রানিনগরে পঞ্চায়েত সমিতির দুই কংগ্রেস সদস্য রবিবার তৃণমূলে যোগ, এ বার অনেকটাই এগিয়ে গেল তৃণমূল কংগ্রেস। কংগ্রেসের বিজয় মিছিলের দিন গোলমালে উত্তপ্ত হয়েছিল মুর্শিদাবাদের রানিনগর। বিরোধীদের দখলে থাকা সেই রানিনগর-২ পঞ্চায়েত সমিতি দখলের পথে এ বার অনেকটাই এগিয়ে গেল তৃণমূল কংগ্রেস। ওই পঞ্চায়েত সমিতির দুই কংগ্রেস সদস্য রবিবার তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। সদ্যই কংগ্রেসের হাত থেকে ঝালদা পুরসভা দখল করেছে তৃণমূল।
তার পরেই রানিনগরে পুলিশকে কাজে লাগিয়ে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার, ভয় দেখানো এবং নির্বাচিত সদস্যদের দলে টানার অভিযোগ করে কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কথা বলে বাংলায় এই কাণ্ড ঘটালে তৃণমূলের কী বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে? তৃণমূল অবশ্য পাল্টা বলছে, পায়ের তলায় মাটি হারিয়ে কংগ্রেস জলঘোলা করছে।
রানিনগর-২ পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠন হওয়ার কথা আজ, সোমবার। গত শুক্রবারের গোলমালে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী সদস্য তথা সভাপতি কুদ্দুস আলিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। এরই মধ্যে এ দিন বহরমপুরে জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ে এসে কংগ্রেসের দুই বিজয়ী সদস্য হানিফ শেখ ও ঊর্মিলা খাতুন শাসক দলে যোগদান করেন। তাঁদের হাতে দলের পতাকা তুলে দেন রানিনগরের তৃণমূল বিধায়ক সৌমিক হোসেন। উপস্থিত ছিলেন বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী শাওনি সিংহরায়। সম্প্রতি ঝালদা পুরসভায় কংগ্রেসের ও নির্দল কয়েক জন জয়ী সদস্য শাসক দলে যোগ দিয়েছেন। তাতে ওই পুরসভা তৃণমূলের দখলে এসেছে। এই আবহে রানিনগরে স্থায়ী সমিতি গঠনের দিন ‘গোলমালের’ আশঙ্কা করে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাতে তিনি লেখেন, ‘সূত্র মারফত খবর পেয়েছি, শাসক দলের এক দল অত্যুত্সাহী নেতা-কর্মী পুলিশের সঙ্গে যোগসাজস করে স্থায়ী সমিতি গঠনকে প্রহসনে পরিণত করার যড়যন্ত্র করছেন। গণতন্ত্রে যা কাম্য নয়’। চিঠিতে বিরোধী সদস্যদের উপযুক্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে উদ্যোগী হওয়ার জন্যও তিনি মমতাকে অনুরোধ করেন।
অধীর এ দিন বলেছেন, ”আগের দিনের গোলমালের সময় ঘটনাস্থলে না থাকা সত্ত্বেও রানিনগর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বিরোধী সদস্যদের তৃণমূলে যোগদান করানোর জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ এত দিন তলায় তলায় শাসক দলের হয়ে কাজ খেলছিল। এ বার তারা প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে। আটক বা গ্রেফতার করে পণবন্দির রফার মতো তৃণমূলে যোগ দেওয়ানোর শর্ত দেওয়া হচ্ছে!” তবে তৃণমূলে যোগদান করা হানিফ বলেন, ”কংগ্রেস এবং সিপিএম রানিনগরের যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তা মেনে নিতে পারছি না। একের পর এক কার্যালয় ভাঙচুর, সাধারণ মানুষকে মারধর, এ সব দেখেই দল বদল করছি। ভয় বা প্রলোভনে নয়।”
রানিনগর-২ পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন সংখ্যা ২৭। তৃণমূলের দখলে ১৩টি এবং বাম-কংগ্রেস জোটের দখলে ছিল ১৪টি আসন। দুই কংগ্রেস সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তৃণমূলের আসন বেড়ে হল ১৫। স্থায়ী সমিতি গঠনের আগের দিন দুই জয়ী সদস্যের দল বদলে কিছুটা হলেও চাপে বিরোধী শিবির। কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে অধীর এ দিন রানিনগরে যান। শাওনির তা নিয়ে কটাক্ষ, ”পায়ের তলার মাটি হারিয়ে গিয়েছে ওঁর (অধীর)। কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।” অধীরের মন্তব্য, ”দিদির গণতন্ত্রের মডেল সবাই দেখতে পাচ্ছে!”