বিডিও অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ। আবাস যোজনায় যাদের নাম তালিকায় নেই তাদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে তালিকায় নাম তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি ভাঙচুর ও তালা ঝুলিয়ে দিল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মফিজুল হকের নেতৃত্বে সদস্যরা। দিনহাটা এক নম্বর ব্লক অফিসে শুক্রবার দুপুরে এই ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ে।
দিনহাটা এক ব্লক অফিসে বিআইও সুকল্যাণ ভট্টাচার্যের ঘরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির নেতৃত্বে সদস্যরা বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি তার টেবিলে থাকা কম্পিউটার উল্টে দেয়। এরপর তাকে ঘরের ভিতরে রেখে সাটার নামিয়ে তালা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই দিন এই ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছাড়াও সদস্য শামসুল হক সহ অন্যান্যরা।
ঘটনার খবর পেয়ে দিনহাটা থানার এসআই দীপক রায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী সেখানে ছুটে আসে। ছুটে আসে ব্লকের বিডিও মদনমোহন মূর্মু। বিআইও সুকল্যাণ জানান, কি ঘটনা ঘটেছে সেটা আপনারাই সামনে থেকে দেখলেন। আমার বলার কিছু নেই। ব্লকের বিডিও মদনমোহন মূর্মু অবশ্য জানান, যা হয়েছে সেসব বিষয় আলোচনার মধ্য দিয়ে মিটে গিয়েছে।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মফিজুলের অভিযোগ, ওকড়াবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৬০০ লোকের তালিকা রয়েছে। অথচ বিআইও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নিয়ে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করছে। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের নাম তালিকায় রয়েছে। অধিকাংশ মানুষের কাছ থেকেই টাকা নেওয়া হয়েছে।
ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে আবাস যোজনা নিয়ে গ্রামের দুঃস্থ অসহায় মানুষরা নানা অভিযোগ করছেন। যাদের নাম নেই তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে বিআইও নাম তুলে দিলেও গ্রামের মানুষ আমাদের কাছে এসে কাগজ দিলেও সেই কাগজ আমরা জমা করা সত্ত্বেও তাদের নাম ওঠেনি। বাধ্য হয়ে এ দিন সাধারণ মানুষের এবং জনপ্রতিনিধির ক্ষোভের কথা বিআইও কাছে গিয়ে তুলে ধরা হয়। সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ওই অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শামসুল হক জানান, আবাস যোজনার তালিকায় গ্রামের দুঃস্থ অসহায় মানুষের অনেকেরই নাম নেই। সেক্ষেত্রে আমরা জনপ্রতিনিধি হওয়ায় আমাদের কাছে তারা তাদের অভিযোগ জানাচ্ছেন। অথচ বিআইও অফিসের কিছু কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সরাসরি তাদের নাম তুলে দিচ্ছে তালিকায়। গ্রামের মানুষ আমাদের পিছু ছাড়ছে না। আমরা জনপ্রতিনিধিরা লজ্জিত হয়ে পড়ছি । এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মফিজুল জানান, আবাস যোজনা নিয়ে গ্রামের মানুষের পাশাপাশি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের কিছু অভিযোগ ছিল। এ দিন কিছু ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ। তবে আলোচনার মধ্যে দিয়ে বিষয়টি মিটে গিয়েছে।
আরও পড়ুন – পৌরসভার উদ্যোগে স্বামী বিবেকানন্দের পূর্ণাঙ্গ মূর্তি স্থাপন
ঘটনার পর ব্লকের বিডিও মদনমোহন মুর্মুর উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে বিআইও সুকল্যাণ ভট্টাচার্য ছাড়াও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মফিজুল হক, সহ-সভাপতি পরীক্ষিত বর্মন, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের শামসুল হক থেকে শুরু করে সকলেই উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে বিডিও মদনমোহন মূর্মু জানান, যা যা ঘটনা ঘটেছে সে সবকিছু পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ সকলকে নিয়ে আলোচনার মধ্যে দিয়ে মিটে গিয়েছে।