কী বলছে বিজেপির ঘরোয়া রিপোর্ট? কত শতাংশ আসনে প্রার্থী দিতে পারবে বিজেপি? পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায় সদ্য জনসভা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই সভায় তৃণমূল সরকারকে প্রত্যাশিতভাবে তীব্র আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু। সেই সঙ্গে দলীয় কর্মীদের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন তিনি। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন পেশ করার সময় তিনি পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন স্থানীয় নেতা কর্মীদের। জেলার প্রত্যেকটি আসনে যাতে বিজেপি প্রার্থী দিতে পারে সেই নিশ্চয়তাও দিয়েছেন তিনি। কিন্তু মুখে বলা আর সেটা কাজে করে দেখানো দুটো নিশ্চয়ই এক নয়। আর সেটা প্রতি মুহূর্তে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য নেতৃত্বকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে প্রত্যেকটি বুথ থেকে তিনজনের নাম আসা চাই প্রার্থী হওয়ার জন্য। যে নির্দেশে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে বিজেপির মন্ডল স্তরের নেতাদের। পশ্চিমবঙ্গের বহু বুথ আছে যেখানে বিজেপির একজন সদস্যও নেই। তাই প্রতিটি বুথ থেকে কীভাবে তিনটি করে নাম পাঠানো যায় তা নিয়ে মন্ডল স্তরের নেতাদের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে। আর শুধু প্রার্থী দিলেই তো চলবে না। নির্বাচনের সময় প্রত্যেকটি বুথে এজেন্ট দিতে হবে। যেমন ধরা যাক নদিয়া জেলার কথা। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই জেলায় মোটের উপর বিজেপির ফল বেশ ভাল হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাংগঠনিক ছবিটা কিন্তু অন্য কথাই বলছে।
বিজেপি সূত্রে খবর, কত সংখ্যক আসনে তারা প্রার্থী দিতে পারবে সেটা নিয়ে দলীয় স্তরে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে চল্লিশ শতাংশের বেশি আসনে বিজেপি প্রার্থীই দিতে পারবে না। বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে বিজেপি একজন প্রার্থীকেও দাঁড় করাতে পারবে না বলে সমীক্ষায় জানা গিয়েছে। নির্বাচনের আগেই যদি তারা এভাবে হেরে বসে তাহলে পঞ্চায়েতে সাফল্য পাওয়ার যে দাবি রাজ্য নেতৃত্ব করছেন তা কতটা বাস্তবায়িত হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। তবু বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব ভাল ফল করার কথাই বারবার বলে চলেছেন। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গেলে রাজ্য নেতৃত্ব কীভাবে নির্বাচন পর্ব সামলাবেন এখন সেটাই দেখার।
আরও পড়ুন – সংক্রান্তিতে কেষ্টর জেলায় অমিত শাহ, পয়লা বৈশাখে দক্ষিণেশ্বর, প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি,
পরিসংখ্যান বলছে নদিয়া উত্তর সংগঠনিক জেলায় প্রায় ২৪০০টি বুথ আছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে তার মধ্যে ৬৫০টি বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও বিজেপির এই অবস্থা হয়েছিল। ২০১৮ সালে রাজ্যের বহু জায়গায় পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে এলেও পরবর্তী সময়ে সেগুলি তাদের হাতছাড়া হয়েছে। অর্থাৎ যত দিন গিয়েছে সাংগঠনিকভাবে ততই দুর্বল হয়েছে বঙ্গ বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জোরের সঙ্গে জানাচ্ছেন তিনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় প্রত্যেকটি আসনে প্রার্থী দেওয়া নিশ্চিত করবেন। কিন্তু সেই ধারা রাজ্য জুড়ে যে বজায় রাখা কার্যত অসম্ভব তা স্পষ্ট।