শেষ হল টালা জলাধারের সংস্কার,‘১০০ বছরে আর প্রয়োজন পড়বে না’, দীর্ঘ চার বছর ধরে চলা ভারতের অন্যতম প্রাচীন ৯০ লক্ষ গ্যালন সম্পন্ন টালা জলাধার প্রকল্পের সংস্কারের কাজ অবশেষে শেষ হল। ১০০ বছর আগে এই জলাধারে সংস্কারের কাজ শেষবারের মতো হয়েছিল। যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে কাজ এবং সংস্কার করা হয়েছে তাতে আগামী ১০০ বছর আর সংস্কারের প্রয়োজন হবে না বলেই জানালেন জল সরবরাহ বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা। কলকাতা পুরসভার এই টালা জলধার প্রকল্পে মোট চারটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে। চার বছর আগে এই প্রকোষ্ঠগুলির সংস্কারের কাজ শুরু হয়। মধ্যবর্তী সময় করোনার প্রকোপ থাকায় সেই কাজ শেষ হতে অনেকটাই সময় নিয়ে নিল। এই গোটা প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করল ব্রিজ অ্যান্ড রুফ কোম্পানি। সংস্কারের পর জানানো হয়েছে, ২১২৩ সালে আবার সংস্কার করা হবে। আগামী একশো বছর এই প্রাচীনতম জলাধারের কোন সংস্কার করতে হবে না।টালা জলাধারের ২০ ফুট উচ্চতার মোট চারটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে। মাটি থেকে এই জলাধারের উচ্চতা ১১০ ফুট। যেগুলির এক একটির জলধারণ ক্ষমতা প্রায় সাড়ে ২২.৫ লক্ষ গ্যালন। আর পুরো জলাধারের জলধারণ ক্ষমতা প্রায় ৯০ লক্ষ গ্যালন। ব্রিটিশরা টালা জলাধার তৈরির সময়ে তার মধ্যে প্রায় ৫০ মিটার বাই ৫০ মিটার আয়তনের চারটি প্রকোষ্ঠ করেছিল। যাতে প্রয়োজনে মেরামতির জন্য একটি বন্ধ রাখলেও বাকি তিনটি চালু রাখা যায়।
প্রায় চার লক্ষ বোল্টের মাধ্যমে জলাধারের একটি অংশের সঙ্গে অপরটি জোড়া। ২৯৫টি লোহার স্তম্ভের উপরে ৮৫০০ টন লোহার ওই কাঠামোর প্রয়োজনীয় মেরামতির পাশাপাশি তাকে মজবুত করার কাজও চলছে। জল সরবরাহের প্রকোষ্ঠগুলির ভিতরে মরচে নিরোধক ফুড গ্রেড রঙের প্রলেপের পাশাপাশি পরের দফায় জলাধারের বাইরের দেওয়ালে অতি বেগুনি রশ্মি নিরোধক রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে।
এই জলাধার সংস্কারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, স্যান্ডউইচ কংক্রিট ব্যাবস্থা। প্রকোষ্ঠ গুলির যে নীচের প্লেট রয়েছে, যাতে অতীতের মত মাঝে মধ্যেই ফুটো না হয়ে যায় বা জল অপচয় না হয়, সে কারণে এই নয়া ব্যবস্থা। প্রকোষ্ঠের ছাদ গুলি আগের কংক্রিট সম্পূর্ণ বদলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বসেছে লোহার ছাদ করা হয়েছে। সেখানে এমন রং করা হয়েছে, যাতে বৃষ্টির জল পড়লেও নষ্ট না হয়ে যায়।
আরও পড়ুন – এবার সব কর্মীর ঠিকুজি খতিয়ে দেখবে বিদ্যুৎ দফতর ,কড়া নির্দেশ বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ…
আধিকারিকদের কথায়, জলাধার থেকে স্তম্ভ সব কিছুতেই আধুনিক সংস্কারের কাজ হচ্ছে। মরচে যাতে না ধরে, তার জন্য বিশেষ পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। কারিগরি প্রযুক্তির যে কাজ হয়েছে, তা অতীতে কোনও জলপ্রকল্পে হয়নি। বর্তমানে পলতায় কলকাতা পুরসভার জল উত্তোলন কেন্দ্র থেকে গঙ্গার জল পরিস্রুত হয়ে বি টি রোডের নিচ থেকে ছয়টি পাইপলাইনে এই জলাধারে আসে। যা উত্তর কলকাতার সর্বত্র, দক্ষিণের আংশিক, বিধাননগর এবং দক্ষিণ দমদম এলাকায় সরবরাহ হয়।