প্রথমদিনই অচল সংসদ, সংসদীয় অধিবেশন শুরুর আগে সংসদ চত্বরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি প্রধানমন্ত্রী , বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই), শুরু হল সংসদের বাদল অধিবেশন। অধিবেশনের প্রথম দিনই মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে উত্তাল হল সংসদের দুই কক্ষ। মণিপুর নিয়ে আলোচনা চেয়ে স্লোগান তোলেন বিরোধীরা। তীব্র হই-হট্টগোলের মধ্যে দুপুর ২টোর পরই এদিনের মতো মুলতুবি রাখতে হল লোকসভা এবং রাজ্যসভা। অন্যান্য কার্যক্রম স্থগিত রেখে মণিপুরের হিংসা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চেয়ে একটি মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন পনেরো জন বিরোধী সাংসদ। সরকার পক্ষ সেই প্রস্তাব মেনে না নিতেই তুমুল হইহট্টগোল শুরু হয়। এদিন সকালেই বাদল অধিবেশনের জন্য যৌথ কৌশল তৈরি করতে সংসদ চত্বরে কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খার্গের চেম্বারে বৈঠক করেন ইন্ডিয়া জোটের সংসদের নেতারা। তাদের সেই ঐক্যের ছবি ধরা পড়েছে সংসদের ভিতরেও।
বেলা দুটোয় দই কক্ষেরই কার্যক্রম ফের শুরু হয়। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বিরোধী নেতাদের অনুরোধ করেন, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সংসদীয় কার্যক্রম পরিচলনা করা যায়। কিন্তু, কার্যক্রম শুরু হতেই মণিপুরের হিংসা নিয়ে অবিলম্বে আলোচনা চেয়ে দুই কক্ষেই স্লোগান দিতে থাকেন বিরোধী নেতারা। এরপর দুই কক্ষেরই কার্যক্রম এদিনের মতো স্থগিত রাখা হয়।
বুধবার (২০ জুলাই), সর্বদল বৈঠকে বিরোধীরা মণিপুর নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে অর্জুন রাম মেঘওয়াল এবং রাজনাথ সিং জানিয়েছিলেন, মণিপুরের হিংসা-সহ সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত সরকার। তবে, তারপর মণিপুর থেকে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে গ্রামের মধ্যে হাঁটানো এবং গণধর্ষণের অভিযোগের এক ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে, মণিপুরের আগুনে ঘি পড়েছে। এদিন সংসদীয় কার্যক্রম শুরুর আগে থেকেই বিরোধী নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, মণিপুরের হিংসা নিয়ে আসন্ন অধিবেশন উত্তাল হতে চলেছে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং থেকে শুরু করে শিশু ও নারী কল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির ইস্তফা চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দ্যর্থহীন ভাষায় মণিপুরের ঘটনার নিন্দা করেছেন। তবে, তাতেই বিরোধীরা এই ইস্যুতে সরকারকে আক্রমণের রাস্তা থেকে সরে আসবেন, এটা ভাবা ভুল।
১১ অগস্ট পর্যন্ত চলার কথা বাদল অধিবেশন। মোট ১৭টি অধিবেশন হওয়ার কথা। সব মিলিয়ে ৩১টি বিল নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। ন্যাশনাল নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কমিশন বিল, ন্যাশনাল ডেন্টাল কমিশন বিল, বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটি (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, সিনেম্যাটোগ্রাফ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, কনস্টিটিউশন (শিডিউলড ট্রাইবস) অর্ডার (থার্ড অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-এর মতো বিল নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। মণিপুর নিয়ে হই-হট্টগোলের মধ্যে অধিবেশনের কাজ কতটা হবে, প্রথম দিনই তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হল।
আরও পড়ুন – কয়লা, গরু পাচার তদন্তে থাকা সিবিআই কর্তার বদলি, নয়া যুগ্ম অধিকর্তা কে?
এদিন সকাল এগারোটায় লোকসভার অধিবেশন শুরু হয়। বাজেট অধইবেশনের পর থেকে যে যে লোকসভা সদস্যের প্রয়াণ ঘটেছে, তাদের সম্মান জানাতে বেলা ২টো পর্যন্ত মুলতবি রাখা হয় অধিবেশনের কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দেখা যায়, সনিয়া গান্ধীর কাছে এগিয়ে গিয়ে তাঁর কুশল সংবাদ নিতে। বেলা ১২টায় শুরু হয় রাজ্যসভার কার্যক্রম। তবে, শুরু থেকেই মণিপুরের সঙ্কট নিয়ে আলোচনার দাবিতে হট্টগোল শুরু হয় কক্ষে। এর মধ্যে বেলা ২টো পর্যন্ত রাজ্যসভার কার্যক্রম মুলতবি রাখা হয়। তবে, তারই মধ্যে কক্ষে আলোচনার জন্য তিনটি নোটিশ জমা পড়ে। উপ-রাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার অধ্যক্ষ জগদীপ ধনখড় জানিয়েছেন, ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনা এবং রেল নিরাপত্তা, বেকারত্ব এবং মণিপুরের হিংসার বিষয়ে আলোচনা চেয়েছেন বিরোধীরা। এদিন রাজ্যসভার সহ-সভাপতিদের প্যানেলও পুনর্গঠন করা হয়েছে। ৫০ শতাংশ মহিলা সদস্যকে রাখা হয়েছে। আট সদস্যের প্যানেলের চার মহিলা সদস্য হলেন, বিজেপি সাংসদ পিটি ঊষা, এস ফাংগন কনিয়াক, এনসিপির ফৌজিয়া খান এবং বিজেডির সুলতা দেও।