‘দাড়ির জাঙ্ঘাল’ হয়ে সাগরের পথে ছিল তীর্থযাত্রিদের যাত্রাপথ । ই-স্নান। সাগর সঙ্গমে গঙ্গাসাগর যাবার সাধ্য নেই যাদের, তাদের জন্য এই ই-স্নানের বাবস্থা করেছে মেলা প্রশাসন। এই সরকারি উদ্যোগ, বিশেষ করে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলাশাসকের বিভিন্ন দপ্তরের যে ক্লান্তিহীন পরিশ্রম ও সহযোগিতা সকলেই পেয়ে থাকেন তার জন্য যতই প্রশংসা করা হোক না কেন, তা নিতান্তই কম। এই সাফল্যের পেছনে তথ্যদপ্তর ও তাদের কর্মী ও আধিকারিকদের একটি বড় ভূমিকা থাকে। সাগরে ৫টি ভাষায় প্রচার করা হয় যার পেছনে থাকে মেলা সম্পর্কে সরকারের বিভিন্ন সূচনা লোকজনদের জানানো।
এরা কাজ করেন মেলায় সাময়িক হারিয়ে যাওয়া বা সঙ্গীদের থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়া তীর্থযাত্রিদের আবার যুক্ত করার কাজে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও যুক্ত থাকেন এই প্রচারের কাজে। এইসব সংগঠনগুলির অংশগ্রহণ ছাড়া এই সুবিশাল কর্মকান্ড সফল হওযা সম্ভব নয়। এই মেলা নিয়ে বিশ্বজুড়ে যে আগ্রহ আছে সেদিকেও বতর্মান মমতা বানারজীর সরকার সদাই সজাগ। নিজে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি বিষয়ে খোঁজ খবর রাখেন।তাসত্বেও কিন্ত সকলের পক্ষে এই রাজ্যর এই প্রান্ত সীমানায় পৌঁছনো সম্ভব হয়না। তাইতো এই ই-স্নান। সেকৃরণেই এই পবিত্র মেলার আবেগ নিয়ে সরকার সদা সচেতন।
ই-স্নানের প্যাকেটের মধ্যেই রয়েছে একটি পিতলের পাত্র যা দেখতে কমন্ডুলের মত। এতেই আছে পবিত্র গঙ্গাজল। এই জলভর্তি কমন্ডুলকে সুন্দর প্যাকেটের মাধ্যমে কুরিয়রের সাহায্যে তা পাঠানো হচ্ছে প্রয়োজনীয়দের কাছে। এই প্যাকেটের মধ্যে শুধুমাত্র গঙ্গাজল আছে এমন নয়। আছে ৫টি প্যাড়া সন্দেশ। যাকে ‘প্রসাদ’ বা ‘ভোগ’ বলা হয়। একটি ছোটো প্লাস্টিকের মধ্যে আছে পবিত্র মাটি। আছে তীর্থযাত্রিদের স্নানের ছবি। ই-স্নানের বিষয়ে লেখা একটি চিরকূটও আছে। সবতীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার। এই প্রবাদ আজও উচ্চারিত হয় কিন্ত তা এখন আর সত্য নয়। এখন গঙ্গাসাগর যত ইচ্ছে যাও ততবার।
সেই যে ‘চল তোরে দিয়ে আসি সাগরের জলে’ মাসীর সেই কাব্যের কথাও এখন প্রবাদ হয়েই আছে। মাসীর সেই বিসর্জন এখন সত্য নয়। যা ছিল কবির কল্পনা। এখন গঙ্গাসাগর মেলা একসাথে তীর্থযাত্রিদের পূর্ণার্জনের আবার ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য ভ্রমনের উপযুক্ত পরিবেশ ও পরিবহণ বাবস্থার সুযোগ। প্রায় সারা বছর ধরেই চলে এই আসা যাওয়া। একদা ‘দাড়ির জাঙ্ঘাল’ হয়ে পদব্রজে আসতে হত এই দুর্গম প্রান্তরে। পথেই মৃত্যু হত অনেকেরই।
আরও পড়ুন – বন্দে ভারত এক্সপ্রেস মালদহে ঢুকতেই পুষ্প বৃষ্টি শুরু
সাগরে পৌঁছানোর আগেই এই পথক্লান্তি মৃত্যু অনিবার্য করে তুলত। ‘দাড়ির জাঙ্ঘাল’ এখন ‘ভবানীপুর হয়ে গোপাল নগর হয়ে’ ডায়মন্ডহারবারের মধ্য দিয়ে কাকদ্বীপ, নামখানা হয়ে সাগরে পৌঁছানো যে রাস্তা তাই ছিল। এখন বহু লেনের রাস্তা আর হাজার হাজার যানবাহনের গমগম করে কাকদ্বীপ বাস্টান্ড। নামখানায় থাকে শতাধিক ‘লঞ্চ’ বা জলযান। বেনুবণে থাকে পারাপারের জন্য জলযান। তেমনি থাকে বাস, মিনিবাস, ট্রেকার, অটোরিক্সা।