তোরসা ( Torsa ) নদীর ভাঙ্গনে কোচবিহার ২ নম্বর ব্লকের মধুপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অন্তর্গত কালপানি গ্রামের গোটা বাজার সহ ৩০টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে । শুধু বাড়ি নয় এছাড়া প্রায় ৫০ বিঘা চাষের জমি সহ বেশ কয়েকটি পুকুর নদী ভাঙ্গনের ফলে নদীগর্ভে গিয়েছে। দ্রুত সেখানে বাঁধের ব্যবস্থা না করা হলে গোটা গ্রাম আগামী দিনে নদীগর্ভে চলে যাবে বলেই আতঙ্কে ভুগছেন গ্রামের মানুষ ।
ইতিমধ্যে যে সমস্ত মানুষের বাড়ি নদীগর্ভে ( Torsa ) চলে গিয়েছে তারা স্থানীয় রেল ওভারব্রিজের যে বাঁধ রয়েছে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন । তবে এ বিষয় নিয়ে রীতিমতো এলাকার মানুষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। পাশাপাশি কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক সুকুমার রায় নিয়ে রাজ্যের শাসক দল কে আক্রমণ করেছেন। পাল্টা এদিন এই এলাকা পরিদর্শন করে কোচবিহার জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল জলিল আহমেদ দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন । তবে কবে সেই আশ্বাস পূরণ হবে সেটাই প্রশ্ন ।
জানা যায়, কোচবিহার ২ নম্বর ব্লকের মধুপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অন্তর্গত কালপানি গ্রাম । তোরসা ( Torsa ) নদী সংলগ্ন এই গ্রামের মানুষ কোচবিহারে আসার জন্য তোরসা নদী উপর দিয়ে পারাপার করে আসেন । বর্ষার সময় হাস খাওয়া ফেরিঘাট রয়েছে সেখান থেকে অথবা একটি রেল ব্রিজ রয়েছে সেই রেল ব্রিজের উপর দিয়ে তারা যাতাযাত করেন । এবং অন্যান্য সময়ে তোরসা নদীর জল শুকিয়ে যাবার ফলে তারা এটাই পারাপার করতে পারেন ।
শুধু কালপানি গ্রামের মানুষি নয় নিশিগঞ্জ মাথাভাঙ্গা এ সমস্ত এলাকার মানুষ দ্রুত কোচবিহারে আসার জন্য কালপানি গ্রামের এই তোরসা নদীর উপর দিয়ে মধুপুর হয়ে কোচবিহারে আসেন । যার ফলে তাদের অনেকটাই সময় কম লাগে । তা না হলে কোচবিহারে আসতে গেলে তাদের প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে পুন্ডিবাড়ি হয়ে আসতে হয় । এই অবস্থায় দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মানুষের একটি রাস্তাসহ সেখানে সেতুর দাবি রয়েছে । বিষয়টি নিয়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন ।
যাতে সেতু নির্মাণ ও রাস্তার কাজ হলে তোরসা নদীর ভাঙ্গন সেটাও আটকে যাবে । তবে প্রশাসনিকভাবে কোন রকম উদ্যোগ নেওয়া হয়নি । ইতিমধ্যেই গত কয়েকদিনে লাগাতার বৃষ্টির ফলে তোরসা নদীর জল বেড়েছে । তোরসা নদীর জল বার আর উপরে যখন নদীর জল কমতে শুরু করে তখনই শুরু হয় নদী ভাঙ্গন । আর এই নদী ভাঙ্গনের ফলে তোরসা নদী ধীরে ধীরে কালপানি গ্রামের দিকে ঢুকে পড়েছে । যার ফলে ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ বিঘা চাষের জমি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে ।
শুধু চাষের জমি নয় কালপানি এলাকায় একটি বাজার ছিল নয়াবাজার গোটা বাজারটি নদীগর্ভে যাওয়ার পাশাপাশি প্রায় তিনটার মতো বাড়ি নদীগর্ভে গিয়েছে । কিছু বাড়ি এখনো সেখানে থাকলেও তারা নদী ভাঙ্গনের আতঙ্কে নিজেরাই নিজেদের বাড়ি ভেঙে নিয়ে সেখান থেকে সরে যাচ্ছে ।
বর্তমান তারা রেলের যে ওভার বিরিজ বাধা রয়েছে সেই বাঁধের উপর আশ্রয় । স্থানীয় মানুষরা জানান নদী ভাঙ্গনের ফলে তাদের যে ভিটেমাটি ছিল সেগুলো নদীগর্ভে চলে গিয়েছে । দ্রুত বাঁধ নির্মাণ না করা হলে আগামী দিনে গোটা গ্রাম নদীগর্ভে চলে যাবে ।
তাই প্রশাসনের কাছে তাদের দাবি যত দ্রুত তাদের সমস্যার সমাধান করা হয় । এছাড়াও গ্রামবাসীদের আরো অভিযোগ এলাকায় এখনও রাস্তা তৈরি হয়নি । গত কয়েকদিন ধরে নদী ভাঙ্গনের ফলে আতংকে দিন কাটানো এই মানুষগুলোর পাশে কোন রকম প্রশাসনিক আধিকারী এসে দাঁড়ায়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা ।
যদিও এ বিষয় নিয়ে কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক সুকুমার রায় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সেখানে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান রয়েছে তবে তারা কোনো কাজই করেনি । এই সরকার শুধুমাত্র মানুষ কে ব্যবহার করছে ।
তবে বিজেপির এই অভিযোগকে পাল্টা জবাব দিয়ে কোচবিহার জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল জলিল আহমেদ শুক্রবারেই এলাকা পরিদর্শন করে বলেন প্রাথমিকভাবে যাতে বর্তমান কোন রকম ভাঙ্গন আটকানো যায় কিনা সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে । এছাড়া আগামী দিনে পুরোপুরিভাবে এই সমস্যার সমাধান করার জন্য শেষ দপ্তরের সঙ্গে কথা বলা হবে ।