তিলোত্তমার ‘ঐতিহ্য’ ,কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পর ট্রাম বাঁচাতে পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের। শহর কলকাতার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে ট্রাম। গোটা বিশ্বের কাছে কলকাতার পরিচিতির অত্যন্ত প্রতীক। কিন্তু বিবর্তনের সঙ্গে নিত্যযাত্রীদের মধ্যে কমেছে ট্রাম ব্যবহারে প্রবণতা। সেই কারণে বিলুপ্ত হওয়ার পথে কলকাতার ট্রাম পরিষেবা। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম সংরক্ষণ ও পরিষেবা পুনরুদ্ধার নিয়ে দিশা দেখাতে ১২ সদস্যের কমিটি গড়েছে রাজ্য সরকার। ট্রাম সংক্রান্ত যাবতীয় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তাঁর কলকাতা হাইকোর্টের কাছে রিপোর্ট পেশ করবে বলেই জানা গিয়েছে।
রাজ্য পরিবহণ দফতরের তরফে বেশ কয়েকটি রুটের ট্রাম পরিষেবার উপর রাশ টানা হয়েছে। এমনকী কয়েকটি রুটে ট্রাম পরিষেবা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। গোটা কলকাতা শহর জুড়ে ১১৬ কিলোমিটার ট্রাম লাইন রয়েছে। কিন্তু মাত্র ৩৩ কিলোমিটার লাইনে ট্রাম চলাচল করে। ২০১৭ সালে শহরে ২৫টি ট্রাম রুট চালু ছিল। সেই সংখ্যা কমে এখন তিন হয়েছে। বর্তমানে শুধু শ্যামবাজার-ধর্মতলা (৫ নম্বর), বালিগঞ্জ-ধর্মতলা (২৫ নম্বর) ও বালিগঞ্জ-টালিগঞ্জ (২৪/২৯) নম্বর রুটে ট্রাম চলাচল করে। শহরের বড় ছয়টি ট্রাম ডিপোর মধ্যে মাত্র ২টি সম্পূর্ণভাবে চালু রয়েছে। ট্রামপ্রেমীদের একাংশের অভিযোগ, বাকি ট্রাম ডিপোগুলি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
জুন মাসের নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে জানায়, ‘পরবর্তী নির্দেশ না আসা অবধি পশ্চিমবঙ্গ পরিবহন কর্পোরেশন বা কলকাতা ট্রামওয়েজ কর্পোরেশন যে কোনও সম্পত্তি পাবলিক অকশনের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবে না।’ তবে সম্পত্তি বিক্রির কথা অস্বীকার করেছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা। তাঁরা জানিয়েছে, ট্রামের জমি লিজে দেওয়া হয়েছে।
নবান্ন সূত্রে খবর, এই কমিটিতে ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন, কলকাতা পুরসভা ও রাজ্য পরিবহণ দফতরের কর্তারা রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। চলতি বছর জুন মাসে, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ ‘ঐতিহ্যবাহী পরিবহণ’ রক্ষার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। ট্রামপ্রেমী এক আইনজীবীর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই মামলায় ট্রাম সংরক্ষণ নিয়ে সরকারের নীতির কথা জানতে চেয়ে আবেদন করেন জনৈক আইনজীবী।
আরও পড়ুন – ‘অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি দেওয়া হোক’, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের
এই মামলার নির্দেশে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘রাজ্যের বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী নির্দশন সরকার সংরক্ষণ করছে। হয় রাজ্য সরকার গোটা খরচ নিজেরা বহন করছে, অথবা কেন্দ্রীয় সরকার আংশিকভাবে আর্থিক সাহায্য করছে। অতএব, আমরা স্পষ্টভাবে মনে করি যে কলকাতা শহরে ট্রাম পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা উচিত নয়।’ পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ১২ সদস্যের কমিটি তৈরির কথা আদালতকে রিপোর্ট আকারে জমা করা হয়েছে।