মণিপুরে আটকে দেওয়া হয় রাহুল গান্ধীর কনভয়, হেলিকপ্টারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কংগ্রেস নেতা। মণিপুরের চুরাচন্দনপুর জেলা। গত ৩ মে থেকে চলা হিংসায় সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা। বৃহস্পতিবার (২৯ জুন), মণিপুর সফরের প্রথম দিনে, সেই জেলাতেই যেতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কিন্তু, মাঝপথে তাঁর কনভয় আটকে দিল পুলিশ। এদিন প্রথমে বিমানে ইম্ফল আসেন রাহুল। তারপর, সড়কপথেই চুরাচন্দনপুর গিয়ে, সেখানকার মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে ঠিক করেছিলেন তিনি। একাধিক আশ্রয় শিবিরে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলিত হওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু, ইম্ফল থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে বিষ্ণুপুরে তাঁর কনভয় আটকে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে মণিপুর পুলিশ। তাদের দাবি, রাহুল গান্ধীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণেই তাঁর কনভয় আটকানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে সড়কপথে চূড়াচন্দনপুর যাওয়ার বদলে, হেলিকপ্টারে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
রাহুল গান্ধীর সফর সঙ্গী হয়েছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি বেনুগোপাল। তিনি বলেছেন, “বিষ্ণুপুরের কাছে রাহুল গান্ধীর কনভয় আটকে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ওরা আমাদের যাওয়ার অনুমতি দিতে পারছে না। সেই অবস্থায় নেই ওরা। মানুষ রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে রাহুল গান্ধীর দিকে হাত নাড়ছেন। কেন ওরা আমাদের থামাল বুঝতে পারছি না। রাহুল গান্ধীর শুধু ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার চলে এসেছি। কোথাও কোনও রাস্তা অবরোধ করা হয়নি। জানি না স্থানীয় পুলিশকে কে কী নির্দেশ দিয়েছে।” কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও এই ঘটনায় প্রেক্ষিতে মণিপুর সরকারের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারী পথ’ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
হিংসাধ্বস্ত মণিপুরে রাহুল গান্ধীর সফর নিয়ে তাঁকে আক্রমণ করেছেন বিজেপি মুখপাত্র, অমিত মালব্য। টুইটারে এক দীর্ঘ পোস্টে তনি প্রশ্ন তুলেছেন, ২০১৫-১৭ সালেও মণিপুরে হিংসার ঘটনা চলছিল। তখন কেন রাহুল গান্ধী বা অন্য কোনও কংগ্রেস নেতা সেখানে যাননি? প্রসঙ্গত, সেই সময় রাজ্যে ওকরাম ইবোবি সিং-এর কংগ্রেসী সরকার ছিল। মণিপুর পিপলস বিল, মণিপুর ভূমি সংস্কার (সপ্তম সংশোধনী) বিল এবং মণিপুর শপস অ্যান্ড এস্টাবলিশমেন্ট (দ্বিতীয় সংশোধনী) বিল পাস করেছিল সেই সরকার। সেই তিন বিল পাস ঘিরে হিংসা ছড়িয়েছিল মণিপুরে।
৩ মে মণিপুরের আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের এক মিছিলকে কেন্দ্র করে এই হিংসার সূচনা হয়েছিল। তারপর থেকে সংখ্যাগুরু মেইতেই এবং আদিবাসী কুকু সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে গোটা রাজ্য জুড়ে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ অন্তত দুই বিজেপি নেতার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে জনতা। এখনও পর্যন্ত ১৩১ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এবং হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। প্রায় ৫০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাঁরা ঠাঁই নিয়েছেন ৩০০-রও বেশি আশ্রয় শিবিরে। এর আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চারদিনের রাজ্য সফরে এসেছিলেন। তিনি বারংবার রাজ্যে শান্তি ফেরানোর জন্য এবং রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আবেদন করেছেন। সমাধান খুঁজতে গত সপ্তাহে একটি সর্বদলীয় বৈঠকও করেছেন। তবে, পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।
আরও পড়ুন – পুরায় উল্টোরথ টানার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু ছয় পুণ্যার্থীর, আহত ১৫
বিষ্ণুপুরের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সড়কপথে গেলে রাহুলের কনভয়কে হামলাকারীদের গাড়ি বলে ভুল করতে পারে স্থানীয়রা। সেই ভুল থেকে তাঁর কনভয়ের উপর হামলা করা হতে পারে। এসপি বলেন, “এই অবস্থায় আমরা রাহুল গান্ধীকে কীকরে যেতে দিতে পারি? আমরা তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এখানে এখনও পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। গত রাতেও কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাহুল গান্ধীর কনভয়কে স্থানীয়রা চুরাচন্দপুরে হামলাকারীদের গাড়ি বলে ভুল করতে পারে।” এরপর ইম্ফলে ফিরে হেলিকপ্টারে করেই চুরাচন্দনপুরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাহুল গান্ধী।