ইডির একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি, বঙ্গ রাজনীতির দুই হেভিওয়েটের টুইট যুদ্ধ, একদিকে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অন্যদিকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একের পর এক টুইট, পাল্টা টুইট, আবার পাল্টা টুইট… চলতেই থাকে বঙ্গ রাজনীতির দুই মহারথীর। বাংলার রাজনীতিতে যুযুধান দু’পক্ষের এমন গতিতে টুইট-যুদ্ধ সচরাচর দেখা যায় না।
প্রথম টুইটটি আসে শুভেন্দুর দিক থেকে। ইডির সুজয় ভদ্র ও লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অভিষেকের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। ইডির সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তির ছবি টুইট করে খোঁচা দেন শুভেন্দু। লেখেন, ‘আপনাকে ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার দরকার নেই, শুধু তদন্তকারী সংস্থার অফিসে গিয়ে সহযোগিতা করুন।’ সঙ্গে শুভেন্দুর এও বক্তব্য, এই পদক্ষেপটুকুই নৈতিকতা বা বিবেক বোঝানোর জন্য যথেষ্ট।
শুভেন্দুর সেই টুইটের পর পাল্টা টুইট আসে অভিষেকের। নারদার স্টিং অপারেশনে শুভেন্দুকে দেখা যাওয়ার ছবি টুইট করেন তৃণমূল সাংসদ। সঙ্গে লেখেন, ‘আশা করি, এটা আপনার নৈতিকতা বা বিবেক জাগ্রত করার জন্য যথেষ্ট। আমি কি জানতে পারি, আপনি কবে তদন্তকারী সংস্থা ইডির অফিসে যাবেন?’
এ তো সবে শুরু। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার টুইটে উত্তর শুভেন্দুর। যে নারদার স্টিং নিয়ে অভিষেক খোঁচা দিয়েছেন, সেই নারদা নিয়েই এবার পাল্টা দিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দুর পোস্টেও নারদা স্টিংয়ের ছবি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের প্রথম সারির তিন নেতা – সৌগত রায়, ফিরহাদ হাকিম ও কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে। সঙ্গে শুভেন্দু লেখেন, ‘আপনি ফিরহাদ হাকিম, সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদারদের কেন জিজ্ঞেস করছেন না? ওঁরা হয়ত আপনার প্রশ্নের ভাল উত্তর দিতে পারবেন।’
শুভেন্দু আরও লেখেন, অভিষেক যে ছবিটি পোস্ট করেছেন, তাতে কেবল শুভেন্দুকে খবরের কাগজ হাতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি শেয়ার করেছেন, তাতে দাবি করা হচ্ছে, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সঙ্গে যোগ রয়েছে এমন বেশ কিছু সন্দেহজনক নথি ও ডিজিটাল এভিডেন্স পাওয়া গিয়েছে। ওই সংস্থার বর্তমান ডিরেক্টর কারা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু।
শুভেন্দুর বক্তব্য, তাঁকে শুধু খবরের কাগজ হাতে দেখা যাচ্ছে ছবিতে। সেই টুইটের পর আবার টুইট অভিষেকের। এবার একেবারে নারদার ভিডিয়ো পোস্ট করে দিলেন তিনি, যেখানে শুভেন্দুকে দেখা যাচ্ছে। সরাসরি ইডি ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন, নারদায় এফআইআর-এ নাম থাকা প্রত্যেক অভিযুক্তর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
থেমে থাকার পাত্র নন শুভেন্দুও। তিনিও আবার বোমা ফাটালেন টুইটে। প্রশ্ন তুললেন, রুজিরা নারুলা কে? মানেকা গম্ভীরই বা কে? একইসঙ্গে শুভেন্দু লিখলেন, ‘আপনি এককালে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টর ছিলেন। বলতে পারবেন, এখন কারা ডিরেক্টর রয়েছেন?’
আবার টুইট অভিষেকের। এবার তৃণমূল সাংসদ লিখলেন, ‘একজন ব্যক্তি যখন ইডি-সিবিআই-এর হাত থেকে বাঁচতে নিজের বাবা-ভাইকে ব্যবহার করেন, তিনি পরিবার নিয়ে অন্যদের জ্ঞান দেওয়ার জায়গায় থাকেন না। তাঁরা এখন কোন দলের সঙ্গে রয়েছেন?’
পাল্টা লিখলেন শুভেন্দুও, ‘মনে হয় আমার কড়া প্রশ্নের মুখে কেউ শব্দ হারিয়ে ফেলেছেন এবং পালানোর চেষ্টা করছেন। আমি আপনার সব অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর দেব, যদি আপনি আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সাহস দেখান।’ একইসঙ্গে শুভেন্দুর আরও প্রশ্ন, অর্জুন সিং, মুকুল রায়, কৃষ্ণ কল্যাণী, বিশ্বজিৎ দাস, তন্ময় ঘোষ, সুমন কাঞ্জিলালরা এখন কোন দলে রয়েছেন?
এরপর অভিষেকও লিখলেন, ‘আমি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে তৈরি। শুধু আপনি জায়গা ও সময় বেছে নিন। অডিয়ো বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে আমরা বসব, আপনার দুটি টেলিফোনে কথোপকথন নিয়ে।’
সেই দেখে শুভেন্দুরও পাল্টা টুইট। প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি হাইকোর্টে কেন যাচ্ছেন না? বুমেরাং হওয়ার ভয়ে?’ বিরোধী দলনেতা আরও লেখেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি, আগে আপনি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেব নিজের স্বচ্ছ্বতা প্রমাণ করুন।’
আরও পড়ুন – পুরনিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই প্রথম রাজ্যের কোনও মন্ত্রীকে তলবের চিঠি পাঠাল
একের পর এক টুইট, পাল্টা টুইট, আবার পাল্টা টুইট… চলতেই থাকছে বঙ্গ রাজনীতির দুই মহারথীর। বাংলার রাজনীতিতে যুযুধান দু’পক্ষের এমন গতিতে টুইট-যুদ্ধ সচরাচর দেখা যায় না।