প্রকৃতি বাঁচাতে রিক্সাচালক সস্ত্রীক হেঁটে পৌঁছলেন দিল্লি,রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা ,কোভিড অতিমারির সময় দেখেছিলেন, দুর্গাপুর জুড়ে অক্সিজেনের সুতীব্র সংকট এবং ততোধিক অক্সিজেন জোগানে বেলাগাম কালোবাজারি। সে ঘটনা আমূল নাড়িয়ে দেয় সামান্য ই-রিক্সা চালক পৃথ্বীরাজ চক্রবর্তীকে, লোকালয়ে যিনি ‘শুভ’ নামে সুপরিচিত। রাতারাতি সংকল্প নেন, অক্সিজেনের সংকট মেটাতে ও প্রকৃতি বাঁচাও আন্দোলনে সরব হয়ে পায়ে হেঁটে দুর্গাপুর থেকে দিল্লি যাবেন তিনি, সরাসরি দেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাত্ করে জানাবেন আর্জি।
গত ২৫ জানুয়ারি দুর্গাপুরের জব্বরপল্লী ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে, পায়ে হেঁটেই রাজধানী নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেন শুভ। সঙ্গী হন তাঁর স্ত্রী রমাও। এরপর রাস্তাতেই নয়-নয় করে কেটেছে ৫২ দিন। পশ্চিম বাংলার সীমানা পেরিয়ে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যিখানে ‘পথভুলে’ মনোহরলাল খট্টরের হরিয়ানা রাজ্য ঘুরে অবশেষে গত ১৮ মার্চ দিল্লি স্পর্শ করেন ‘চক্রবর্তী দম্পতি’।
তাঁদের পায়ে শতচ্ছিন্ন স্নিকার, গায়ে সাঁটা ‘সেভ মাদার আর্থ’ টি শার্ট, সর্বাঙ্গে বাঁধভাঙা ক্লান্তি, হাড়ভাঙা খাটুনির যন্ত্রনা। তবু একমুহূর্তের জন্য সাহস হারাননি এই অকুতোভয় দম্পতি। রাজধানী দিল্লিতে আরও ২২ দিন দু:সহ অপেক্ষা ও নানা ধর্মশালায় ঘোরাঘুরির পর, সোমবার বিকেলে নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর মুখোমুখি হন চল্লিশোর্ধ্ব ‘পথযাত্রী’ শুভ ও রমা। রাষ্ট্রপতি সাক্ষাতের সূত্রধর হন পশ্চিম বর্ধমানের বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আহলুওয়ালিয়া।
দিল্লির বঙ্গভবনে সংবাদ মাধ্যমের একাংশের মুখোমুখি হয়ে ই-রিক্সাচালক পৃথ্বীরাজ ‘শুভ’ চক্রবর্তী বলেন, ‘গতকাল আমার জন্মদিন ছিল। সেদিনই রাষ্ট্রপতি আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও বহুমূল্য উপহার পেলাম আমি।’
কিন্তু কেন এই ‘মিশন ইমপসিবল’ বেছে নেওয়া? বাড়িতে যথেষ্টই অভাব অনটন। ই-রিক্সা আর ‘ফ্রী শপ’ চালিয়ে কতটাই বা রোজগার? তবু দুটি মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলেন ‘নির্মল পৃথিবী’ গড়ে তোলার। এই বীজমন্ত্রে দীক্ষিত করেছেন তারা ক্লাস নাইনে পড়া একমাত্র পুত্রকেও। তবু অসাধ্য সাধনের স্বপ্নে, বুকে সাহস টেনে তাঁরা নেমেছেন রাস্তায়। যে তাঁদের গল্প শুনছে, ‘পাগল’ বলে ডাকছে তাঁদের। সে শুনে হাসি থামেনা শুভ-রমার। ‘পাগলই তো আমরা। না হলে কেউ ১৫০০ কিমি পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখে?’ জানিয়েছেন তাঁরা। এও জানান, দীর্ঘ এই সফরে অসংখ্য মানুষ এগিয়ে এসেছেন সাহায্যের জন্য। রাত্রিযাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন নিজের ঘরে ঠাঁই দিয়ে, মুখে তুলে দিয়েছেন খাবার।
আরও পড়ুন – গাড়ির ভিতরে আস্ত মৌচাক! বড়লোক হওয়ার আশায় হাজার-হাজার মৌমাছির সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছেন…
তাঁদের সেই অবিশ্বাস্য সফরের গল্প শুনে বিস্ময়ে হতবাক খোদ দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তাঁদের আত্মবিশ্বাস, নির্ভীকতার উচ্চকিত প্রশংসা করেন সাংসদ আহলুওয়ালিয়াও। উভয়েই জানিয়েছেন অকুণ্ঠ অভিবাদন, শুভেচ্ছা। শ্রদ্ধা জানিয়েই রাধা-গোবিন্দের মূর্তি তাঁরা তুলে দেন রাষ্ট্রপতির হাতেই। কী বললেন রাষ্ট্রপতি? রমা চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা ফ্রী বাজার চালাই শুনে খুব খুশি হয়েছেন শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রপতি। তিনি তাঁর নিজের সংগ্রহে থাকা কাপড় চোপড় দুস্থদের দান করার জন্য আমাদের বাজারে পাঠাবেন বলেছেন। আমরা তা মাথায় করে রাখব।’ এদিন পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক আট দফা দাবি-দাওয়া সম্বলিত এক স্মারকলিপি অঞ্চলের সাংসদ আহলুওয়ালিয়ার উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি হাতে তুলে দেন দুজনে। মঙ্গলবার রাতেই দিল্লি ছেড়ে এবার ঘরে ফেরার পরিকল্পনা ‘চক্রবর্তী দম্পতি’র।