচ দশক আগে এরকম আগ্রহ, উদ্যোগ, উদ্বেগ পরিলক্ষিত হয়েছে কদাচিত।
আর আজ এটাই যেন জীবনের ধ্রুবতারা। নেতা ধরা। অর্থের যোগাড় করা। অর্থ ব্যয় করে প্রচার চালানো। অর্থ ছড়িয়ে লবি করা। এসব করে যদি একটি টিকিট মেলে তাহলে এবার জেতার জন্য আবার ঝাঁপাতে হবে। অর্থবল লোকবলের জোগাড় যন্তর করা না হলে শেষরক্ষা সম্ভব হবেনা। আর এঘটনায় শাসক বিরোধী একপথের পথিক। বজবজ, কোন্নগর, কামারহাটি থেকে উত্তরবঙ্গ সর্বত্র আগুন এই ক্ষমতার লোভেের আগুন ছড়িয়েছে। এই মুহুর্তে একটি পৌরসভার টিকিট এতটাই মহার্ঘ যে তা আর বলার নয়। স্বজনপোষণ দুর্নীতি ও লোভ এই তিন পথে এইসব অন্যায় প্রবেশ করার সুযোগ পায়। অবাক করা খবর যে ঘোষণার আগে পুরভোটে দলীয় প্রার্থী তালিকা দেখবেন পি কে অভিষেক ও তিনি। তিনি দেখতে পাননি।
কারণ থার আগেই কালিঘাট বা ধর্মতলার অফিস থেকে লিক হয়ে যায়। অপেক্ষা করে বসে থেকেও দেখতে পাননি দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার প্রথম যে তালিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল, তা নেত্রীর কাছে পাঠানোই হয়নি। ঠিক কী কারণে তৃণমূলনেত্রীকে অন্ধকারে রেখে এমন কাজ করা হল, তা নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে। এব্যাপারে দলীয় নেতৃত্বের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে দলের পরামর্শদাতা সংস্থা আই-প্যাককে।
যেহেতু গত বছর দুই ধরে দলের প্রচারের মূল মাধ্যমগুলি আইপ্যাকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেই কারণেই প্রকাশিত তালিকার দায়িত্ব আইপ্যাকের ওপর বর্তায়। তাই তাদের মনে হয়েছে দলীয় নেতৃত্বের একাংশকে পুরো অন্ধকারে রেখে কেউ তালিকা ফাঁস করে দলে সমস্যা তৈরি করতে চেষ্টা করছে। যদিও আইপ্যাক সেই দায় নিতে নারাজ।
ক্ষোভের সঙ্গে সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়দের সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তালিকা প্রকাশ করে দিতে নির্দেশ দেন নেত্রী। শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক হয়। আর তখনই দেখা যায়, তৃণমূলের অফিসিয়াল সোশাল মিডিয়া ও গণ মাধ্যমে একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, যার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় তৈরি তালিকার বেশ কিছু পার্থক্য দেখা গেছে। এবং প্রকাশিত তালিকায় নেতাদের কোনও স্বাক্ষর নেই। পরিস্থিতি এ বার আরও গড়ায়। বক্সী ছাড়াও দলের তিন নেতা ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলেন মহাসচিব।
ফোনে কথা বলেন প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গেও। পার্থ এবং বক্সী উভয়েই পিকে’র কাছে জানতে চান, তৃণমূলের ‘অফিসিয়াল পেজে’ এরকম একটি তালিকা কেন এবং কি করে বেরলো? জানা গিয়েছে, উভয় তরফে কিছুটা বাদানুবাদও হয়। তখনই বলা হয়, তৃণমূলের ‘অফিসিয়াল পেজে’র দায়িত্ব আইপ্যাকের নয়। এক সময় আইপ্যাক পরামর্শদাতার কাজ থেকে ‘সরে আসতে পারে’ বলেও কথা ওঠেছিল বলে মিডিয়া দাবী করে। বক্সী- পার্থ তখন পাল্টা বলেন, ‘এ সব কথা তাঁদের শুনিয়ে লাভ নেই। সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন শুধু মমতা।’ সেই সঙ্গে আইপ্যাক- কর্তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘তৃণমূলে এ কাজ অকল্পনীয়।
আরও অনেকেই আছেন। তবে মমতাই এই দলের নেত্রী। তাঁকে না জানিয়ে এই রকম গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে কখনও কেউ করেনি।’ এর পরেই সংবাদমাধ্যমে পার্থবাবু জানিয়ে দেন, ‘সঠিক’ তালিকা জেলাগুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মমতা এবার কড়া হবার চেষ্টা করছেন। ভাইপোকে আটকাতে বেশ শক্ত হাতে হাল ধরার আপ্রাণ করছেন যদিও ইতিমধ্যে সবই বেসামাল হয়ে পড়েছে। এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই। এটাই এখন জননেতাদের অধিকাংশের একমাত্র লক্ষ্য। যদিও শনিবার রাত পর্যন্ত তৃণমূলের অফিসিয়াল পেজে প্রকাশিত আগের বিতর্কিত তালিকাটি বহাল রয়েছে, সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়নি।
দলের অফিসিয়াল পেজে প্রথম প্রকাশিত তালিকা নিয়ে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ দেথা যায়। তারপর দুই নেতার স্বাক্ষরিত তালিকা জানতে পারার পর কমবেশী সবজেলাতেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিরোধ এখন অন্য মাত্রায় পৌঁছে গেছে। দলের কর্মীদের অনেকের প্রশ্ন, অফিসিয়াল পেজে ওই তালিকাটি রেখে দেওয়ার কারণ কি বিভ্রান্তি জিইয়ে রাখা ! একেকটি পৌরসভা এলাকায় এক একরকম সংকট। কোথাও বিধায়ক দাঁড়ানো চলবেনা বললেও মহেশতলায় বিধায়ক দুলাল দাস দাঁড়ালেন।
আরও পড়ুন – ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বার্লিন থেকে নেতাজী কন্যার ভার্চুয়াল বক্তৃতা
এক পরিবারের দুজন দাঁড়াবেনা বললেও তা ঘটেছে। অনেকটাই মানা হয়নি দলের ঘোষিত নীতি। জেতা প্রার্থী পর্যন্ত বাদ পড়েছেন। এসবের পেছনে অর্থই অনর্থের কারণ ঘটাচ্ছে। ঘটছে টাকার জোরে। এই সময় কিছু নেতা প্রচুর ফাটকায় পয়সা কামিয়ে নেবেন। আর যিনি টিকিট পাবেন তার জন্য পাঁচ বছর পড়ে আছে করে খাবার জন্য। তাই প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই অনেকের চোখ নাচছে। শুধু প্রার্থীর নয়। প্রার্থীর পরিবার আত্মীয় স্বজন ও গোষ্ঠীর লোকেদের একছত্র আধিপত্য কায়েম করাই এই কায়েমী স্বার্থবাদীদের পাখীর চোখ। জনতার সেবা শুধু পোষ্টার দেওয়াল লেখনে দেখতে পাওয়া যাবে।
সবাই যে সুবিধাবাদি, চোর জোচ্চোর নন। সকলে খারাপ হলে এই ব্যবস্থার আর অস্থিত্ব থাকতনা। কিছু সৎ মানুষ আছেন বলেই এই গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখনো টিকে আছে। তবে খারাপের সংখ্যা বাড়ছে বলেই ভয়। খারাপের দল ভারী যেন না হয় সেটা দেখতে মমতা এখন খুব কড়া মনোভাব দেখাচ্ছেন। এমনকি তিনি দলের কাউকেই ক্ষমা করছেন না। তিনি আরো একটি ভাল কাজ করেছেন ভাইপোর পছন্দের কিছু লোকের সিকিউরিটি তুলে নেবার নির্দেশ দিয়েছেন যাদের অনেকের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ আছে। দলের সম্পর্কে খুব খারাপ মেসেজ যাচ্ছিল। সামাজিক ভাবমূর্তী খুব খারাপ এদের।
খুব সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত দিদির যা সর্বস্তরে প্রশংসা পাচ্ছে। যদিও আশঙ্কা আবার ভাইপোর চাপে পড়ে এইসব মুখগুলো ফিরে আসবে না তো ! পঁয়ত্রিশ পয়ষট্টি বছরের সংঘাতে আপাতত পঁয়ত্রিশ পিছু হটছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন মমতার কোন পরিবার নেই। জনগণ তার পরিবার। তাসত্বেও আওয়াজ উঠেছে আইপ্যাক দরকার নেই। বিস্ফোরণ জেলায় জেলায়। পঞ্চায়েত, টিকিট মহার্ঘ, জ্বলছে আগুন, অভিষেক তৎপর, আইপাকের বড় দায়িত্ব ।