স্পেন এবং দুবাই সফর করে ফিরে পায়ের চোটের কারণে এখনও গৃহবন্দি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। প্রায় একমাস হতে চলল এসএসকেএমের ডাক্তার দের নির্দেশে নিজের কালীঘাটের বাসভবন থেকেই সমস্ত রাজনৈতিক কাজ সামলাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এবার গোটা মন্ত্রীসভাকে নিজের বাসভবনে ডেকে পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামীকাল বৃহস্পতিবার নিজের বাসভবনে বৈঠক করবেন তিনি। আর এই গোটা বিষয়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে তরজা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বেকসুর খালাস ৪ অভিযুক্ত, প্রতিবাদীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কামদুনিতে আইএসএফ
রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যে নিজের বাসভবনে মন্ত্রীসভার বৈঠক করতে চলেছে। এর আগে তিনি বিধানসভা ভবনে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন। নিজের কালীঘাটের বাসভবনে মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠক ঘিরে রাজ্যের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব অর্ধেন্দু সেন জানান, ”মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ক্যাবিনেট বৈঠক বাংলায় কবে হয়েছে মনে করতে পারছি না। তবে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলে অনেক বার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। সেই সব ঘটনা মনে আছে। কিন্তু সিদ্ধার্থবাবুর বাড়িতে কখনও ক্যাবিনেট মিটিং হয়েছে বলে শুনিনি।”
এই বিষয়ে রাজ্যের প্রাক্তন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব প্রসাদরঞ্জন রায়ের বক্তব্য, ”আমি মনে করতে পারছি না, কবে এই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে। তবে আমি মনে করতে পারছি না মানে তা হয়নি, তা-ও নয়। ১৯৮০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত, যত দিন আমি কর্মরত ছিলাম, তত দিন দেখিনি। তবে অন্য রাজ্যে এমন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে হয় বলে শুনেছি।”
কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন প্রধান প্রশান্ত রায় বলেন, ”আমার যতদূর স্মরণে রয়েছে, তাতে মনে পড়ছে না, বাংলার কোনও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বাড়িতে মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন। জ্যোতিবাবুর পেটের সমস্যা ছিল। যা পরে তাঁর মূল অসুখ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই কারণে অনেক ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সময়ের রদবদল হয়েছে। কিন্তু বাড়িতে কখনও মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকতে শুনিনি। তার আগেও এ রকম হয়েছে বলে জানা নেই। সংবিধানে এমনকিছু বলা নেই যে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বাড়িতে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকতে পারবেন না বা পারেন না।”
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষ্মতায় আসার পর ২০১৩ সালে বিধানসভা মহাকরণ থেকেও তুলে গঙ্গার পাড়ে নবান্নে স্থানান্তরিত করা হয়। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৯ সালে যখন তত্কালীন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের লাউডন স্ট্রিটের বাংলোয় সিবিআই হানার প্রতিবাদে কলকাতা মেট্র চ্যানেলে ধর্ণায় বসেছিলেন মমতা, সেই সময় একদিন মন্ত্রীসভার বৈঠক করেছিলেন মেট্রো চ্যানেল লাগোয়া কলকাতা পুলিশের আউট পোস্টে। তবে তাঁর কালীঘাটের বাসভবনে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক এই প্রথম।