দার্জিলিং পুরসভায় চেয়ারম্যান নির্বাচনের দিন ঘোষণা আদালতের। আগামী সপ্তাহেই দার্জিলিং পুরসভায় অচলাবস্থা কাটিয়ে দপ্তরীয়ভাবে নতুন বোর্ডের দায়িত্ব নেবে জোটসঙ্গী তৃনমূলকে নিয়ে অনিতের দল। দার্জিলিং পুরসভায় চেয়ারম্যান নির্বাচনের দিন ঘোষণা আদালতের। আদালতে নির্দেশে আগামী ১৬ই জানুয়ারি দার্জিলিং পুরসভায় হবে প্রিসাইডিং সভা। এদিন চেয়ারম্যান নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সত্ত্বায় আসবে নয়া বোর্ড। মঙ্গলবার আদালতের তরফে নির্দেশিকা জারি করে সভা আহ্বানের নির্দেশ জেলা প্রশাসনকে।
আদালতের নির্দেশে দার্জিলিং পুরসভায় সভাকক্ষে সংখ্যা গরিষ্ঠ দল হিসেবে অনাস্থা পেশ করে গোর্খা প্রজাতান্ত্রীক মোর্চা। দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারম্যান রিতেশ পোর্টেলের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে জোট সঙ্গী তৃণমূলের সমর্থনে সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে চেয়ার থেকে অপসারিত করা হয়।
আইন অনুযায়ি খারিজ হয়ে যায় হামরো দলের উপপ্রধান ইয়াচিং শেরপার পদও। অনাস্থা এনে বোর্ড ভেঙে দেয় জোটসঙ্গী তৃণমূলের সমর্থনে পুরসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে অনিত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রীক মোর্চা। পাহাড়ের কনকনে হাড়হিম শীতে সত্ত্বার পালা বদলে রাজনৈতিক পারদ ক্রমশ চড়ছে।গত ডিসেম্বরের মাসে শেষ লগ্নে ২৮তারিখ ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রীক মোর্চার তরফে তৃনমূলেকে সঙ্গে নিয়ে মোট ১৬জন কাউন্সিলরদের নিয়ে অনাস্থা পেশ করে। সেদিনই দার্জিলিংয়ের সত্ত্বা দখলে নিয়ে পাহাড়ে বিজয় উল্লাসের মধ্য দিয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে দুই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দ্বীপেন ঠাকুরির নাম ঘোষণা করা হয়।
এদিন আদালতের চূড়ান্ত সভার ডাকার পরই দ্বীপেন ঠাকুরি বলেন- জানাতে পেরেছি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৬ কাউন্সিলর রয়েছে। তৃনমূলের দুই কাউন্সিলর প্রথম দিন থেকেও সমর্থন দিয়েছে।নতুন বোর্ড এর কার্য ভার তুলে নিয়েই দার্জিলিংয়ের উন্নয়নে প্রচুর কাজ করতে হবে। এদিকে আদালতের তরফে আগামী সোমবার সভা আহ্বান বিষয়ে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে দার্জিলিং সদর মহকুমা শাসক দপ্তরে। দার্জিলিং সদর মহকুমা শাসক দুলেন রায় জানান দার্জিলিং পুরসভার মোট ৩১টি আসনের মধ্যে ১৬জন কাউন্সিলর নিয়ে বিজিপিএমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান নাম প্রস্তাব করা হবে। অপরদিক থেকে হামরো পার্টির তরফে চেয়ারম্যান প্রস্তাব করা হলে সভা কক্ষে ভোট বাক্স রেখে আভ্যন্তরীণ ভোটাভুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে। তবে উল্টো দিক থেকে প্রস্তাব না এলে অপ্রতিদ্বন্দ্বীতার ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনে চেয়ারম্যান নির্বাচন সম্পন্ন হবে। সেক্ষেত্রে সভাকক্ষে হাত তুলে সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরদের সমর্থন গণ্য হবে। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তিনিও ভাইস চেয়ারম্যানের নির্বাচন করবেন। তিনি জানান ১৬ই জানুয়ারি সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দার্জিলিং পুরসভা ও ক্যাপিটাল হল জুড়ে চত্ত্বর ১৪৪ধারা জারি থাকবে।
নির্বাচিত কাউন্সিলর, পুরকর্মীরা ছাড়া অন্যান্যরা প্রবেশ করতে পারবেন না। এদিকে এদিনের সভাকক্ষে দার্জিলিং সদর মহকুমা শাসক ও প্রিসাইন্ডিঙ অফিসার, পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার থাকবেন। উল্লেখ্য দার্জিলিং পুর নির্বাচনে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে রাজনীতিতে নবাগত অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি শৈলসহরে সারা ফেলে দেয়। তবে কার্যকারীতার অভাবে ক্ষোভ তৈরি হয় দলের অন্দরে। এরপরই জিটিএ নির্বাচনে বিজিপিএম বিরাট সাফল্যের পরই অসম্পূর্ণ বৃত্ত সম্পন্ন করতে নামে অনিত।
গত ২৮শে আগস্ট দার্জিলিং পুরসভায় হামরো পার্টির ছয় কাউন্সিলর বিজিপিএমে যোগদানের পরই ঘুরে যায় দার্জিলিং পুরসভার সত্ত্বার সমীকরন। দার্জিলিং পুরসভার ৩১টি আসনের মধ্যে তৃনমূলের ২ কাউন্সিলরদের বিজিপিএমকে সমর্থন করায় এবং পরবর্তীতে হামরো পার্টির ছেড়ে আসা ছয় কাউন্সিলরদের যোগদানে ১৬আসন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
আরও পড়ুন – বিজেপির গঙ্গা আরতিকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বাবুঘাট
এরপর ১৩ই ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারন করে বিজেপিএমমেরও তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের চিঠি দেওয়া হয়। তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ার পরও অনৈতিকভাবে চেয়ার দখলে রাখে হামরো। যার কারণে পুনরায় সংখ্যাগরিষ্ঠ অনিতের দলের তরফে উপপ্রধান ইয়াচিং শেরপাকে চিঠি দেওয়া হয়। ২৮শে ডিসেম্বরই সেই চূড়ান্ত চিঠির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। এর মাঝে আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করা হলে আদালতের তরফে চেয়ারম্যান অপসারণের দাবি তুলে বোর্ড ভেঙে নয়া বোর্ড গঠনে আইনি ছাড়পত্র দেওয়া হয় অনিতের দলকে।
