কারা ভাঙল সোভিয়েত আমলের বাঁধ? কয়েক ঘণ্টায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে বন্যার আশঙ্কা, মঙ্গলবার (৬ জুন), এক অদ্ভুত মোড় নিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দক্ষিণ ইউক্রেনের রুশ নিয়ন্ত্রিত অংশে ভেঙে গেল সোভিয়েত আমলে তৈরি কাখভকা বাঁধ। বাঁধটি ঠিক কীভাবে ভেঙেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই বিষয়ে ইউক্রেন এবং রাশিয়া মেতেছে দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপের খেলায়। দুই পক্ষেরই দাবি, অপর পক্ষের সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে হামলা চালিয়ে ভেঙে দিয়েছে বাঁধটি। এর ফলে, পুর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের যে অঞ্চলে যুদ্ধ চলছে, তার একটা বিস্তীর্ণ অংশে বন্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জলের নীচে চলে যেতে পারে খেরসন শহর। ১৯৫৬ সালে কাখোভকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অংশ হিসাবে ডিনিপ্রো নদীর উপর ৩০ মিটার উচ্চ এবং ৩.২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি আংশিকভাবে কংক্রিট এবং আংশিকভাবে মাটি দিয়ে তৈরি।
এই বাঁধ থেকেই ক্রিমিয়া উপদ্বীপে জল সরবরাহ করা হয়। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপটি দখল করেছিল রাশিয়া। কাজেই বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় রুশ নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়ার জল সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে, তার থেকেও বড় কথা হল, বর্তমানে রুশ নিয়ন্ত্রণে থাকা জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রেও শীতল জল সরবরাহ করা হয় এই বাঁধের জলাধার থেকেই। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় এখনই ওই পরমাণু কেন্দ্রে বিপদ ঘটার ঝুঁকি নেই। তবে পরিস্থিতির উপর তারা নজর রাখছে।
এদিকে বাঁধ ভাঙার জন্য রাশিয়া এবং ইউক্রেন পরস্পর প্ররস্পরকে দোষারোপ করা শুরু করেছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রুশ বাহিনী বাঁধটি উড়িয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, দক্ষিণ ও পূর্ব ইউক্রেন জুড়ে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল ইউক্রেন। সেই হামলা প্রতিহত করতেই রাশিয়ার পক্ষ থেকে বাঁধ ভেঙে বন্যা ডেকে আনা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জেলেনস্কি লিখেছেন, “কাখভকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধের ধ্বংস গোটা বিশ্বকে বার্তা দিচ্ছে যে, ইউক্রেনের প্রতিটি কোণ থেকে রুশ বাহিনীকে বিতাড়িত করতে হবে।” ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের মতে রুশ বাহিনীর এই হামলা ছিল একটি ‘ইকোসাইড’, অর্থাৎ ‘প্রকৃতির গণহত্যা’। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন তিনি।
অন্যদিকে, রুশ বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বাঁধে হামলা চালিয়েছিল ইউক্রেন। খেরসন শহর দখলের পর, রুশ সমর্থকদেরই সেখানকার বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে নিয়োগ করা হয়েছে। সেই কর্মকর্তাদেরদাবি, মঙ্গলবার ভোরে বাঁধটিতে বেশ কয়েকবার আঘাত করেছে ইউক্রেন বাহিনী। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাইড্রোলিক ভালভগুলি ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। তবে, বাঁধটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে পারেনি।
আরও পড়ুন – ‘আমার নখের যোগ্য নয়, আর দাঁড়ালে ভোটে জিতবে না’, বাইরানকে আক্রমণ হুমায়ূনের,
সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঁধটির ভেঙে যাওয়ার বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। সেগুলিতে দেখা যাচ্ছে, বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে বিপুল পরিমাণ জল বেরিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্যার জল মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। ডিনিপ্রো নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত দশটি গ্রাম এবং খেরসন শহর ছাড়াও এক বিরাট অংশে বন্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ওই এলাকাগুলির বাসিন্দাদের অবিলম্বে নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। রাশিয়ার মোচায়েন করা আঞ্চলিক প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “আমরা উপকূলীয় এলাকাগুলির সমস্ত বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। জরুরী এবং বিশেষ পরিষেবা সংস্থাগুলিকেও সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত সহায়তা প্রদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”