কোন শর্ত পূরণ করে তৃণমূল জাতীয় দলের মর্যাদা পেয়েছিল? কেনই বা তা হারাতে হল? ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি কংগ্রেস ছেড়ে নতুন দল গড়ার পরে প্রথম নির্বাচনেই চমক দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। সে বছরের লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে ৭টি আসনে জিতেছিল তারা। জাতীয় দলের স্বীকৃতি পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও ১৮ বছর। ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় দল হিসেবে জোড়াফুলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী জাতীয় দল হতে গেলে তিনটি শর্তের অন্তত একটি পূরণ করতে হয়। এক, লোকসভায় অন্তত ৪টি রাজ্য থেকে ৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে। দুই, লোকসভায় ৩টি রাজ্য থেকে অন্তত ১১টি আসন (মোট আসনের ২ শতাংশ) জিততে হবে এবং আগের জেতা আসনের অন্তত ৪টি পুনরায় জিততে হবে। তিন, অন্তত ৪টি রাজ্যে ‘রাজ্য দলের’ তকমা পেতে হবে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বাংলার পাশাপাশি ত্রিপুরা, অরুণাচল ও মণিপুরে ৬ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। ফলে প্রথম শর্ত পূরণ করে তারা।
কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সে শর্ত তারা পূরণ করতে পারেনি। সে বছর অরুণাচলের বিধানসভা ভোটেও কোনও আসনে জিততে তারা ব্যর্থ হয়। এর পর ২০২২ সালে মণিপুর এবং চলতি বছরে ত্রিপুরাতেও আঞ্চলিক দল হওয়ার শর্তপূরণের সুযোগ হারায় তারা। ত্রিপুরায় মোট ভোটের হিসাবে নোটার চেয়েও পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। সোমবার নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি জানাচ্ছে, ‘নির্বাচনী ফলের ভিত্তিতে প্রতীক বণ্টন সংক্রান্ত নিয়মাবলী’র ভিত্তিতে তৃণমূলের জাতীয় দলের মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
ত্রিপুরার ভোটের পরেই নির্বাচন কমিশনের কাছে তৃণমূলের জাতীয় দলের স্বীকৃতি বাতিলের দাবি করেছিলেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার তাঁর টুইট, ‘‘ত্রিপুরার ভোটে তৃণমূল জাতীয় দলের মর্যাদা পাওয়ার মাপকাঠি পূরণ না করায়, আমি বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম।’’ প্রসঙ্গত, চলতি বছর মেঘালয়ের বিধানসভা ভোটে প্রায় ১৩.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ৫টি বিধানসভায় জিতেছে তৃণমূল। ফলে বাংলার পাশাপাশি উত্তর পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে তারা এখন ‘রাজ্য দল’ হিসাবে জোড়াফুল প্রতীক ব্যবহারের অধিকারী।
তৃণমূল একটি সূত্রের অভিযোগ, বিধি অনুযায়ী ২০২৪ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ পর পর দু’টি লোকসভা ভোট পর্যন্ত তাদের তকমা অক্ষুণ্ণ থাকা উচিত ছিল। এর পরেও শর্ত পূরণ না হলে তার পরবর্তী বিধানসভাগুলি পর্যন্ত চাইলে অপেক্ষা করতে পারত কমিশন। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের পরের বছরের বিধানসভাগুলিতেও যদি কাম্য শর্ত পূরণ না হত, তখন স্বীকৃতি কেড়ে নেওয়া যেত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ‘অতি সক্রিয়তা’ দেখিয়েছে কমিশন। দলের সাংসদ সৌগত রায় সোমবার এ বিষয়ে আইনের দ্বারস্থ হওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
আরও পড়ুন – এটা কাঁচালঙ্কা না লবডঙ্কা! রাজ্যে অশান্তির ঘটনায় আবার সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা…
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে জাতীয় দল হওয়ার শর্ত পূরণের ওই তকমা দেওয়া হয়েছিল। কী সেই শর্ত? পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মণিপুর এবং অরুণাচল প্রদেশে রাজ্য পর্যায়ের দল হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ায় ‘পশ্চিমবঙ্গের একটি আঞ্চলিক দল’, এই সঙ্কীর্ণ পরিচিতি থেকে বেরিয়ে এসে, ‘সর্বভারতীয় দল’-এর মর্যাদা পায় তৃণমূল।